জলের পাম্প বিকল, শম্ভুনাথে ডায়ালিসিস-সঙ্কট
নেফ্রোলজি - মডেল সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল শম্ভুনাথ হাসপাতালে। যেখানে রোগীরা গিয়ে কম খরচায় ডায়ালিসিস করাতে পারবেন। অথচ মাত্র এক বছরের পুরনো সেন্টারেই বারবার বন্ধ থেকেছে সেই পরিষেবা। চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন কিডনি বিকল হওয়া এবং সাপে কাটা রোগীরা। মাস দুয়েক আগে থেকেই সেই সমস্যা বেড়েছিল আরও। গত দু’সপ্তাহ টানা বন্ধ হয়ে যায় ডায়ালিসিস। হাসপাতালের যুক্তি, জলের ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সারাই করতে না পারাতেই এই বিপত্তি। প্রশ্ন উঠেছে, যথাযথ পরিকাঠামো না গড়েই কেন চালু হল এমন একটি সেন্টার।
কাঁচরাপাড়ার বছর ছত্রিশের বিশ্বনাথ দে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির বাসিন্দা কুড়ি বছরের রাকিবুল ইসলাম এবং পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার তিরিশ বছরের রামচন্দ্র দাস অধিকারী। তিন জনেরই দু’টি কিডনি খারাপ। আর্থিক সঙ্গতি নেই। গত সপ্তাহে ভবানীপুরের শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের সুপারের কাছে তাঁরা আবেদনে জানান, অবিলম্বে নিয়মিত ডায়ালিসিস চালু না -হলে চিকিৎসা বন্ধ করে মৃত্যুর জন্য দিন গুনতে বাধ্য হবেন তাঁরা। কারণ, টানা বেসরকারি জায়গায় ডায়ালিসিস সেই সঙ্গে ওষুধ আনুষঙ্গিক খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না তাঁদের পক্ষে।
রোগীদের একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ার পর ২৩ ডিসেম্বর সোমবার কোনও মতে প্লান্ট চালু হয়। তা কখনও চলছে, কখনও চলছে না। তা হলে শম্ভুনাথের প্রায় ৫০ জন ডায়ালিসিসের রোগী কোথায় যাবেন? এসএসকেএমে রেফার করা হলেও সেখানে রোগীর অস্বাভাবিক চাপ। ২০টির মধ্যে মাত্র ৫টি ডায়ালিসিসের যন্ত্র সচল। ফলে বাধ্য হয়ে কুড়িয়ে -কাঁচিয়ে টাকা জোগাড় করে বেসরকারি নার্সিংহোমে ছুটতে বাধ্য হয়েছেন শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে ভর্তি বহু রোগী। তাঁদের মধ্যে বিশ্বনাথ, রাকিবুল, রামচন্দ্রও রয়েছেন।
হাসপাতালের শয্যায় বসেই বিশ্বনাথবাবু বললেন, “২৫ দিন শম্ভুনাথে ভর্তি। দু’সপ্তাহ পাম্প খারাপ, তাই ডায়ালিসিস হল না। ডাক্তারবাবু এসএসকেএমে পাঠাল। সকাল ১০টায় গেলাম আর রাত এগারোটায় ডায়ালিসিস করল ! ওষুধপত্র মিলিয়ে চার হাজার টাকার মতো খরচ হল।” তাঁর আরও বক্তব্য, “আর সরকারি জায়গার ভরসা করতে পারিনি। শম্ভুনাথের এক ডাক্তারবাবুই একটি বেসরকারি জায়গার কথা বললেন। সেখানে ৪টি ডায়ালিসিস করেছি। প্রথমবার ১৪০০টাকা নিয়েছে। পরে প্রতিবার দিতে হয়েছে ১১০০ টাকা করে। কী করে চিকিৎসা চালাব?”
বেহুঁশ হয়ে শয্যায় পড়েছিলেন রাকিবুল। তাঁর এক আত্মীয় জানালেন, ২১ নভেম্বর থেকে টানা ১৫ দিন ভর্তি ছিলেন শম্ভুনাথে। তখন ডায়ালিসিস বন্ধ থাকায় তাঁর ৪টি ডায়ালিসিস হয়েছে এসএসকেএমে আর চারটি একটি নার্সিংহোমে। পরের দফায় ভর্তি হন ১৪ ডিসেম্বর। তার পর দু’বার নার্সিংহোমে ডায়ালিসিস করিয়েছেন। তাঁর কথায়, “শম্ভুনাথে এত দিনের মধ্যে মাত্র একবার ডায়ালিসিসের সুযোগ মিলেছিল। কিন্তু ১৫৭৪ টাকা দিতে বলল। আর বলল, জল কম তাই ঘণ্টার বেশি ডায়ালিসিস হবে না।”
রামচন্দ্রও জানালেন, এখনও পর্যন্ত তিনটি ডায়ালিসিস হয়েছে তাঁর। তিনটিই বাইরের নার্সিংহোমে। কারণ, শম্ভুনাথে ডায়ালিসিস বন্ধ ছিল। তিন বারের মধ্যে প্রথম বার ২০০০ টাকা পরের দু’বার ৯০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। তাঁর কথায়, “শম্ভুনাথে প্রথমবার ১৭০০ টাকা পরে ৫০০ টাকায় ডায়ালিসিস হয়ে যাওয়ার কথা। সেখানে কেন বাড়তি খরচ করতে হবে আমাদের? অসুস্থ অবস্থায় প্রচুর গাড়ি ভাড়া দিয়ে বার -বার অন্য হাসপাতালে যাওয়াও তো অসহনীয় ব্যাপার।”
নেফ্রোলজি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক রাজেন্দ্রনাথ পাণ্ডের যুক্তি, “১৩ বছরের পুরনো ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তো খারাপ হতেই পারে। নতুন প্লান্টের জন্য স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে।” কিন্তু কতদিন রোগীদের ভাবে হেনস্থা হতে হবে? রাজেন্দ্রনাথবাবু ক্ষুব্ধ গলায় বলেন, “কে ওঁদের বেসরকারি জায়গায় যেতে বলছে? ওঁরা নিজের ইচ্ছায় যাচ্ছেন। আমরা এসএসকেএম - পাঠাচ্ছি।” কিন্তু এসএসকেএম - তো ডেট মিলছে না বা সারাদিন বসিয়ে রাখা হচ্ছে। রাজেন্দ্রনাথবাবুর উত্তর, “সব বাজে অভিযোগ।”
অন্য দিকে, রোগীপক্ষ বলছে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ন্যাশনাল মেডিক্যালে ডায়ালিসিস হয় না। আর জি কর হাসপাতালে এক জন রোগীর তিন বারের বেশি ডায়ালিসিস করা হয় না। এই রকম অবস্থায় আশার আলো দেখিয়েছিল শম্ভুনাথ। সেখানেও এখন ডায়ালিসিসের রোগীদের চোখে শুধু অন্ধকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.