কলকাতার ভূগর্ভস্থ জলে এ বার নতুন বিপদ। আর্সেনিকের পরে লোহা। মহানগরীর ৬১টি ওয়ার্ডের ভূগর্ভস্থ জলে লোহার পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু )-র বেঁধে দেওয়া সহনসীমার থেকে বেশি বলে রিপোর্ট দিয়েছে রাজ্য জল অনুসন্ধান বিভাগ (সুইড )। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ডে জলে লোহার পরিমাণ সহনমাত্রার তুলনায় ১৫ গুণেরও বেশি।
জলে আর্সেনিকের যে সহনসীমা হু বেঁধে দিয়েছে, তার মাত্রা হল লিটার প্রতি ০ .৩ মিলিগ্রাম। সুইড -এর রিপোর্ট বলছে, কলকাতার কোথাও কোথাও ভূগর্ভস্থ জলে লোহার মাত্রা পৌঁছে গিয়েছে লিটারে ৫ .৭৯ মিলিগ্রামে। অর্থাৎ, সহনসীমার ২০ গুণের কাছাকাছি। জল বিজ্ঞানীদের অনেকেরই দাবি, লোহার মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার অর্থ ওই এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে কালে কালে আর্সেনিকও বিপজ্জনক মাত্রায় পাওয়া যাবে।কলকাতার অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথের প্রাক্তন অধিকর্তা অরুণাভ মজুমদার বলেন, “আর্সেনিক ও লোহার ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক রয়েছে। পাথরের মধ্যে আর্সেনিক লোহার সঙ্গে মিশে আর্সেনোপাইরাইটিস হিসেবে থাকে। ভূগর্ভস্থ জলে বিপজ্জনক মাত্রার লোহা পাওয়ায় ওই এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের পরিমাণও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।” আর্সেনিক বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “পানীয় জলে উচ্চমাত্রায় লোহার অস্তিত্ব স্বীকার করার অর্থ দু’দিন বাদে সেখানে আর্সেনিক উঠে আসার প্রবল আশঙ্কা।”
শুধু আর্সেনিকের বিপদ বাড়াই নয়, শরীরের মধ্যে লোহা অত্যধিক পরিমাণে ঢুকলে তা লিভার, মস্তিষ্ক -সহ বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করে। এসএসকেএম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট গোপালকৃষ্ণ ঢালি মনে করেন, “জলের সঙ্গে যে পরিমাণ লোহা শরীরে প্রবেশ করতে পারে, তা মোটামুটি সহ্য হয়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে শরীরে মাত্রাতিরিক্ত লোহা ঢুকলে তা যকৃতের মতো গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলিতে জমতে শুরু করে। যকৃতের কাজ এর ফলে বন্ধ হয়ে যায়।” আর এক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট কল্যাণ ভৌমিক বলেন, “পানীয় জলের সঙ্গে অত্যধিক লোহা শরীরে ১০ -১৫ বছর ধরে প্রবেশ করলে তা সরাসরি যকৃতে আশ্রয় নেয়। এর ফলে সিরোসিস অব লিভার হতে পারে।”
সরকারি তরফে প্রায়ই বলা হয়, কলকাতার অধিকাংশ ওয়ার্ডে গার্ডেনরিচ বা পলতার জল পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। ফলে মানুষকে টিউবওয়েলের জল ব্যবহার করতে হয় না। কিন্তু প্রকৃত চিত্র কী?
এ শহরের বিভিন্ন জল -বিজ্ঞানীর বক্তব্য, কলকাতার ৯০ শতাংশ বহুতল বাড়িই ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করে। কারণ ওই ধরনের এক -একটি আবাসনে জল সরবরাহ করতে গেলে পুরসভার তরফ থেকে ‘ডেডিকেটেড’ পাইপলাইন পাতা দরকার। তা কোনও ক্ষেত্রেই করা হয়নি বলে পুরসভার এক সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও স্বীকার করেন শহরের মাটির তলার জলে লোহার পরিমাণ বেশি। তিনি বলেন, “পলতা ও গার্ডেনরিচ থেকে ভূস্তরের উপরের জল ফিল্টার করে দিচ্ছি। শহরের ১০০ শতাংশ বাড়িতেই এই জল দিতে চাই। সেটা এখনও সম্ভব হচ্ছে না। যত দিন তা না হচ্ছে, আমরা ভূগর্ভের জল নেওয়াও বন্ধ করতে পারছি না।” এর পাশাপাশি, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “জলের ব্যাপারটা পুরসভাই দেখে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের কিছু করার নেই। মানুষ অসুস্থ হলে হাসপাতালে যে চিকিৎসা দরকার, করা হয়। আমাদের এর বেশি কিছু করার নেই।”
|