শিল্প সন্ধানে নয়া কান্ডারি
মুখ বদলে লাভ কতটা, সংশয় শিল্পমহলে
নীতি না মন্ত্রী লগ্নি টানতে কার ভূমিকা বড় বৃহস্পতিবারের দুপুর উস্কে দিল প্রশ্নটা।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জায়গায় অমিত মিত্র আসতেই রাজ্যের শিল্পচিত্রে বদল নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে নবান্নের অলিন্দে। শিল্প দফতরে অমিতবাবুর অভিষেককে স্বাগত জানিয়েও শিল্পমহলের একটা বড় অংশ কিন্তু এখনই খুব আশার আলো দেখছে না। তাদের মতে, ব্যক্তি নয়, সরকার শিল্পের প্রতি কী নীতি নিয়ে চলছে, সেটাই বড় কথা। এবং সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্য সরকার শিল্পের প্রতি মনোভাব বদলের ইঙ্গিত দিলেও নীতির প্রশ্নে খামতি এখনও দূর হয়নি।
তবে শিল্পমহলেরই আর একটি অংশের বক্তব্য, সরকারি নীতিতে শিল্প-সহায়ক যা আছে, তার যথাযথ রূপায়ণও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ রাজ্যে নীতি ও তার বাস্তবায়নের মধ্যে ফারাক এখনও বিস্তর। মন্ত্রী বদলে সেই ফারাক কিছুটা ঘুটলেও ঘুচতে পারে। কিন্তু শিল্পমহলের এই অংশ একই সঙ্গে এ-ও বলছেন যে, কাঙ্ক্ষিত লগ্নি না-আসার যাবতীয় দায়ভার শিল্প দফতরের উপরে চাপিয়েও লাভ নেই। অন্যান্য দফতরও সমান দায়ী।
কারণ, একটা শিল্প প্রকল্পকে দিনের আলো দেখতে হলে একাধিক দফতরের ছাড়পত্র পাওয়ার পর্ব পার হতে হয়। ওই সব দফতরের ঢিলেমিতেও আটকে রয়েছে বহু প্রকল্প। লগ্নিকারীদের হয়রানি কমাতে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম এক জানলা ব্যবস্থা চালু করলেও সংশ্লিষ্ট অন্য দফতরগুলি সে ভাবে উদ্যোগী না হওয়ায় সেই ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ বলেও জানাচ্ছেন ওই শিল্পপতিরা।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্তের বক্তব্য, লগ্নিকারীদের কাছে রাজ্যের শিল্পনীতি ও তার ধারাবাহিক বাস্তবায়নই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা দেখেন, মুখে যা বলা হচ্ছে, কাজেও তা ঠিকমতো প্রতিফলন হচ্ছে কি না। তাঁর মতে, এ রাজ্যে এখনও প্রতিশ্রুতি বা নীতির সঙ্গে বাস্তবায়নের ফারাক রয়েছে। কী ভাবে ঘোষিত নীতির দ্রুত ও সঠিক রূপায়ণ করা যায়, সেটাই বেশি জরুরি।
তৃণমূল সরকারের নীতি নিয়েও শিল্পমহলের প্রশ্ন কিছু কম নেই। বিশেষ করে জমির প্রশ্নে। একে তো শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে বিমুখ রাজ্য। তার উপর লগ্নিকারীদের জমি কেনার ব্যাপারে সাহায্য করার কথা বলা হলেও রাজ্যের ভূমিকা আশানুরূপ নয় বলেই তাদের অভিযোগ। পাশাপাশি, প্রতি বছর কয়েকশো কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সাহায্য উপেক্ষা করেও রাজ্য যে ভাবে শহরাঞ্চলে জমি ঊর্ধ্বসীমা আইন না-তোলার ব্যাপারে অনড় তা নিয়েও অখুশি শিল্পমহল।
তবে নীতির উপরে জোর দিলেও অমিতবাবুর হাতে শিল্প দফতর যাওয়ায় শিল্পমহলের একটা বড় অংশ খুশি। তাঁদের মতে, আদতে অর্থনীতির শিক্ষক অমিতবাবু যে হেতু গত দু’দশক শিল্পজগতের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, সে হেতু তিনি শিল্প দফতরের দায়িত্ব পাওয়ায় রাজ্যের উপকারই হবে। স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া(সেল), গ্যাস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার(গেল) মতো বহু সংস্থার পরিচালন পর্ষদে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন অমিতবাবু। এর পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রকের উপদেষ্টা থাকাকালীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লুটিও) ভারতের স্বার্থরক্ষার লড়াইয়ে অমিতবাবুর ভূমিকার কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন শিল্পমহলের ওই অংশটি। জানাচ্ছেন, ১৯৯৪ সালে ফিকির সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব নেওয়ার পরে ওই বণিকসভার খোলনলচে পাল্টে দিয়েছিলেন তিনি। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) সমকক্ষ বণিকসভা হিসেবে ফিকি-কে প্রতিষ্ঠা করার পিছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য বলে মনে করেন ওই শিল্পকর্তারা।
গত আড়াই বছরে অর্থমন্ত্রী হিসেবে অমিতবাবুর ভূমিকাও শিল্পমহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাদের মতে, রাজ্যের আর্থিক ক্ষেত্রে সংস্কারের দিকটি খুলে দিতে পেরেছেন তিনি। ফলে এ বার শিল্প দফতরের মোড়ও তিনি ফেরাতে পারবেন বলেই আশাবাদী শিল্পমহলের অনেকে।
তবে সংশয় একটা থাকছে। অর্থ ও শিল্প দুই দফতর এক জনের পক্ষে সামলানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে। বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অমিত সেনের কথায়, “দু’টিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দফতর। দায়িত্বও বিশাল। তাই একই ব্যক্তির পক্ষে দুই দফতর চালানো কতটা সম্ভব, তা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকছেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.