পূর্ত দফতরের জমি দখল করে দোকান
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • চুঁচুড়া |
জি টি রোডের ধারে পূর্ত দফতরের জমিতে শতাধিক দোকানঘর গড়ে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ছাপোষা মানুষজন দোকান পাওয়ার আশায় টাকা দিয়ে বসে আছেন। তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
হুগলির চাঁপদানিতে জি এস কটন মিলের গা ঘেঁষে ১২৬টি দোকান গড়েছে ঠিকাদার সংস্থা। শ’খানেক ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কোনও দোকান এক লাখ দশ, কোনওটা বা এক লাখ তিরিশ হাজারে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে পূর্ত দফতর। জেলাশাসক, চন্দননগর মহকুমাশাসক ও চাঁপদানি পুরপ্রধানের নজরে আনা হয়েছে বিষয়টি। কিন্তু পুরসভার ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, দোকানঘর করতে পুরসভার অনুমতি লাগে। প্রয়োজন ট্রেড লাইলেন্সও। চাঁপদানির তৃণমূল পুরপ্রধান সুরেশ মিশ্র মেনে নেন, “যে জমিতে দোকান নির্মিত হয়েছে, তার কোনও আইনি বৈধ্যতা নেই। তাই সেগুলির জন্য পুরসভা ট্রেড লাইসেন্স দেয়নি।” বেআইনি নির্মাণ বন্ধে ব্যবস্থা নিলেন না কেন? পুরপ্রধানের যুক্তি, “গরিব মানুষ দোকানঘর করেছে বলে পুরসভা বাধা দেয়নি। রাজ্য জুড়েই তো রাস্তা দখল করে দোকান আছে।”
|
এই দোকান ঘরগুলি নিয়েই বিতর্ক। ছবি: তাপস ঘোষ। |
যাঁরা অত দোকান তৈরি করতে পারেন, তাঁরা গরিব? আর, গরিব হলেই কি বেআইনি কাজ সঙ্গত? চাঁপদানির আইএফটিইউ নেতা শেখ সোহরাবের অভিযোগ, “আসলে কাউন্সিলরদের একাংশই ঠিকাদার লাগিয়ে চড়া দামে ওই সব দোকান বিক্রি করছেন। পুরসভার কয়েক জন কর্মীও একাধিক দোকান নিয়েছেন।” পুরপ্রধান অবশ্য তাঁর বা তৃণমূল কাউন্সিলরদের জড়িত থাকার প্রসঙ্গ অস্বীকার করে বলেন, “আইন যদি সবার জন্য এক হয়, তা হলে ওই সব দোকানঘরও সরিয়ে ফেলা হোক। এই নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও চলছে।”
দোকান বিক্রির অন্যতম ঠিকাদার জিতেন্দ্র প্রসাদ দোকানগুলির মধ্যেই একটিতে অফিস খুলেছেন। তাঁর দাবি, “ওই জমি পূর্ত দফতরের নয়, জি এস কটন মিলের।” তবে মিল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, জমিটি তাঁদের নয়। পূর্ত দফতরের প্রধান বাস্তুকার পার্থপ্রতিম সিংহ বলেন, “জি টি রোড লাগোয়া যে জমিতে ৮ ফুট লম্বা ৫ ফুট চওড়া একশোরও বেশি দোকান হয়েছে, সেগুলি আমাদের।” তবে তাঁদের ভূমিকাতেও প্রশাসনের প্রশ্ন রয়েছে।
জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন, “জমিটি পূর্ত দফতরের, বেআইনি নির্মাণের বিষয়টিও তাদেরই দেখতে হবে।” পার্থপ্রতিমবাবুর আশ্বাস, “দোকান ভাঙার জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আমরা জমির দখল নেব।” দোকান কেনার জন্য যাঁরা (তালিকায় দুই পুরকর্মীও রয়েছেন) টাকা দিয়ে বসে আছেন, তাঁদের কী হবে? জেলার এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, “কেউ নির্দিষ্ট অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।” বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে যে আমজনতার করের টাকা খরচ হবে, সেই অপচয়ের দায় কার সে প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। |