|
|
|
|
বিয়ের ৩২ বছর পর সন্তানলাভ দম্পতির
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
তিন দশকেরও বেশি অপেক্ষার পরে স্বপ্নপূরণ!
পুরুলিয়ার লক্ষ্মী মাহাতো এবং নীলকমল মাহাতো আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। আর তখনই কোল আলো করে এসেছে ছোট্ট নীলাদ্রি।
বিয়ের ৩২ বছর পর! বাবার বয়স এখন ৫৬ পেরিয়েছে, মায়ের বয়স ৪৭ ছুঁইছুঁই।
১৯৮১ সালে বিয়ে হয় লক্ষ্মীদেবী ও নীলকমলের। পাত্রীর বয়স ছিল ১৪, পাত্রের ২৪। বাঘমুন্ডিতে ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের কর্মী নীলকমলবাবু লাজুক হেসে জানান, বিয়ের পাঁচ বছর পরেও যখন সন্তান হল না, তখন থেকেই চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। দশ বছর ধরে ডাক্তারদের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন। “সবাই আমাদের দু’জনকে পরীক্ষা করে বলেছেন কোনও সমস্যা নেই। অথচ সন্তান হয়নি। বীতশ্রদ্ধ হয়ে সব চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।”
চলতি বছরের প্রথমে পাড়ার এক পরিচিতের কথায় কলকাতার ভবানীপুরে একটি ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকে যোগাযোগ করেন ওঁরা। সেখানে ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) প্রক্রিয়ায় প্রথম বারের চেষ্টাতেই মা হয়েছেন লক্ষ্মীদেবী। গত ৬ নভেম্বর সিজার করে ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। দেরিতে সন্তানের অভিভাবক হওয়ায় প্রথমে একটু চিন্তা হয়েছিল। ঠিকঠাক মানুষ করতে পারবেন তো? কিন্তু তার পর ও সব মাথা থেকে নামিয়ে ফেলেছেন। লক্ষ্মীদেবীর কথায়, “আমরা আমাদের দিক দিয়ে সবটুকু চেষ্টা করব। বাকিটা ভাগ্য।” |
|
ছোট্ট নীলাদ্রির সঙ্গে মাহাতো দম্পতি। ছবি: সুজিত মাহাতো। |
কোনও সমস্যা না-থাকলে এত দিন কেন সন্তান থেকে বঞ্চিত থাকলেন তাঁরা? যে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে লক্ষ্মী-নীলকমলের স্বপ্নপূরণ হয়েছে, সেই গৌতম খাস্তগীরের মতে, আধুনিকতম চিকিৎসা পদ্ধতি কতটা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার উপরে নির্ভর করে সাফল্য। ব্যাখ্যা করে গৌতমবাবু জানান, আধুনিক আইভিএফ অনেক বদলে গিয়েছে। উন্নত মানের ওষুধ দিয়ে ডিম্বাণু তৈরি করা হয়। বাছাই করা শুক্রাণুর সঙ্গে তার মিলন ঘটিয়ে একাধিক ভ্রূণ বানানো যায় ল্যাবরেটরিতে। তার পর এমব্রায়োস্কোপ যন্ত্রের মাধ্যমে সবচেয়ে ভাল ভ্রূণটিকে বেছে
মায়ের গর্ভে স্থাপন করা হয়। এতে ৬০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এখন ‘এন্ডোমেট্রিয়াল স্ক্র্যাচিং’ বলেও একটা পদ্ধতি চালু হয়েছে। যেখানে মায়ের জরায়ুর দেওয়াল একটু খুঁড়ে দিয়ে সেখানে ভ্রূণ স্থাপন করা হয়। এতে শিশু জন্মের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। এই ধরনের পদ্ধতিতে সাফল্যের হার বাড়তে বাধ্য।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার মনে করেন, মা-বাবার মানসিক অবস্থার উপর সন্তানের জন্ম অনেকটা নির্ভর করে। তাঁর কথায়, “অনেক সময় দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী যত দিন সন্তানের জন্য চিকিৎসা চালালেন তত দিন ভাল করে ডিম্বাণুই তৈরি হল না। কারণ তাঁরা খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। যখন তাঁরা সব চেষ্টা ছেড়ে দিলেন, তখন হয়তো সাফল্য এল।” স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ তরুণকুমার ঘোষের কথায়, “আচমকা বহু বছর পর কোনও শারীরিক পরিবর্তনের ফলেও সন্তান আসতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে, ২০-২৫ বছর আগে যে ধরনের চিকিৎসা হত এখন তা অনেক উন্নত হয়েছে। তাই এখনকার চিকিৎসায় ওই দম্পতি দ্রুত সন্তান পেয়েছেন।” |
|
|
|
|
|