শিক্ষার অধিকার আইনের অন্যতম শর্ত বিদ্যালয়ের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা। যাতে খুদে খুদে পড়ুয়ারা স্কুলে এসে নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করতে পারে। অথচ কালনা মহকুমার বেশিরভাগ স্কুলেই অগ্নি নিবার্পণ ব্যবস্থা নেই। মহকুমা প্রশাসনের অবশ্য দাবি, স্কুলে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা।
কালনা ১ ও ২ ব্লক, পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লক এবং মন্তেশ্বর মিলিয়ে প্রায় সাতশো প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে কালনা মহকুমায়। পড়ুয়া প্রায় সত্তর হাজারের কাছাকাছি। এছাড়া ১৪০টি উচ্চ বিদ্যালয়, বহু অঙ্গনওয়াড়ি, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। বেশিরভাগ স্কুলেই কাঠের জ্বালানি বা গ্যাসে রান্না মিড-ডে মিল রান্না হয়। রান্নাঘরে রাখা দাহ্য পদার্থ থেকে যে কোনও মুহুর্তে আগুন লেগে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। সম্প্রতি কালনার ধাত্রীগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে একটি ঘরে আগুন লেগে যায়। আতঙ্কে ছাত্রছাত্রীরা বাইরে বেরিয়ে পড়ে। দমকল আসার আগেই অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে মহকুমার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও। কারণ, বেশির ভাগ ভবনই একতলা, অনেক দ্বিতল স্কুলে আবার ওঠা-নামার আলাদা সিঁড়ি নেই। ফলে আগুন লেগে গেলে পড়ুয়াদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই সমস্যার। শিক্ষকদের দাবি, বছর খানেক আগে রাজ্য ও জেলা পর্যায়ে দুর্যোগ মোকাবিলা শিবির হয়। সেখানে স্কুলে আগুন লাগলে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা শেখানো হয় শিক্ষকদের। জেলায় প্রতি মহকুমার শিক্ষক প্রতিনিধির শিবির যোগ দেন। সেখানে দমকলের আধিকারিকেরা শিক্ষক প্রতিনিধিদের দেখান, কীভাবে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করতে হয় এবং আতঙ্ক না ছড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের বের করে আনতে হয়। |
কিন্তু বছর খানেক আগে প্রশিক্ষণ শিবির হয়ে গেলেও কালনা মহকুমার প্রায় কোনও স্কুলেই এখনও অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার পৌঁছয়নি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে শিক্ষকেরাও। ওই শিবিরে জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কালনা ১ ব্লকের সিমলন অন্নপূর্ণা কালী বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক দেবনাথ শিকদার বলেন, “বন্যা, ছাদ ভেঙে পড়ার মতোই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে শিবিরে অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলার বিষয়টি শেখানো হয়েছিল। তবে তারপরে আর এগোয়নি। স্কুলে এখনও অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার আসেনি।” দেবনাথবাবুর দাবি, স্কুলে যে পরিবেশে মিড ডে মিল রান্না হয় সেখানে অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার খুবই জরুরি। অথচ তার কোনও বন্দোবস্তোই নেই। দুর্যোগ মোকাবিলা শিবিরে রাজ্য পর্যায়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন কালনা পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রিয়ব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “চক্রের আওতাধীন স্কুলগুলিকে নানা প্রশিক্ষণ শিবিরে আগুন লাগলে কী ভাবে মোকাবিলা করতে হয় তা বোঝানো হয়েছে। মহকুমার কোনও কোনও চক্রে বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে শিবিরও হয়েছে। সম্প্রতি জানতে পেরেছি, ব্লক প্রশাসনের তরফে স্কুলগুলিতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা চলছে।” শিক্ষার অধিকার আইন নিয়ে গত দেড় বছর ধরে বহু প্রশিক্ষণ শিবিরে পরামর্শ দিয়েছেন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের রামপুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক অরূপ চৌধুরী। তিনি জানান, শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৫-এ স্পষ্ট বলা রয়েছে, বিদ্যালয়কে নিরাপদে রাখতে হবে। ফলে যে সমস্ত স্কুলে মিড-ডে মিল ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি।”
শুধু কালনা মহকুমা নয়, জেলার কোন কোন চক্রে সরকারি উদ্যোগে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র লাগানো হয়েছে, তা জানাতে পারেনি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশিস নাগের কথায়, “জেলার কিছু কিছু প্রাথমিক স্কুল নিজেদের উদ্যোগে স্কুলে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরি করেছে। তবে সরকারি উদ্যোগে কোথাও এই ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে এমন খবর এখনও আমাদের কাছে পৌঁছয়নি। শুনেছি ব্লক পর্যায় থেকে এর ব্যবস্থা করা হবে।” তিনি জানান, বর্তমানে আপার প্রাইমারি থেকে উচ্চ বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে কোনও স্কুল উন্নীত হলে সেই স্কুলের দমকলের শংসাপত্র রয়েছে কি না, তা দেখা ব্যধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে।
কালনা মহকুমা প্রশাসন অবশ্য বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট আশাবদী। মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি জানান, মহকুমার পাঁচ ব্লকেই টেন্ডার ডাকা শুরু হয়ে গিয়েছে। টেন্ডারে যোগদানকারীদের সিলিন্ডার পরীক্ষা করে দেখবে দমকল। প্রক্রিয়াটি এ বছরের মধ্যে শেষ করা যাবে বলেও তাঁর আশা। |