চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে চারমাসের একটি শিশুকন্যার মৃত্যুর অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল চত্বরে। বুধবার সাড়ে ১২টা নাগাদ হাসপাতালের শিশুবিভাগে চিকিৎসাধীন ওই শিশুটির মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শিশুর নাম তানবেরা খাতুন। তার বাড়ি ইটাহার থানার কামারডাঙা এলাকায়। শিশুটির মৃত্যুর পর তার পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা চিকিৎসায় গাফিলতি, অভিযুক্ত চিকিৎসক ও নার্সদের শাস্তির দাবিতে শিশুবিভাগ ও হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিক্ষোভ চলাকালীন শিশুবিভাগের দরজার একটি কাঁচ ভেঙে দেওয়া ছাড়াও নার্সদের একাধিক চেয়ার ও টেবিল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা হয়। নার্সদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বচসা ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। দুপুর ২ টা নাগাদ রায়গঞ্জ থানার আইসি দীনেশ প্রামানিক-সহ পুলিশ অফিসারেরা হাসপাতালে গিয়ে মৃত শিশুর পরিবারের লোকজনকে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার কমল সরকার চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি সময়মত সব প্রশ্নের উত্তর দেব।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাসবিহারী দত্ত অবশ্য বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। প্রয়োজনে অভিযোগ তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, এদিন সকালে বাড়িতে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তানবেরার। পরিবারের লোকজন তাকে ইটাহার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে রেফার করেন। তার পরে তাকে রায়গঞ্জে ভর্তি করানো হয়। তানবেরার বাবা তথা মালদহের কালিয়াচকের একটি মিশনারি স্কুলের শিক্ষক আজারুল ইসলামের অভিযোগ, “মেয়েকে শিশুবিভাগে ভর্তি করার পর নার্সদের বারবার চিকিৎসকদের খবর দিতে বলি। কিন্তু নার্সরা খবর দেওয়া দূরের কথা মেয়েকে কোনও ওষুধও দেয়নি। প্রায় আড়াইঘন্টা বিনা চিকিৎসায় পড়ে থেকে চোখে সামনে মেয়েটা মারা গেল। আমরা পুলিশে অভিযোগ জানব।” তানবেরার মা হনুফা বিবির জানান, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার এমন হাল আজ চোখে দেখলাম। ধারদেনা করে নার্সিংহোমে গেলে হয়ত মেয়েটা বেঁচে যেত। তবে রাত অবধি মৃত শিশুর পরিবার কোনও অভিযোগ জমা দেয়নি বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শিশু বিভাগের নার্সরা চিকিৎসকের রাউন্ডে আসার সময় না হওয়ায় কল বুক পাঠিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে ডাকার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু কল বুক চিকিৎসককে পাঠানো হয়নি বলে অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার কমলবাবুর বক্তব্য, “আমরা কী করব বা কী করেছি তা কী সংবাদমাধ্যমকে বলতে হবে। আপনারা কি সব ঠিক করে দেবেন নাকি?” |