|
মনোরঞ্জন... |
|
নাকতলা মিনিতে বুম্বা |
ঠিক আটটা স্টপ নাকতলা ধরে। ‘ছোট্ট জিজ্ঞাসা’ টু ‘জাতিস্মর’। অসহায়তার অন্ধকার থেকে আমি-ই ইন্ডাস্ট্রি!
আজ ফ্ল্যাশ ব্যাকের দিন। সিনেমার নয় জীবনের। সকালে তাই মূল টার্মিনাস থেকে চড়চড় করে অতিক্রম করে যাওয়া
পুরনো সব স্টপগুলোয় সশরীরে ঘুরতে বেরিয়েছেন
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সহযাত্রী গৌতম ভট্টাচার্য-র
প্রথমেই নজরে পড়ল নায়কের টি শার্টটা। যার ওপরে লেখা আই রাইট মাই ওন স্টোরি! প্রতীকী টি শার্ট। |
১ নাকতলা |
লোকেশন: প্রসেনজিতের জার্নি শুরুর টার্মিনাস থেকে তাঁর জীবনের রিওয়াইন্ড শুরু করলাম আমরা। ঠিকানা ২০৬ এ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোড। খাস নাকতলা।
এখন বাড়িটা: বেশ খানিকটা ভেতরে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার ভেতর দোতলা বাড়ি। বাড়ির ভেতরে যে অতটা জায়গা, নীচ থেকে মোটেও বোঝা যায় না। উৎপল দত্ত থাকতেন কাছেই। এলাকাটা সেই সময় এত গায়ে গায়ে বাড়িতে ক্লিষ্ট হয়ে পড়েনি। আশ্চর্য বাইরের নেমপ্লেটে এখনও বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়-এর নাম পড়া যাচ্ছে। মনেই হয় না মাঝখান দিয়ে তেতাল্লিশ-চুয়াল্লিশ বছর চলে গিয়েছে।
তাৎপর্য: জীবনে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো এ বাড়ি থেকেই। জন্মের পর সদ্যোজাত বুম্বারও প্রথম আস্তানা। |
|
পৌঁছতে যা ঘটল: নাকতলা আজও প্রসেনজিৎ সম্পর্কে অসম্ভব পজেসিভ। ও আর কারও নয় আমাদের ছেলে! ছ্যাঃ ভুল লিখলাম, প্রসেনজিৎ নয়। বুম্বাকে নিয়ে। নায়কের গাড়ি সাবেকি বাড়ির কাছে পৌঁছতেই পাড়ার ছেলেদের একটা গ্রুপ বৃত্তাকারে ঘিরে ফেলল আমাদের। যেন বরযাত্রীর গাড়ি থেকে বর-কে নামাতে এসেছে। তখনই মনে পড়ে গেল গতবারের পুজোয় কলকাতা ছেয়ে যাওয়া সেই বিজ্ঞাপনটার কথা। ধুতি-পাঞ্জাবির প্রসেনজিৎ ঢাক বাজাচ্ছেন। নীচে লেখা, নাকতলা সর্বজনীন। প্রবীণরা আবার অন্য পরিচয়ে দেখা গেল বেশি আসক্ত বিশুর ছেলে। এখন যাঁরা এই বাড়িটায় থাকেন, সেই ভাড়াটেরা তীব্র উৎসাহী। “এসো, এসো, আমাদের সব ক’টা ঘরে তোমায় যেতে হবে। ছাড়ছি না তোমায়,” তীব্র অপত্য স্নেহ নিয়ে বললেন এক বৃদ্ধা। প্রসেনজিৎ ততক্ষণে যেন সেই বিশুর ছেলে পরিচয়েই সানন্দে ফিরে গিয়েছেন। বহু বহু বছর পর এই বাড়িতে ফেরত তিনি... |
নাকতলা
|
এই বারান্দাতে সাইকেল নিয়ে চক্কর দেওয়াটা ছিল নেশা। |
নস্ট্যালজিয়া: “এই কোনার রুমটা দেখছ তো! এখানে সৌমিত্র কাকুকে দেখেছি মাথায় রুমাল দিয়ে নাচতে। মাধবী আন্টি আসতেন। গানবাজনা হত খুব। মাধবী আন্টিকে আমি ‘মা’ বলে ডাকায় কী খুশি যে হয়েছিলেন। বলেছিলেন, শুনে মন ভরে গেল। বিরাট করে লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করতেন বাবা। টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিতে বাড়ির এই ‘অকেশন’টা সবার জানা ছিল। উত্তমজেঠুর বাড়ি খাওয়াদাওয়া হবে লক্ষ্মীপুজোর দিন। তার পরের দিন আমাদের বাড়িতে। উত্তমজেঠু-বেণু আন্টি সবাই আসতেন। তার পর রাতভর আড্ডা চলত। জীবনে আমার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো এখান থেকে। যে বারান্দাটা দেখছ, এখানে ছোট সাইকেল চালিয়ে আমি ঘুরতাম। তখনও এত বাড়ি হয়নি এই পাড়ায়। অনেক ফাঁকা ফাঁকা ছিল। কাজের দিক থেকেও বাপির কত সুবিধে ছিল। টালিগঞ্জ পাড়া একেবারে হাতের নাগালে। কিন্তু নকশাল আন্দোলন এমন হিংসাত্মক চেহারা নিল যে, আমরা বাড়ি ছেড়ে দিয়ে অনেক দূর চলে যেতে বাধ্য হলাম। |
২ দমদম |
লোকেশন: সে সময় পোস্টাল অ্যাড্রেসেরও নাকি দরকার পড়ত না। বলা হত, মল রোডের বিখ্যাত বাড়ি। নতুন নাম অবশ্য বাণী বেনিফিট হল। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে মিনিট পনেরোর বেশি লাগল না অফিসটাইমেও। মুম্বই ফ্লাইট থেকে নেমে বা রাতে স্টপ ওভারের জন্য আদর্শ বাড়ি। বলিউড তারকারা নাকি সেভাবে ব্যবহারও করতেন।
এখন বাড়িটা: এখন বাড়িটা নয় ভাই এখন প্রাসাদটা! পাঁচ কাঠা জমির ওপর আজও বিশাল কাঠামো নিয়ে দাঁড়িয়ে। যার আদি মালিক ছিলেন প্রসেনজিতের দাদু এস সি মৈত্র। নাকতলায় আচমকা বিপন্ন হয়ে পড়া জামাইকে যিনি থাকার জন্য পুরো নীচের তলাটা ছেড়ে দিয়েছিলেন। সাদা বাড়ি! নিশ্চয়ই সে যুগে লোকে বলত, মল রোডের হোয়াইট হাউস। অধুনা অবশ্য পুরনো পরিচয় গিয়েছে। বিয়েবাড়ি হিসেবে জায়গাটা ভাড়া দেওয়া হয়। আর ডিরেকশনের জন্য ল্যান্ডমার্ক ছাত্রী মৃত্যুতে বিতর্কিত দমদম ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ঠিক দু’টো বাড়ি পরে।
তাৎপর্য: কোথাও মনে হয় দমদমের বাড়িটাই কিশোর বুম্বার জীবনে সব চেয়ে ছাপ ফেলে যাওয়া কংক্রিট। এই সাদা প্রাসাদটাই নিজস্ব স্বপ্নে ধারণ করে তাকে ক্লান্তিকর বইতে বইতে আজকের মধ্যবয়সি প্রসেনজিৎ পৌঁছেছেন ‘পি সি’ নামক দুর্গম শৃঙ্গে। উচ্চাশার সাতমহলা বিস্তারের যে বৈশিষ্ট্য আঞ্চলিক ছবির সর্বাধিনায়ককে পরবর্তী কালে বিশিষ্টতা দিয়েছে, তার বীজ না জিজ্ঞেস করেই লিখছি, এই সাদা বাড়িটা। |
দমদম |
|
|
মল রোডের বিখ্যাত প্রাসাদ
বাড়ি, না কি হোয়াইট হাউস। |
অনুষ্ঠান হলেই বারান্দার এক দিকে
থাকতেন মেয়েরা, অন্য দিকে ছেলেরা। |
|
পৌঁছতে যা ঘটল: গাড়ি ভেতরে ঢুকে যাওয়ার পর লোহার কোলাপসিবল গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনুরাগীদের ভিড় বা ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ছাত্রী ফ্যানেদের আর ঢুকে পড়ার সুযোগ নেই। কিন্তু টুপি পরা এক মধ্যবয়স্ককে পাওয়া গেল, যিনি অপত্যস্নেহে এগিয়ে এসেছেন। দে’জ মেডিক্যালের প্রাক্তন প্ল্যান্ট এঞ্জিনিয়ার। প্রসেনজিৎ দেখামাত্র বললেন, “এই যে শ্যামদা, কেমন আছ?” দু’জনের কথোপকথন থেকে পরিষ্কার দীর্ঘ দিন দেখা না হওয়ার পরিস্থিতিতেও অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক সিগন্যাল দারুণ। দমদমে এদের প্রাক্তন প্রতিবেশী। ছোট বুম্বাকে সাইকেল চড়াই শুধু শেখাননি, ভীষণ ঘনিষ্ঠ ছিলেন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের। দ্রুত বাড়ির ভেতর হাজির আরও এক ‘কাপল’। অবাঙালি। এঁরা কে? শুনলাম বাড়ির এখনকার মালিক। নিজের বয়ঃসন্ধিক্ষণ এবং টিন-এজ লাইফের এত স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি আজ প্রীতি অনুষ্ঠানে ভাড়ায় বিকোচ্ছে দেখে কি মুহূর্তের জন্য বিচলিত দেখাল নায়ককে? কোথাও কি একটা জেদ জন্মাল যে আমার ইনোসেন্ট কৈশোরের ওপর এতগুলো অপরিচিত জুতোর ভিড়কে আর হেঁটে যেতে দেব না? অনেক হয়েছে। আর বরদাস্ত করা যাচ্ছে না। আমি নিজেই কিনে নেব গোটা বাড়িটা! হয়তো! কালো চশমার আড়াল নিশ্চিত হতে দিল না। তবে পুরনো সব স্মৃতিপর্যটনে বেরিয়ে দমদমেই প্রসেনজিৎকে সব চেয়ে তারকার খোলসহীন দেখাল।
নস্ট্যালজিয়া: “কী বিশাল বাড়ি, না! কত ইতিহাস যে লুকিয়ে রয়েছে এর ভেতর! ঢুকেই বাঁ দিকে আমাদের বাথরুম ছিল। এ দিকটা বেড রুম। পিছনের লনটায় এসো। কত কত মেমোরিজ! কে আসেননি এখানে? দিলীপকুমার, সঞ্জীব কুমার, মহম্মদ রফি, কিশোর কুমার, উত্তম জেঠু, চুনী গোস্বামী। নাইন্টিন ফিফটি ওয়ানে দাদু আট বিঘা জমির ওপর দাঁড়ানো বাড়িটা কিনে নিয়েছিলেন। আমরা চলে আসি সেভেন্টি ওয়ানে। তখন এরিয়াটা আরও বড় ছিল। পাশে ভুটানের কনসাল জেনারেলের অফিস কাম রেসিডেন্স তখনও ছিল। আম বাগানটা ছিল। পুকুরটা দেখছি আর নেই। ওটা সিওর বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। বিশাল ফুর্তিফার্তা চলত এখানে। সারা রাত জেগে মদ খাওয়া। হইহুল্লোড়। আমি অনেক ছোট ছিলাম তখন।
সবাই একটু রাত হলেই আমাকে ঘুমোতে পাঠিয়ে দিত। কিন্তু আলোচনা সবই কানে আসত যে ড্রিঙ্ক করে একটাও যেন সুস্থ না থাকে। কার্পেটের ওপর বসে সব ভোর পাঁচটা অবধি পার্টি করত। মদ খেয়ে উঠে ভাইফোঁটা সেও এখানে হয়েছে। আবার এই বাড়িতেই দেখেছি ওপরের তলায় কী মিলিটারি পরিবেশ! দাদু প্রচণ্ড রাশভারী ছিলেন। ছ’ফুট চার ইঞ্চি লম্বা। তেমনই বডি ওয়েট। বিধান রায় দাদুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। দু’বেলা দেড়শ করে লোক খেত ওই বাড়িতে। আর চব্বিশ ঘণ্টা রান্নাঘর খোলা। পুজোর সময় দাদু নিখুঁত সংস্কৃতে মন্ত্র পড়তেন। তার পর রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের গান থাকত। আত্মীয়স্বজন-মামা-মাসি-কাকা-কাকিমা সবাই এসে থাকত। পুজোর সময় ওপরের তলায় এক রকম পরিবেশ। সারা বছর নীচে আরেক রকম। মহম্মদ রফিকে আমাদের একতলায় মাটিতে বসে বাংলা গান করতে শুনেছি। দেখে কে বলবে, উনি এত বড় একজন লেজেন্ড! আমি মাঝে মাঝে ড্রাম বাজাতাম। মহুয়া রায় চৌধুরীকে এই ঘরেই প্রথম দেখি। মহুয়াদি বলতাম আমি। দমদমের মেয়ে ছিল ও। মহুয়াদি কয়েক বার নেচেও ছিল আমাদের বাড়িতে। এখান থেকেই ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-য়ের জন্য ও সিলেক্টেড হয়। এ সব অনুষ্ঠানে আমার বা মাকুর (বোন পল্লবী) মেয়াদ ছিল রাত দশটা। কিন্তু তার মধ্যেই কত স্মরণীয় অনুষ্ঠান যে দেখেছি, আজও চোখে ভাসে। ‘রক্ততিলক’ ছবিটার শ্যুটিং এখানেই হয়েছিল। ওটাতে আমিও ছিলাম। তপনকাকুর ‘আতঙ্ক’ অবধি এখানে থেকেই কাজ করেছি। এয়ারপোর্ট হোটেলের সামনে থেকে বাস ধরে সোজা টালিগঞ্জ আসতাম। ওম পুরীকে নিয়ে একটা ফিল্ম তৈরি হচ্ছিল তখন। ‘সংক্রান্তি’। আমাকে কাস্ট করা হয়েছিল জমিদারের ছেলে হিসেবে। সব ঠিকঠাক। হঠাৎ ডিরেক্টরের মনে হল আমাকে বেশি ভাল দেখতে। ওম পুরির ছেলে আমাকে মানাবে না। দ্রুত বাদ হয়ে গেলাম। প্রচণ্ড কেঁদেছিলাম পরপর ক’দিন। নিজেকে শুধু বলেছিলাম, আর লাল্টু ছেলে হয়ে থেকো না। অ্যাগ্রেসিভ হতে শেখো।” |
৩ কসবা |
লোকেশন: বালিগঞ্জ স্টেশন রোড। বালিগঞ্জ স্টেশনের নীচের রাস্তা।
তাৎপর্য: দমদমের বাড়ি যদি রাজপ্রাসাদ হয়, এটা তা হলে অন্ধকূপের চেয়ে সামান্য বেটার কিছু। তিন তলা বাড়ির সিঁড়ির তলায় এক চিলতে ঘর। সাইজে বড়জোর আট বাই আট। এতক্ষণ যা চলছিল তা যদি বুম্বার জীবনের রূপকথা হয়, এই আসল সিনেমা শুরু হল! এই শুরু হল, বিশ্বজিতের ছেলে হয়েও কঠিন স্ট্রাগলারের জীবন। |
কসবা
|
এক চিলতে ঘরটায় ধরা আছে এক স্ট্রাগলারের উপাখ্যান। |
পৌঁছতে যা ঘটল: এতক্ষণ বুঝতে পারিনি, যেখানে যেখানে যাচ্ছি, বাড়ির মালিক বা অভিভাবকস্থানীয় ঝটপট হাজির হয়ে যাচ্ছে কী করে। এ বার শুনলাম আগের দিন বিশ্বস্ত সহকারীকে বেশ কয়েকটা পুরনো স্টপেজে রেকি করিয়েছেন প্রসেনজিৎ। সফরে গিয়ে বাড়িটা যাতে অন্তত তালাবন্ধ না পাওয়া যায়। এই হোমওয়ার্কটাই বরাবরের প্রসেনজিৎ। এখানেও তাই বাড়ির মালিককে পাওয়া গেল। অত জনবহুল এলাকা। প্রসেনজিৎ গাড়ি থেকে নামছেন দেখে, ভিড় জমে গেল থিকথিক। নায়কের চার দেহরক্ষী কোনওক্রমে তাঁকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে ফেরার সময় ল্যান্ড রোভারে তুলে দিল। আর বাড়ির মালিক? তিনি ঝটিতি পদক্ষেপে নেমে এসেছিলেন পুরনো ঘরটা দেখাতে। কিন্তু খানিকটা লজ্জিতই যেন দেখাল তাঁকে। এখনকার পিসি-র সঙ্গে এই চিলতে ঘর যায় না। এমনকী পোসেনজিতের সঙ্গেও না।
নস্ট্যালজিয়া: “দমদমের বাড়ি এত দূর হয়ে যেত যে বাধ্য হয়েই ঘরটা ভাড়া নিয়েছিলাম। এই বাড়িটার সঙ্গে স্টুডিয়ো ঘুরে ঘুরে রোল চাওয়ার অনেক অসম্মানের কাহিনি জড়িয়ে রয়েছে। অপমানিত হওয়ার নানান বৃত্তান্তও। মনে আছে খাকি প্যান্টজামা পরে এনটি ওয়ান-য়ে গিয়ে রোল চাইতাম। কী কঠিন গেছে সেই সব দিনগুলো। যথেষ্ট টাকাপয়সা ছিল না। নায়কের ছেলে বলে কেউ কোনও রকম খাতির করেনি। আমার খাবার আসত পাইস হোটেল থেকে। এক এক সময় মনে হত, কোন পরিবেশ থেকে কোথায় এসে পড়েছি। কিন্তু মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে বলতাম, বেঁচে থাকার জন্য সফল আমাকে হতেই হবে। দ্বিতীয় কোনও বিকল্প নেই!” |
৪ গরচা |
লোকেশন: গড়িয়াহাট থেকে আধ কিমি। মর্নিং গ্লোরি স্কুলের ঠিক সামনে। রিকশাওয়ালার ১৫ টাকার বেশি নেওয়া উচিত নয় গড়িয়াহাট মোড় থেকে ২৪, এন গরচা ফার্স্ট লেনে পৌঁছতে। একেবারে গেরস্থ পাড়ার ভেতর বাড়ি। নায়ক যে নির্জনতা বা সময় সময় পারিপার্শ্বিক থেকে ঔদাসীন্য দেখাতে চায় সেটা এই পরিবেশে অসম্ভব!
তাৎপর্য: গরচার বাড়ি থেকেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের উত্থান। তাঁর পুরনো বাড়িওয়ালা স্নেহমিশ্রিত গর্বের সঙ্গে বললেন, “বুম্বা দৌড়ে এসে আমাদের বলত, দেখেছ দেখেছ আমার সিনেমাটা? চোখের সামনে ওকে বড় হয়ে যেতে দেখলাম।” ‘দুটি পাতা’, ‘অমরসঙ্গী’। বাংলা ছায়াছবির সাফল্যের নানান মিনার স্পর্শ হতে দেখেছে এই বাড়ি এটা জেনেই যে মূল কারিগরের কিনা এখানেই নিবাস।
পৌঁছতে যা ঘটল: চট্টোপাধ্যায় পরিবার এখানে অনেক বছর কাটিয়েছেন। প্রসেনজিৎ বিয়ের পর একডালিয়ার ফ্ল্যাটে চলে গেলেও রত্না চট্টোপাধ্যায় আমৃত্যু এখানে ছিলেন। তাই বাড়িওয়ালা পরিবারের সঙ্গে মনে হল নায়কের নিবিড় সম্পর্ক। ফোনে মাঝে মধ্যেই কথাবার্তা হয়। নীচের তলায় এখন আর কোনও পরিবার নয়, একটা বুটিককে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তারা অবশ্য নায়কের হঠাৎ আগমনে যৎপরোনাস্তি উল্লসিত। তাঁর পুরনো বাড়ি দেখতে আসা মানে তাদের বুটিকেও তো একপ্রস্থ পদার্পণ হয়ে গেল। |
|
ঘরটা প্রায় একই রকম আছে। |
নস্ট্যালজিয়া: “আমার কেরিয়ার এই বাড়ি থেকে তৈরি। খুব বরাত জোরে এখানে ভাড়া পেয়েছিলাম। ব্যাচেলর, তাও কিনা সিনেমা করে। এই কম্বিনেশন যে কোনও বাড়িওয়ালার কাছে দুঃস্বপ্ন। রমেন রায় চৌধুরীর কাছে আমি আজও কৃতজ্ঞ যে উনি আমাকে বাড়িটার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। গরচাতেই তো গৌতম ঘোষ থাকতেন। শিলাজিৎ তখনও এই প্রফেশনে আসেনি। আমার বাড়ির সামনেই ও চুটিয়ে ক্রিকেট খেলত। বাড়িতে ঢুকেই উঠোনে প্রচুর বালি পড়ে থাকত। সেই বালির ওপর রোজ আমি ফাইটিং প্র্যাকটিস করতাম। একবার বাঘের সঙ্গে ফাইট সিকোয়েন্স ছিল আমার ছবিতে। তিন দিন শ্যুটিং চলার পর যখন ফিরেছিলাম গা দিয়ে এমন বোঁটকা গন্ধ বার হতে শুরু হল যে সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেল। ভেতরে একটা বড় সাদা ওয়ার্ড্রোব ছিল আমার। ওটা শমিত ভঞ্জ আমায় বানিয়ে দিয়েছিলেন। ওঁর ছবিতে কাজ করার পর বলেছিলেন, “পুরো টাকা দিতে পারছি না। তোকে এটা বানিয়ে দিলাম।” আমাদের বয়সি ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুরা আড্ডা মারতে আসত। তাপস-অভিষেক-রূপা-শতাব্দীরা সবাই আসত। একদম ভেতরে আমার আর মাকুর আড্ডা মারার একটা ফেভারিট জায়গা ছিল। গরচার বাড়িটা খুব হোমলি ছিল। স্টারের ট্যানট্রামসও আমি দেখাইনি। আশাও করিনি কেউ আমাকে সে ভাবে দেখুক। বান্ধবী এলেও একটা ডিগনিটি মেন্টেন করতাম। প্রবলেম হত শুধু বেশি বৃষ্টিটৃষ্টি হলে। জায়গাটায় জল জমত তাড়াতাড়ি। এমন অনেক দিন হয়েছে হিরোর রোলে শ্যুটিং করতে যাচ্ছি। তা বাড়ির সামনে এক হাঁটুর ওপর জল। গাড়ি ঠেলে ঠেলে বড় রাস্তা অবধি নিয়ে গিয়ে তার পর গাড়িতে বসেছি। স্টারডম অথচ বাড়ির পরিবেশ নির্ভেজাল গেরস্থ খুব সুন্দর কেটেছিল গরচার সময়গুলো।” |
৫ একডালিয়া |
লোকেশন: একডালিয়া এভারগ্রিন পুজোমণ্ডপের ঠিক সেই জায়গাটা! প্যাণ্ডেলের যে খাঁজটায় পৌঁছে অনেক দর্শনার্থী সিদ্ধান্ত নেন, এখান থেকেই তো প্রতিমা বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ওই গিজগিজে ভিড়ে আর ভেতরে গিয়ে লাভ নেই। গ্যালাক্সি টাওয়ার হল ঠিক তার বাঁ-পাশের মাল্টিস্টোরিড।
এখন বাড়িটা: আজ থেকে আঠারো-উনিশ বছর আগে বালিগঞ্জ এলাকার অন্যতম গ্ল্যামারাস বাড়ি ছিল গ্যালাক্সি টাওয়ার্স। আর তার দশ তলার ফ্ল্যাটে যে নীড় বেঁধেছিল তখনকার কলকাতার সবচেয়ে গ্ল্যামারাস ‘কাপল’। আজ বাড়িটা দেখে তা বোঝার উপায় নেই। রংহীন নয়। চেহারা-ছবি এখনও যথেষ্ট সুশ্রী। অথচ কোথাও যেন অতীত চাকচিক্যবিহীন। |
|
|
এখনও থমকে দাঁড়িয়ে
পড়েন ৯এ-তে এসে। |
‘আমি কি কোনও দিন এমন একটা
ঝকঝকে বাড়ি কিনতে পারব?’ |
|
জীবনে তাৎপর্য: এমন অসামান্য গোছানো ও আধুনিক ছিল দশ তলায় ডান দিকের কোনার ফ্ল্যাটটা যে সেই সময়কার কলকাতার আদর্শ ইন্টিরিয়র হিসেবে গণ্য হত। মনের মতো করে সাজিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ আর দেবশ্রী রায়। কে জানত, গোলাপ থেকে কাঁটা বার হয়ে মাত্র দু’বছরেই বিবাহিত সম্পর্কটা নিকেশ করে দেবে। গ্যালাক্সি টাওয়ার্স নায়কের জীবনে সম্ভবত সবচেয়ে বড় পাংচুয়েশন মার্ক। হ্যাঁচকা টানে এমন লম্বা বিরতি যে পেশাদার জীবনে প্রথম অবসাদে বিষণ্ণ তিনি স্টুডিয়ো যাওয়া বন্ধ করে দেন। ফ্ল্যাটটা ভয়ঙ্কর উথালপাথাল সময়ের সাক্ষী যখন স্বপন সাহার মতো অভিভাবকসদৃশ মানুষ পাশে না দাঁড়ালে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসই অন্য খাতে বইত! |
|
দশ তলার ফ্ল্যাটে নীড় বেঁধেছিলেন তখনকার কলকাতার সবচেয়ে গ্ল্যামারাস কাপল। |
পৌঁছতে যা ঘটল: নাইন এ-তে এখন অন্য ভাড়াটে। আপনি গেলে তিনি খুব খুশি হবেন বারবার বলেটলেও প্রসেনজিৎকে বিশেষ উৎসাহিত করা গেল না। সফরের এই একটা পর্বে তাঁকে মনে হল, বিষণ্ণ নস্ট্যালজিয়া অপূরণীয় কামড়াতে শুরু করেছে। পাঁচতলার সাজানো গোছানো একটা ফ্ল্যাটে পৌঁছনো গেল। রুমি ও গৌতম ধর খুব উষ্ণ অভ্যর্থনা করলেন তাঁদের প্রাক্তন প্রতিবেশীকে। চিংড়ির কাটলেট, কফি, অন্যান্য নানান রান্না হাজির হয়ে গেল সামনে। ১৮ বছর আগেও যে খুব ঘনিষ্ঠ আদানপ্রদান ছিল ফ্ল্যাটের দুই পরিবারে, বোঝাই যায়। রুমি মনে করছিলেন সেই সময়ের কথা। ম্যাজেনাইন ফ্লোরে বাড়ির কার পার্কিং থেকে যখন প্রসেনজিতের গাড়ির টেপ চুরি হয়ে গিয়েছিল। তাতে গোটা বিল্ডিংয়ে তোলপাড় পড়ে যায় যে, ওর গাড়িরই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে বাকিদের কী নিরাপত্তা? নায়ক শুনতে শুনতে হাসলেন। নাকি একটু অন্যমনস্কই হয়ে পড়লেন? তাঁর জীবনের প্রথম প্রকৃত ভালবাসাই তো হারিয়ে গিয়েছিল এই আনলাকি ফ্ল্যাট থেকে। টেপ তো তুচ্ছ একটা ছবি। ফোটোগ্রাফার কৌশিক সরকারের বহু উপরোধ অনুরোধে নাইনথ ফ্লোর অবধি ছবি তুলতে উঠলেন। কিন্তু ফ্ল্যাটের ভেতরে কিছুতেই ঢুকবেন না। স্মৃতির রক্তাক্ত চাবির গোছা খুঁজে বার না করাই তো বুদ্ধিমানের কাজ!
নস্ট্যালজিয়া: “আমার নিজের টাকায় কেনা প্রথম বাড়ি। বলতে পারো স্বপ্নের বাড়ি। খুব আড্ডা হত। কাছাকাছি থাকতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ডাক্তার দুর্গা ভট্টাচার্য-রা। ওঁরা চলে আসতেন। বাড়িটা দারুণ যত্ন করে সাজিয়েছিলাম। ‘আনন্দলোক’ শুধু ফ্ল্যাটটার ইন্টিরিয়র ডেকরেশন নিয়েই একটা স্টোরি করে ছিল। কোনার দিকে একটা ঘর বানিয়েছিলাম যেখানে পুরোটা কাঠের ফ্লোর। তখন এই রকম ফ্লোর দেখা যেত না। ওই ঘরটায় সবাই গোল হয়ে বসত। কত স্ক্রিপ্ট যে ওখানে বসে শুনেছি। আমাদের ফ্ল্যাটের ঠিক বাইরেই ছোট ব্যালকনিটা দেখতে পাচ্ছ তো। ওটা আমার খুব প্রিয় জায়গা ছিল। ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের দারুণ ঝকমকে একটা বাড়ি দেখতাম। দেখতাম আর ভাবতাম, আমি কি কোনও দিন ও রকম একটা বাড়ি কিনতে পারব?” |
৬ টেকনিশিয়ান্স স্টুডিয়ো |
লোকেশন: কুঁদঘাটের মুখে সেই বিখ্যাত স্টুডিয়ো? না এন টি ওয়ান? কোনটাকে ধরবেন, নিশ্চিত হতে পারছিলেন না নায়ক। নাকি যুগ্ম ভাবে ধরবেন? তার পর টেকনিশিয়ান্সই বেছে নিলেন। তাঁর জীবনে যা শুধু রক্ষাকবচেরই কাজ করেনি, অঙ্কের বিচারে মাইলস্টোন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
এখন অবস্থা: ইট-বালি-সিমেন্ট-কংক্রিট-পাইপ-ক্রেনে ভরা। জুতো অক্ষত রেখে এত বড় জায়গায় দু’পা হাঁটার উপায় নেই। সিনে টেল, আর্টিস্ট ফোরামের অফিস দু’টো কোনও ক্রমে রক্ষা পেলেও সর্বত্র কাজ হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন করে তৈরি হচ্ছে টেকনিশিয়ান্স। |
টেকনিশিয়ান্স শুধু রক্ষাকবচই নয়, জীবনের মাইলস্টোন। |
জীবনে তাৎপর্য: একটা সময় তাঁর ঘরবাড়ি ছিল স্টুডিয়োটা। দিনের যে কোনও সময় এখানেই অনিবার্য ভাবে তাঁকে পাওয়া যেত। বিক্ষত মানসিক অবস্থায় বাড়ি ফিরে যেতে সব সময় ইচ্ছে করত না। স্টুডিয়োয় বসে বাড়তি কাজই ছিল সেই ক্ষতের মুখে সেরা পরিচর্যা। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে বিখ্যাত জুটি তৈরি আর তার পর ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া নাকি এই স্টুডিয়ো থেকেই। এই স্টুডিয়ো থেকে তাঁদের জুটির দেওয়া নানান হিটের ওপর সেই সময় দাঁড়িয়েছিল টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি।
আজকের ভেঙেচুরে তৈরি হতে দেখা টেকনিশিয়ান্স দেখে তো প্রসেনজিতের মনে হওয়া উচিত, আরে অনেক বছর আগে এমন অপরিচ্ছন্ন ইঁট-বালি-সিমেন্ট ডাই করে থাকা পাইপ তো আমার জীবনেও হাজির হয়েছিল। তার ওপরই তো এমন সুদৃঢ় ইমারত তৈরি করলাম। পরের পর ছবি সুপারহিট। ‘বাবা কেন চাকর’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’। স্টুডিয়োটাও দারুণ আধুনিক হয়ে একদিন উঠে দাঁড়াবে। আর থেকে যাবে।
পৌঁছতে যা ঘটল: টেকনিশিয়ান্সে প্রসেনজিৎ মানে ইডেনে সৌরভ। গাড়ি ঢোকা মাত্র চেনা মানুষজনের একটা আবেগের বৃত্ত ঘিরে ধরল। রকমারি মুখ। তাঁদের নানা অভিব্যক্তি। সেই দুই পরিচালকের কাউকে অবশ্য দেখা গেল না যাঁদের কথা বারবার প্রসেনজিতের মুখে আসছিল। স্বপন সাহা আর হরনাথ চক্রবর্তী।
নস্ট্যালজিয়া: “আরে এটা তো আজও আমার কাছে মন্দিরের মতো। প্রণাম করে তবে ঢুকি। এক একদিন টেকনিশিয়ান্সের চারটে ফ্লোরে একসঙ্গে শু্যটিং করেছি। স্বপনদা আর হরনাথ ম্যাক্সিমাম এই পিরিয়ডটায় এদের সঙ্গে কাজ হয়েছে। হর হয়তো দশটা থেকে। স্বপনদা তিনটে থেকে। ওদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং দারুণ না হলে ‘বাবা কেন চাকর’ শেষ করা যেত না। ওই যে জায়গাটা দেখছ, ওখানে স্বপনদা বৃষ্টির সিকোয়েন্স করতেন। ঋতুপর্ণাকে ভেজানো হত। আমি বলতাম এত বৃষ্টিতে ভিজতে বললে আমার কিন্তু এক্সট্রা অ্যালাউন্স লাগবে। দারুণ পরিবেশ ছিল টেকনিশিয়ান্সে। ক্রিয়েটিভ আলোচনা হত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে ছবির প্ল্যানিং হত। তখন তো মেক আপ ভ্যানট্যানের চল হয়নি। মেক আপ রুমেই আমরা সময় কাটাতাম। নইলে ডিরেক্টরদের অফিসে। প্রথম এসি বসল এখানে ঋতুপর্ণ ঘোষের জোরাজুরিতে। ‘চোখের বালি’ শ্যুটিংয়ের সময়। তা-ও কেবল দু’টো ঘরে বসল। অ্যাশ আর আমার জন্য। এই স্টুডিয়ো আমায় জীবনে অনেক কিছু শিখিয়েছে। বিশেষ করে ছবির প্ল্যানিং। হিসেবপত্তর। সে দিন দেখলাম আমার এক বন্ধু নায়ক বলেছে আমি নাকি প্রচুর ম্যানিপুলেট করে থাকি। সেই ম্যানিপুলেশনের শিক্ষাটাই টেকনিশিয়ান্সে বসে বছরের পর বছর নিয়েছি যে কী ভাবে বক্স অফিস-ধর্মী হয়ে প্রোডিউসরের টাকাটাকে সম্মান জানাতে হয়। হাঃ হাঃ।” |
৭ হিন্দুস্থান পার্ক |
লোকেশন: হিন্দুস্থান পার্কের ভেতর খুব ছিমছাম লোকেশন। তাঁর একডালিয়া-পরবর্তী আস্তানা।
এখন বাড়িটা: ৩০ এ, হিন্দুস্থান পার্কের বাড়িটাতেই একমাত্র ঢুকতে পারলাম না আমরা। তালাবন্ধ ছিল। প্রসেনজিতের প্রাক্তন স্ত্রী অপর্ণা এবং কন্যা কলকাতা এলে নাকি এখানেই থাকেন। বাকি সময় ফ্ল্যাটটা বন্ধ পড়ে থাকে।
জীবনে তাৎপর্য: গ্যালাক্সি টাওয়ারে মানসিক ভাবে বিদীর্ণ নায়ক নতুন সংসার পেতে ছিলেন এখানে। হিন্দুস্থান পার্কের বাড়ির সবচেয়ে বড় তাৎপর্য, প্রসেনজিতের বৃহত্তম কামব্যাকের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা। আগের ফ্ল্যাট থেকেই শুরু হয়ে ছিল টালিগঞ্জে তাঁর প্রত্যাবর্তনের লড়াই। কিন্তু তখনও কেউ বিশ্বাস করেনি এই লোকটার পক্ষে আর উঠে দাঁড়ানো সম্ভব। বরং এই শনিবারের পত্রিকাতেই পুরুষ নায়কদের ক্রমপর্যায় লেখা হয়েছিল এ ভাবে ১) চিরঞ্জিত, ২) তাপস, ৩) । “কী আমি একটা ড্যাশ? ঠিক আছে তোমাদের রেটিংটা উল্টে দেব আমি,” বলেছিলেন প্রসেনজিৎ। সাল ১৯৯৬। তিন বছরের মধ্যে নতুন যে রাঙ্কিং শনিবারের পাতাতেই বার হল তাতে ড্যাশ আর নেই। এক প্রসেনজিৎ। আর সেই রাঙ্কিংই চলল। ব্যক্তিগত জীবনে যদিও হাজির হয় নতুন জুড়িতে সুপারহিট সব ছবি আর নতুন সম্পর্ক। যার পশ্চাদপটে নাকি থেকে গিয়েছিল ধূসর হতে থাকা বিবাহিত জীবন। |
|
স্টুডিয়োহিন্দুস্থান পার্কএখনও এখানে এলে তাঁকে কি বিষণ্ণ নস্ট্যালজিয়া কামড় বসায়। |
পৌঁছতে যা ঘটল: অন্য পুরনো বাড়িগুলোয় যেমন তাঁর ম্যানেজার আগের দিন গিয়ে রেকি করে এসেছিলেন, এখানে প্রসেনজিৎ পাঠাননি। এই একমাত্র স্টপ, যেখানে তাঁকে খুব অস্বস্তিতে দেখাল। ল্যান্ডরোভারে বসেই থাকলেন প্রসেনজিৎ। পুরনো আস্তানার সামনে তাই তাঁর কোনও ছবি তোলা গেল না। জোর-ও করিনি। এটা খুব স্পর্শকাতর জায়গা। শুধু ফোটোগ্রাফারকে বাইরে থেকে ছবি তুলতে দেখে পাড়াপড়শি দু’-চারজন উৎসুক মুখে দাঁড়িয়ে পড়লেন, “প্রসেনজিৎ থাকত এখানে। অনেক বছর হল চলে গেছে। বৌকে ফ্ল্যাটটা দিয়ে গেছে। ওঁর ফ্যামিলি মুম্বই থেকে এলে থাকেটাকে।”
নস্ট্যালজিয়া: “চলো, এখান থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাই। আবার কোথা থেকে কী ভুল বোঝাবুঝি হবে। কন্ট্রোভার্সি তৈরি হবে।” |
৮ সুইনহো স্ট্রিট |
লোকেশন: হিন্দুস্থান পার্কের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর ক’দিন বোন পল্লবীর বাড়িতে ছিলেন প্রসেনজিৎ। তার পর চলে আসেন ২এ, সুইনহো স্ট্রিটের চার তলায়। মাত্র মাসকয়েক হল এই বাড়ি থেকে আসবাবপত্র নিয়ে গিয়েছেন তাঁর বড় বাড়িটায়। কিন্তু নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। |
ওঁর সবচেয়ে লাকি বাড়ি। |
এখন বাড়িটা: ভরা দক্ষিণ কলকাতা হয়েও মোড় থেকে অল্প ভিতরে বলে অদ্ভুত একটা প্রাইভেসি আছে বহির্বিশ্ব থেকে। যেন একটা সস্নেহ গাছের ছায়া বিছোনো রয়েছে বাসিন্দাদের ওপর। বিল্ডিংয়ের অন্তর্জগৎও একান্নবর্তী পরিবারের মতোই মিশুকে, আড্ডাবাজ আর হাসিখুশি। এক কথায় টেনশন ফ্রি।
তাৎপর্য: প্রসেনজিতের জীবনে এটাই সবচেয়ে লাকি বাড়ি। ব্যক্তিগত জীবনে উপর্যুপরি লাভা স্রোতের পর এখানেই তাঁর ‘চোখের বালি’-র অফার পাওয়া। অর্পিতার সঙ্গে বিয়ে। ছেলে হওয়া। আবার রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নতুন জুড়ি বাঁধা। যেখানে অসংখ্য সুপারহিট সহ ছত্রিশটা বাণিজ্যিক ছবি দু’জনে করে ফেলা। আবার বাণিজ্যিক ছবির সম্রাট থাকতে থাকতেই অন্য ধরনের ছবিতে অভিনয় করতে করতে ‘পি সি’র স্টেটাস পেয়ে যাওয়া। ‘দোসর’ এই বাড়িতে থেকে। ‘অটোগ্রাফ’ এই বাড়িতে। ‘বাইশে শ্রাবণ’-ও।
পৌঁছতে যা ঘটল: এ দিক ও দিক ফ্ল্যাটের সব দরজা জানালা খুলে গেল। একইসঙ্গে বার হয়ে এল অনেকগুলো হাসি মুখ। এখানে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় নির্ভেজাল পাশের বাড়ির প্রিয় দাদা। কোনও চিত্রতারকাটারকা নন। আর ভোটে নিজের ছেলের কাছে হেরে যাবেন।
নস্ট্যালজিয়া: “আমার সব চেয়ে ভাল সময় এই বাড়ি থেকে। জীবনের সেরা সময় এখানে কাটিয়েছি। ২০০১-১৩। অর্পিতা তো বরাবর এখানে থেকে ভীষণ খুশি ছিল। মিশুক হল এখানে। হোস্টেলে যাওয়ার আগে অবধি তো ওর খবরও আমাদের প্রায় রাখতে হত না। প্রতিবেশীরা সবাই এত ভাল। সুইনহো স্ট্রিট আমার কাছে সব সময় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ভেরি প্রেশাস।” |
চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া নিশ্চিন্ত জয়ী মানুষ। |
এখনকার ঠিকানা |
পি ১৯/১ ওল্ড বালিগঞ্জ রোড। ঋতুপর্ণ মারা যাওয়ার পর বাড়ির নামকরণ করেছেন ‘উৎসব’। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির ঠিক মুখে। এ বাড়িতে গত দশ-বারো বছরই প্রসেনজিতের অফিস। দুর্ধর্ষ এই চারতলা বাড়িটা কিনে নিজের মনের মতো করে নিয়েছেন। এ বাড়িতে সত্যজিৎ রায় নায়কের শ্যুটিং করেছেন। ঋতুপর্ণ তৈরি করেছেন ‘খেলা’। ‘মিশর রহস্য’-য়ের মহাসাফল্যের মুখও এই বাড়িতে থেকেই দেখেছেন কাকাবাবু। এই বাড়ির অধিকারী পোসেনজিৎ নয়। প্রসেনজিৎ নন। এমনকী ‘পি সি’ও না। কেবল স্বপ্নের এই বাড়ি নিয়েই আস্ত প্রচ্ছদকাহিনি হতে পারে। ভেতরটা অসাধারণ। পদে পদে ছবি আর লেখার উপাদান। কিন্তু দিনের শেষে এই বাড়ি চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া এক জয়ী মানুষের, যার মুখের ওপর সাফল্যের হাজার ওয়াটের আলো, রোশনাই আর জয়ীর মেডেল... কে বলবে তার আড়ালে কত রক্ত, কত ধুলোর ঝড়, কত বঞ্চনা, কত অবিশ্বাস, কত হৃদয়ভঙ্গ, কত নিজের কাছে বারবার হেরে যাওয়া... কে বলবে কয়েক বছর আগেও এই লোকটা অফিস টাইমে ভিড়ে ঠাসা নাকতলা মিনিতে যুদ্ধ করছিল! |
|
টার্মিনাসে পৌঁছে |
নাকতলা
পত্রিকা: প্রথম দিন থেকেই ফিল্মি পরিবেশে মানুষ না হলে জার্নিটা এ রকম হত?
প্রসেনজিৎ: আমার মনে হয় এ রকমই হত। ডেস্টিনি ছিল। আমার দাদু বিরাট এঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ঠাকুর্দা ডাক্তার। আমি তো ওই সব লাইনেও যেতে পারতাম। কিন্তু সেটা হওয়ার ছিল না। বাপি আজও বলে, “বুম্বাকে জঙ্গলে ফেলে এলেও ও অভিনেতাই হত।”
দমদম
পত্রিকা: বিশাল এই বাড়িতে টিন এজ কাটানোটাই কি তোমার উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয় যে বড় আমাকে হতেই হবে?
প্রসেনজিৎ: দমদমে যখন ছিলাম তখন প্রতি রোববার ফাটিয়ে ব্রেকফাস্ট করতাম। লুচি-মিষ্টিটিষ্টি সব দিয়ে। এর পর যখন ষোলো-সতেরো বছর বয়সে কসবায় এসে পড়লাম, তখন ব্রেকফাস্টের টাকা জোগাড় হবে কি না সেটাই ভেবে পেতাম না। বেশ কিছু দিন স্কিপ করতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। তখন নিজেকে মোটিভেট করতাম যে, আমি একটা বড় বাড়ির লোক। সেই দমদমের জায়গাটা আবার ফেরত পেতে হবে নিজের জন্য। আমি বিলং করি ওখানেই।
কসবা
পত্রিকা: স্ট্রাগলার জীবনে যখন আধপেটা খেতে পাও না, তখন বিশ্বজিতের বন্ধুবান্ধবেরা সাহায্যের হাত বাড়াননি কেন? যাঁরা দমদম বা নাকতলার বাড়িতে এসে নাচতেন-গাইতেন!
প্রসেনজিৎ: হয়তো ওঁরা হেল্প করতে চাইলেও, আমি হেল্প নিতে চাইনি। ওঁদের সঙ্গে যে কানেক্টটা ছিল, সেই জায়গাটাই তো তখন আমার কাছে ভীষণ তেতো। নানান প্রশ্ন আসত, যেগুলো শুনলেই আমি কেঁদে ফেলতাম। ‘দু’টি পাতা’ হিট হওয়ার পরেও আমার অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটেনি। ‘অমর সঙ্গী’র পরে যেটা প্রথম কাটলো। মাকু-র যখন বিয়ে হয়, আমাদের শোচনীয় আর্থিক অবস্থা। হিউজ ফ্যামিলি ক্রাইসিস। বাইরে কাবুলিওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে। এই অবস্থায় আমি নাটক করে করে পয়সা রোজগার করেছি। সৌমিত্র কাকুর কাছে আমি খুব কৃতজ্ঞ। বাবার বন্ধু হিসেবে উনি মাকু-র বিয়ের সময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। ওটা একটা হিউজ মানসিক সাপোর্ট ছিল।
গরচা
পত্রিকা: কঠিন জীবনসংগ্রামে পড়ে গরচার ছাদের তলায় বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ হত না? তারকাপুত্র হয়েও উনি যে আমার তারকাপুত্র হওয়ার কুশনটা কেড়ে নিলেন?
প্রসেনজিৎ: এক একটা সময় মনে হয়েছে ঠিকই। উনি যখন দমদমের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান, আমার বয়স তখন চোদ্দো। বোনের বিয়ের সময় ওঁর উপস্থিতিটা খুব দরকার ছিল। যেটা আমি পাইনি। ওই টালমাটাল সময়ে বাপির প্রতি তীব্র অভিমান হত। মনে হত, সঞ্জয় দত্ত, কুমার গৌরব-রা যে সুযোগটা পাচ্ছে, সেটা উনি তো আমাকে দিতে পারতেন। একটা ছবি প্রোডিউস করতে পারতেন আমার জন্য। কী সব অভিজ্ঞতা হয়েছে তখন। দমদম থেকে টালিগঞ্জ গাড়িতে আসার মতো তেলের টাকা ছিল না। স্টুডিয়ো থেকে ফেরার সময় মা শ্যামবাজারে আসতেন আমাকে গাড়িতে তুলতে। আমি একটা এস বাসে করে শ্যামবাজার পৌঁছতাম। অর্ধেক দিন গাড়িতে ওঠা মাত্র ক্লান্তিতে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। সেটা নিয়েও কত কথা শুনেছি। লোকে মাকে টিটকিরি দিয়ে বলেছে, “রত্নার কপালটা খারাপ। বিশুটা চলে গেল। ছেলেটাও এখন ও সব নিষিদ্ধ পাড়ায় যাওয়া শুরু করেছে।”
একডালিয়া
পত্রিকা: গভীর ব্যক্তিগত ব্যর্থতায় ভরা এই বাড়িটা তোমায় পরবর্তী কালে কী শিখিয়েছে?
প্রসেনজিৎ: আমি আর চুমকি (দেবশ্রী), দু’জনেই তখন অনেক ইম্ম্যাচিওর ছিলাম। বিয়ের কমিটমেন্টের জন্য একটা পর্যায়ের ম্যাচিওরিটি দরকার হয়। আর একটা জিনিস শিখেছিলাম। আমাদের সমাজে একজন পুরুষের সঙ্গে একজন মেয়ের বিয়ে হয় না। বিয়ে হয়, দু’টো পরিবারের মধ্যে। ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের বাড়ি থেকে চুমকি চলে যাওয়ার বছরখানেক বাদে বুবাই (অপর্ণা) আমার জীবনে আসে। মেন্টালি প্রচণ্ড আপসেট আমি তখন সেটেল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই বাড়িতে থেকে সেটা সম্ভব ছিল না। ওই বাড়িটা প্রচুর স্মৃতিতে ভরা। আমি সেই স্মৃতিগুলো থেকে সরে বাঁচতে চেয়েছিলাম।
টেকনিশিয়ান্স
পত্রিকা: টেকনিসিয়ান্সের মাটি কামড়ে কামব্যাকটা কী ভাবে সম্ভব হয়েছিল?
প্রসেনজিৎ: চুমকি-র সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর মানসিক ভাবে এত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি যে, ঠিক করেছিলাম ফ্ল্যাট বিক্রি করে কটক চলে যাব। ওখানে খুচখাচ কাজ করব। এ দিকে আর ফিরব না। ছ’মাস কারও মুখ দেখিনি। তুমি সেই সময় আমায় কয়েকবার দেখতে এসেছিলে। জানো, কী অবস্থায় ছিলাম। তারপর তরুণ মজুমদার আর স্বপন সাহা মিলে আমায় অদ্ভুত ভাবে মোটিভেট করলেন। স্বপনদার কথাগুলো তো থেরাপির মতো কাজ করেছিল। উনি বললেন, “কতগুলো প্রোজেক্ট শুধু আপনার জন্য আটকে আছে, জানেন? আপনি এ রকম করলে আমরা ডিরেক্টররা কোথায় যাব?” সেই ছ’মাস বাদে আমি স্টুডিয়োতে ফিরলাম। ফিরে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ন’টা ছবিতে সই করি।
|
|
হিন্দুস্থান পার্ক
পত্রিকা: এ বাড়িতে ভেঙে গেল প্রসেনজিতের দ্বিতীয় বিবাহিত সম্পর্ক। আজ ফিরে তাকালে কী মনে হয়?
প্রসেনজিৎ: এই সম্পর্ক আমাকে একটা বিউটিফুল মেয়ে দিয়েছে। সেটা আমি সব সময় মনে রাখি। বুবাইয়ের সঙ্গে আমার ভুলবোঝাবুঝি হয়, কোনও একজন নায়িকাকে নিয়ে। সম্পর্কটা আগেই তিক্ত হওয়া শুরু করেছিল। এ বার আরও বেড়ে গেল। কিন্তু একডালিয়ার যে তফাত যেটা হল, আমি আর দ্বিতীয়বার নিজেকে হারিয়ে ফেলিনি। তদ্দিনে আমি শিখে গেছি, কাজের আগে কাউকে বসাতে নেই। পুরুষমানুষের জীবনে কাজই সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট। একডালিয়ার পর তাই আর আমার কেরিয়ার কখনও ফিরে তাকাইনি। আর একটা শিক্ষা জীবন থেকে নিয়েছি, তা হল, সব কিছুর জন্য একটা সময় আছে। সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। টাইম যখন আসে, হবেই। মেয়ে বড় হচ্ছে, আমি নিশ্চিত জীবনের কোনও একটা সময় বাবা-মেয়েতে আবার দেখা হবে। কেউ ভেবেছিল বিশ্বজিৎ-প্রসেনজিতে আবার মিল হবে? সব কিছুই সময়।
সুইনহো স্ট্রিট
পত্রিকা: তোমার জীবনের সবচেয়ে লাকি বাড়ি। এ বার কি ফেং শুই বা বাস্তু করে ঢুকেছিলে?
প্রসেনজিৎ: একেবারেই না। হিন্দুস্থান পার্ক ছেড়ে যখন বেরিয়ে আসি, সব কিছু দিয়েথুয়ে নিঃস্ব অবস্থায় বেরিয়ে এসেছিলাম। এসে উঠেছিলাম মাকু-র বাড়িতে। পকেটে মাত্র পঞ্চাশ টাকা। নিজের কোনও টাকা ছিল না। মাকু-র গাড়ি করে ঘুরতাম। জাস্ট মাথা গোঁজার একটা ঠাই দরকার ছিল আমার। স্টারসুলভ কোনও ফ্যান্সি জায়গা নয়। এটাও জীবনে শিখেছি যে, তুমি কোথায় থাকো সেটা আসল নয়। তোমার কাজটা কোন মাত্রায় সেটাই আসল। সুইনহো স্ট্রিট দারুণ ফ্যান্সি কোনও কিছু নয়, কিন্তু এটা আমায় পরিপূর্ণ শান্তি দিয়েছে। অর্পিতাকে নিয়ে নতুন বিবাহিত জীবন শুরু করায় সব রকম সাহায্য জুগিয়েছে। এত ভাল ওখানকার মানুষজন যে, আজও ওখানকার এক প্রতিবেশী বিশেষ চা তৈরি করে আমার জন্য ফ্লাস্কে এ বাড়িতে পাঠান। ভাবতে পারো? |
ছবি: কৌশিক সরকার। |
|