|
|
|
|
স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তে জমিদান রঘুনাথপুরের আদিবাসীদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • রঘুনাথপুর |
স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তে জমিদানে এগিয়ে আসছেন রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বাসিন্দারা। মঙ্গলবার মেট্যালসহর গ্রামে উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তে ছয় ডেসিমেল জমি দিয়েছিলেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা তিন ভাই। তার দু’দিন পরে বৃহস্পতিবার ফের জমিদান করলেন স্থানীয় দিগারডি গ্রামের কয়েকজন আদিবাসী মানুষ। নিজেদের গ্রামে উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তে ছয় ডেসিমিল জমিদান করলেন তাঁরা।
স্বাস্থ্য দফতর থেকে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করার জন্য টাকা বরাদ্দ হলেও এত দিন জমি না পাওয়ার জন্য মানবাজার ১ ব্লকে সেই কাজ থমকে গিয়েছিল। শেষে ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক ও কর্মীরা গ্রামে গ্রামে জমি চেয়ে আবেদন জানান। তাতে সাড়া গিয়ে কয়েকটি গ্রামের মানুষ এগিয়ে আসেন।
তেমনই এগিয়ে এসেছেন দিগারডি গ্রামের ওই আদিবাসী পরিবারগুলি। তাঁদের বক্তব্য, “আমাদের গ্রাম থেকে কাছের বিলতোড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। সেখানে রোগী নিয়ে যেতে খুব সমস্যা হয়। স্বাস্থ্য দফতর গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তে চেয়ে জমির সমস্যায় পড়েছে শুনে সকলে মিলে আলোচনা করে জমি দেব বলে স্থির করেছিলাম। জমি দিতে পেরে ভাল লাগছে।”.
বস্তুত দিগারডি গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র হলে উপকার পাবেন ওই গ্রাম-সহ পাশের লছমনপুর, মহারাজনগর, লালপুর, সেনেড়া, শিকরাট্যাড় ও জরকা গ্রামের বাসিন্দারাও। বৃহস্পতিবার রঘুনাথপুর ১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের নামে জমির রেজিস্ট্রেশন করেন দিগারডি গ্রামের আনন্দ হাঁসদা, খোকন মাঝি, আহ্লাদি মাঝি, দুগাই মাঝি, তারা মাঝি, ভূতনাথ সোরেন, নুনি মাঝি, টিপিন মুর্মু, নবীন মাঝি, সূর্য সোরেন, মদন সোরেন ও নাথুরাম টুডু। তাঁদের মধ্যে আনন্দবাবু পেশায় একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। বাকিরা সকলেই দিনমজুর।
মঙ্গলবার জমিদান করেন মেট্যালসহর গ্রামের যুধিষ্ঠির মাজি, কিরীটী মাজি ও ধনঞ্জয় মাজি। তাঁদের কথায়, “সাপের ছোবলে গ্রামে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসার সুযোগটুকুও তাঁরা পাননি। তাই গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তে স্বাস্থ্য দফতর জমি খুঁজছে শুনে ওই পারিবারিক জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করিনি।”
রঘুনাথপুর ১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক লিধুরাম হাঁসদা বলেন, “আমাদের কর্মীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে জমি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। তাতে চাকুরিজীবী থেকে দিনমজুররাও নিঃস্বার্থে যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাতে আমরা অভিভূত।” রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতি কৃষ্ণ মাহাতো বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আমরাও উদ্যোগী হয়ে জমি দেওয়ার জন্য মানুষের কাছে আবেদন করেছিলাম। মানুষ আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়েছেন এটা যথেষ্ট ইতিবাচক ঘটনা।”.
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই ব্লক এলাকায় আটটি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তে অর্থ বরাদ্দ হয়। প্রথম দিকে জমির অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। তবে ইতিমধ্যেই ছ’টির ক্ষেত্রে বাসিন্দারা জমি দিয়েছেন। প্রথমে জমি পাওয়া যায় বড়বাগান গ্রামে। তারপরে জমি মিলেছে ডুমরাকুড়ি, গোপীনাথপুর, মধুতটি ও মেট্যাল সহর গ্রামে। ওই তালিকায় এ দিন সর্বশেষ সংযোজন খাজুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের দিগারডি।
লিধুরামবাবু জানিয়েছেন, মেট্যাল সহর গ্রামে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ভেঙে পড়ায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হত। সেখানেই চলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কাজ। স্বাভাবিক ভাবেই পরিষেবা দিতে সমস্যায় পড়তে হত স্বাস্থ্যকর্মীদের। দিগারডি গ্রামে দু’দশক আগে ভেঙে পড়েছিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘর। ফলে গ্রামে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। |
|
|
|
|
|