|
|
|
|
দু’বছর পরে সভা পশ্চিমে, আসবেন বুদ্ধ |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
মাঝে দু’বছরের ব্যবধান। ফের পশ্চিম মেদিনীপুরে সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিপিএম। নতুন বছরের গোড়াতেই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও স্থির হয়েছে ওই সভায় উপস্থিত থাকবেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “জনসভা হবে। তবে, সভার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি।”
গত দু’বছরে লালগড়ের জেলায় একটিও জনসভা করেনি সিপিএম। এমনকী, পঞ্চায়েত-পুরভোটের প্রচারেও জনসভা করার ঝুঁকি এড়িয়েছে। তৃণমূল যেখানে মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিমদের মতো নেতা-মন্ত্রীদের প্রচারে এনে রাজনৈতিক উত্তাপ চড়িয়েছে, সেখানে সিপিএমের প্রচার ছিল নিরুত্তাপ। তবে এ বার লোকসভার লড়াই। ওই নির্বাচনকে ‘পাখির চোখ’ ধরে এগোচ্ছে জেলা সিপিএম। ইতিমধ্যে ঘুঁটি সাজানো শুরু হয়েছে। বুদ্ধবাবুর সভা থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে লোকসভার প্রচার শুরু হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কেন দু’বছর পর ফের জনসভার সিদ্ধান্ত? দীপকবাবুর জবাব, “সর্বত্র কী চলছে, তা সকলে দেখছেন। যাবতীয় প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। এই সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষেরও মোহভঙ্গ হচ্ছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকের মতে, “যে ভয়ঙ্কর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, নীতিগত প্রশ্নে দ্বিচারিতা দেখা যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আরও জোরালো প্রতিবাদ হওয়া দরকার। ভয়-ভীতি-আড়ষ্টতা কাটিয়ে এখনই ব্যাপক মানুষের পথে নামা প্রয়োজন।” দলীয় সূত্রে খবর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা নিয়ে ইতিমধ্যে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কী ভাবে সভা সফল হবে, কী ভাবে প্রচার চলবে, আলোচনায় এ সবই উঠে আসে। |
|
২০১২-র ফেব্রুয়ারিতে মেদিনীপুর কলেজ মাঠে বুদ্ধদেব। —ফাইল চিত্র। |
সভার দিন অবশ্য এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। সিপিএমের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ১৯ জানুয়ারি, ২৬ জানুয়ারি এবং ২ ফেব্রুয়ারি, পরপর তিনটি রবিবার সভার দিনের জন্য আলোচনায় উঠে এসেছে। জানুয়ারির গোড়ায় এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সভাস্থল অবশ্য স্থির হয়েছে। মেদিনীপুর কলেজ মাঠ। ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, জেলায় সিপিএমের সর্বশেষ সভাটিও এই কলেজ মাঠেই হয়েছিল। সে দিনও প্রধান বক্তা ছিলেন বুদ্ধবাবু। ‘লালদুর্গ’ পশ্চিম মেদিনীপুরে সবুজের বীজ বোনা শুরু ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জেলায় একের এর এক এলাকায় জমি হারাতে শুরু করে সিপিএম। রমরমিয়ে প্রভাব বাড়ে তৃণমূলের। রাজ্যে পালাবদলের পরে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সবেতেই তৃণমূলের দাপট অব্যাহত। পঞ্চায়েত নির্বাচনে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে সিপিএম। জেলা পরিষদের ৬৭টি আসনের মধ্যে মাত্র ২টি সিপিএমের দখলে আসে। সদ্যসমাপ্ত পুরভোটেও তৃণমূলের জয়ের ধারা অব্যাহত। ঝাড়গ্রাম পুরসভায় বামফ্রন্ট মাত্র একটি আসনে জিতেছে। জয়ী প্রার্থী আবার সিপিএমের নন, সিপিআইয়ের। আর মেদিনীপুর পুরসভায় বামজোট পেয়েছে ৫টি আসন। পরিস্থিতি দেখে সিপিএমের জেলা কমিটির এক সদস্য মানছেন, “যাঁরা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন, বিধানসভায় তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন, তাঁদের সকলে এখনও ফিরে আসেননি। আমরা ফিরিয়ে আনতে পারিনি।”
আড়াই বছর হল রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। তারপরেও এমন পরিস্থিতি কেন? এটা কি সাংগঠনিক দুর্বলতা? সিপিএম নেতারা ঘনিষ্ঠ মহলে মেনে নিচ্ছেন, দলের কর্মী-সমর্থকেরা সে ভাবে আর সক্রিয় নেই। তবে এ ক্ষেত্রে সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, সন্ত্রাস-প্রতিকূলতায় সাংগঠনিক কাজকর্মের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে, পরিস্থিতি তত বদলাচ্ছে। সে জন্যই ফের বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে দল। ৯ ফেব্রুয়ারি সিপিএমের বিগ্রেড সমাবেশ রয়েছে। তার আগে মেদিনীপুরের সভা ভরানোই এখন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের প্রধান লক্ষ্য। |
|
|
|
|
|