চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
কল্পরূপ দিয়েই শিল্পী ধরতে চেয়েছেন সত্য এবং সৌন্দর্য
পাত ভাবে যা স্বাভাবিক, তা সব সময় সত্য নাও হতে পারে। এক জন শিল্পী সব সময়ই সত্যকে খোঁজেন। সত্যকে সৌন্দর্যে অন্বিত করেন। সেই সন্ধানে তাঁকে অনেক সময়ই স্বাভাবিকতাকে ভাঙতে হয়। কল্পরূপ দিয়ে শিল্পী ধরতে চেষ্টা করেন সত্যের রহস্যময় মুখ।
গ্যালারি গোল্ড-এ সম্প্রতি একসঙ্গে প্রদর্শনী করলেন তিন শিল্পী: সুব্রত চৌধুরী, শেখর কর ও পার্থ ভট্টাচার্য। তিন জনই অ্যাক্রিলিকে ছবি করেছেন স্বাভাবিকতাবাদী আঙ্গিকে। তিন জনেরই অধিকাংশ ছবির বিষয় মানবীমুখ। পুরুষের দৃষ্টিতে মানবী সব সময়ই রহস্যময়ী। সেই রহস্যময়তা এক এক জনের কাছে এক এক ভাবে প্রতিভাত হয়। সেই রহস্যে কখনও থাকে স্বর্গীয় বিভা। কখনও তা উন্মোচিত করে পার্থিব কলুষ। এই তিন শিল্পীর ছবি তিনটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মানবীমুখকে নিরীক্ষণ করেছে। ঐক্যের ঐকতান দিয়ে তাঁরা জীবনের বৈচিত্রকে উন্মীলিত করতে চেয়েছেন। ঐকতানের ভিতর বৈচিত্রই এই প্রদর্শনীর মূল সুর।
শিল্পী: সুব্রত চৌধুরী।
কল্পরূপের মাত্রা সুব্রত চৌধুরীর ছবিতেই অপেক্ষাকৃত বেশি। তাঁর মানবীপ্রতিমা বর্তমানের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকে না। অনেক সময়ই পুরাণকল্পের অতীত থেকে উঠে আসে। বাস্তবের সঙ্গে বাস্তবাতীতের এক মনোরম খেলা চলে। তাঁর বর্ণপরিকল্পনার ভিতরও এই অলৌকিকের আভাস থাকে। সূর্যাস্তের লালিমা তাঁর অনেক মুখাবয়বেরই উপরিতল থেকে বিচ্ছুরিত হয়। বাস্তব অতিক্রান্ত এই বর্ণের বিচ্ছুরণ দিয়ে যে মানবীমুখ তিনি গড়ে তোলেন, তার দৃষ্টিতে এক উদাস বিষাদ ছড়ানো থাকে। তাঁর ছবির কোনও শিরোনাম নেই। কোনও শিল্পীরই নেই। এমনকী প্রদর্শনীর কেন্দ্রীয় ভাবনার কোনও বিবৃতিও তাঁরা প্রকাশ করেননি। পরিকল্পনার এই অভাব ছবি আস্বাদনে একটু সমস্যা তো সৃষ্টি করেই। সেটুকু মেনে নিয়েই এই প্রদর্শনীর ভিতরে আমাদের প্রবেশ করতে হয়। সুব্রতর একটি ছবিতে এক মানবীমুখের পার্শ্বচিত্র দেখি। যৌবনময়ী সেই নারী। তাঁর অধিকাংশ নারী-প্রতিমাই যৌবনের প্রতীক। আলোচ্য ছবিটির এই যুবতীর মাথার উপর থেকে নেমে এসেছে স্বর্ণাভ ফুলের অলঙ্কার। সামনেও অদৃশ্য কোনও বৃক্ষ থেকে নেমে এসেছে কুসুমের ঝাড়। পুষ্পসজ্জিত এই নারী কিন্তু ফুলের দিকে তাকাচ্ছে না। আপন তন্ময়তায় সে মগ্ন। এই তন্ময়তাই বর্তমানের বাস্তব থেকে চিরন্তনতার এক অলৌকিক বিভায় রণিত করে তাকে। দু’টি ছবিতে শিল্পী তাঁর পুরাণকল্পবিধৃত কল্পনার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ ঘটান। পাখির সঙ্গে সমন্বিত হয়ে নারী সেখানে আকাশের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠে। পুরুষের ছবিও এঁকেছেন সুব্রত। অন্তত চারটি ছবি আছে অতীতের স্তব্ধতায় আবদ্ধ পুরুষের।
শেখর করের মানবীরা আর একটু পার্থিব। অবয়বগুলি ত্রিমাত্রিক বলিষ্ঠতায় অনেক বেশি আয়তনময়। প্রেক্ষাপটের নিবিড় অন্ধকার সেই আয়তনময়তাকে অনেক বেশি স্পর্শময় করে তোলে। তাঁর বর্ণ পরিকল্পনায় প্রাধান্য পায় এক ধরনের প্রত্ন-শ্যামলিমা। এই বর্ণের ভিতরই অতীতের রহস্যময়তা স্পন্দিত হয়। গহন বাস্তবকে শিল্পী এ ভাবেই কল্পরূপে রূপান্তরিত করেন। মানবীর যে আত্ম-অভীক্ষা তার ভিতর অতলতা আছে। তার প্রকৃত স্বরূপ মানবী যেমন জানে না, তেমনি বাইরের মানুষের কাছেও তা রহস্যময়। সেই রহস্যকেই অনুধাবনের চেষ্টা করেছেন শিল্পী। অসংজ্ঞায়িত, অরূপ সেই রহস্যকে রূপের সীমায় বাঁধতে গিয়ে রূপ ও অরূপের মধ্যে যে দোলাচল, সেটাই আয়তনময় স্বাভাবিককেও কল্পরূপের দিকে নিয়ে যেতে চায়।
পার্থ ভট্টাচার্য অনেক বেশি বাস্তববাদী। তাঁর ছবির নারীরা অধিকাংশই আজকের নাগরিক পরিস্থিতির সমস্যাদীর্ণা মানবী। তাঁদের কেউ জানলার পাশে দাঁড়িয়ে তন্ময় হয়ে মোবাইল ফোনের ভিতরের বার্তা নিরীক্ষণ করে। কেউ বা তাঁর জামাটি বুকের কাছে নিয়ে নিজেকেই যেন পরিমাপ করে। এই বাস্তবতায় লগ্ন থেকেই শিল্পী কল্পরূপের দিকে যান। তরুণীটিকে ঘিরে থাকে যখন কাগজের নৌকা বা সাহেব, বিবি, গোলাম তাস পরিবৃত হয়ে আত্মবিস্মৃত হয়ে থাকে যখন কোনও নারী, বাস্তবকে জড়িয়েই তখন এক কল্পরূপ তৈরি হয়। তাঁর বর্ণের ভিতর রেমব্রান্টীয় কৃষ্ণাভ লালিমার আভা বাস্তবের সঙ্গে রহস্যময়তার এক সমীকরণ তৈরি করে। তাঁর বেশ কয়েকটি ছবিতে প্রজ্বলিত আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে একটি প্রতীক। নারীর সেই চৈতন্যের আলোকেই শিল্পী অনুধাবনের চেষ্টা করেছেন। পুরুষের মগ্নচেতনাও হয়ে উঠেছে তাঁর কয়েকটি ছবির বিষয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.