বাড়ি আছে, ইন্দিরা আবাসের টাকায় তাই মোটর বাইক, গয়না
রিবদের বাড়ি তৈরির প্রকল্প ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’য় এত দিন রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠত। এ বার ওই প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা বাড়ির তৈরির কাজে ব্যয় না করে সোনা-মোটরবাইক কেনার, কোথাও বা সেই টাকা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখার অভিযোগ উঠল উপভোক্তাদের বিরুদ্ধে। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ১ ব্লকে প্রশাসনিক তদন্তে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিডিও সুরজিৎ ভর বলেন, “ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে টাকা পেয়ে খরচ না করায় সম্প্রতি ১৪ জন উপভোক্তার নামে চন্দ্রকোনা থানায় বিশ্বাসভঙ্গ (৪০৬), প্রতারণার (৪২০) অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলেন, “বিডিও ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে টাকা অপব্যবহারের কথা জানানোয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মেলায় ওই উপভোক্তাদের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
প্রায় এক বছর আগে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে টাকা পেয়েছেন বিউটি সিংহ। চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের ডিঙাপুরের বিউটি দেবী কিন্তু ওই টাকা বাড়ির জন্য খরচ করেননি। কেন করেননি? বিউটিদেবী হাসতে হাসতে প্রতিবেদককে বলেন, “বাড়ি তো একটা আছে। তাই অন্য কাজে খরচ করে ফেলেছি।” নিচনার প্রতিমা রায়ও বলেন, “বাড়ি আছে বলে টাকা অন্য প্রয়োজনে খরচ করেছি।” সিতাশোলের উত্তরা রায় আবার সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “যা বলার বিডিও সাহেবকে বলেছি।”
আগে থেকেই বাড়ি আছে। ইন্দিরা আবাসের টাকা তাই
অন্য প্রয়োজনে খরচ করেছেন নিচনার প্রতিমা রায়। —নিজস্ব চিত্র।
প্রকল্পের টাকা ‘অপব্যবহারের’ অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের পালা। চন্দ্রকোনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের শম্ভু নায়েক বলেন, “ওই উপভোক্তারা বাম আমলে টাকা পেয়েছিলেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তদন্ত শুরু করি।” ঘটনার দায় নিতে নারাজ ওই পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সিপিএমের হরেকৃষ্ণ নায়েক। তিনি বলেন, “প্রাপকদের নিয়ম মেনে টাকা দিয়েছিলাম। কেউ সেই টাকা খরচ না করলে আমাদের কী করার আছে!”
চন্দ্রকোনা ১ ব্লক সূত্রে খবর, ২০১১-২০১২ ও ২০১২-২০১৩ আর্থিক বছরে ওই ব্লকের একাধিক পঞ্চায়েতের শতাধিক বাসিন্দাকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল, যাঁদের মাথার উপর ছাদ নেই, তাঁদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া। এ জন্য দুই কিস্তিতে মেলে ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা (এখন টাকার পরিমাণ বেড়েছে)। এ জন্য অবশ্যই বিপিএল তালিকায় নাম থাকতে হয়। প্রথম কিস্তির টাকা খরচ করার পর তাঁদের ইউসি (খরচের শংসাপত্র) জমা দিতে হয়। তবেই মেলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা।
কী ভাবে বিষয়টি নজরে এড়িয়ে গেল? ব্লক সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ সমস্ত টাকা খরচের জন্য জেলা প্রশাসনের কর্তাদের চাপে রেখেছেন। এরপরই নিজের এলাকায় বিভিন্ন প্রকল্প ও উন্নয়নের সামগ্রিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে উদ্যোগী হন বিডিও সুরজিৎ ভড়। তখনই ইন্দিরা আবাস যোজনায় টাকার অপব্যবহারের বিষয়টি নজরে আসে। দেখা যায়, যথা সময়ে প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পর ব্লকের জাড়া, মংরুল, লক্ষীপুর-সহ একাধিক পঞ্চায়েতের প্রায় ১৪ জন উপভোক্তা প্রথম কিস্তির টাকা কোনও টাকাই খরচ করেননি। বিডিও তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পেই টাকা খরচের আর্জি জানান। সময়ও দেন। অভিযোগ, তারপরও কেউ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। ক্ষুব্ধ বিডিও এমন আচরণের কারণ দর্শাতে বলেন। তারপর জেলাশাসকের নির্দেশে গত শুক্রবার রাতে ব্লকের ওই সব পঞ্চায়েতের মোট ১৪ জন উপভোক্তার নামে থানায় মামলা করেন সুরজিৎবাবু।
সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পেই বহু টাকা বাস্তবে খরচ হয় না বলে অভিযোগ থাকেই। প্রশ্ন ওঠে নজরদারি নিয়েও। প্রশাসনেরই একটি সূত্রের খবর, অভিযোগ পেলে তো বটেই, তা ছাড়াও এ বার থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পেই যথাযথ নজরদারি শুরু করা হচ্ছে। কোনও অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, তদন্তের স্বার্থে ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের টাকা অপব্যবহারের কারা অভিযুক্ত সেই তালিকা জানাতে চায়নি প্রশাসন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.