|
|
|
|
|
প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের টোটকা অশ্বিনকে |
পুরনো কোকাবুরা বলকে
ঠিক মতো গ্রিপ করতে হবে
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় |
|
কী অসাধারণ একটা টেস্ট ম্যাচ হল ওয়ান্ডারার্সে! দু’টো দলেরই সে জন্য স্পেশ্যাল অভিনন্দন প্রাপ্য। কারণ আরও একবার এ রকম একটা টেস্ট বুঝিয়ে দিল এটাই ক্রিকেটের সেরা ফর্ম্যাট। এ ধরনের উত্তেজক ক্রিকেট ম্যাচগুলো এই খেলাটার পক্ষে সোনার মতো দামি। ম্যাচের শেষ ওভার পর্যন্ত দু’টো দলের যে কেউ জিততে পারে— এটা প্রায় বিরল অভিজ্ঞতা। ম্যাচের প্রথম চার দিন প্রাধান্য দেখানোর জন্য ভারতকে যেমন অভিনন্দন, তেমনই দক্ষিণ আফ্রিকাকে শেষ দিন তারা যে লড়াইটা করেছে তার জন্য। ওরাও দেখিয়ে দিয়েছে, বিশ্বের এক নম্বর দল অত সহজে ছাড়ার পাত্র নয়।
ওয়ান্ডারার্সের পঞ্চম দিনের উইকেটে খেলা এবি ডে’ভিলিয়ার্স আর ফাফ দু’প্লেসির, বিশেষ করে ফাফের ইনিংসটা সর্বোচ্চ মানের। এ রকম একটা সেঞ্চুরি ক্রিকেটারের খেলোয়াড়জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আমি নিশ্চিত, এই সিরিজের শুরুর সময়ের তুলনায় ফাফ এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। ওর দক্ষতা আছে, কিন্তু নিজের ভেতর বিশ্বাসটা এমন একটা জিনিস যেটা এ রকম পারফরম্যান্সের মাধ্যমেই প্লেয়ারের মধ্যে জন্মায়।
তা সত্ত্বেও ডারবানে সিরিজের শেষ টেস্টে যে কেউ জিততে পারে। কিংসমিডে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট রেকর্ড ভাল নয়। দু’হাজার আটের পর ওরা আর এখানে জেতেনি। যদিও আমার কাছে ইতিহাসের গুরুত্ব খুব কম, কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকানদের মনের ভেতর হয়তো এই মাঠে শেষ পাঁচ বছর কোনও টেস্ট জিততে না পারার ব্যাপারটা থাকবে। দশ দিন আগেই এখানে একদিনের ম্যাচে বল ঘুরেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকাকে এ বার টেস্টে নিশ্চিত হতে হবে, কিংসমিডের উইকেটে বল যেন না ঘোরে। কারণ আগামী পাঁচ দিন খেলা যত গড়াবে, বল তত ঘুরতে থাকলে ভারতের এই ম্যাচ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম বার টেস্ট সিরিজ জেতার বিরাট সুযোগ থাকবে। |
ডারবানের প্র্যাকটিসে। |
যদিও অশ্বিন ওয়ান্ডারার্সে ভাল বোলিং করেনি। বিদেশে ওর রেকর্ড ভারতের পক্ষে দুশ্চিন্তার। কিন্তু বিদেশের উইকেটও যদি টার্ন করে, সেক্ষেত্রে অশ্বিন দারুণ কার্যকর বোলার হয়ে উঠতেই পারে। অতীতে অনেক ভারতীয় স্পিনার কোকাবুরা বল নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। এই বল যত পুরনো আর নরম হয়, আমাদের স্পিনারদের পক্ষে ঠিক মতো গ্রিপ করা ততই কঠিন। অশ্বিনকে এই সমস্যা সমাধানের রাস্তা বের করতে হবে। অশ্বিন বল করার সময় গ্রেম সোয়ানের মতো অত বেশি নিজের শরীর ব্যবহার করে না। অশ্বিন আদতে ফিঙ্গার স্পিনার। আর কোকাবুরা বলের সিম স্পিনারের পক্ষে অতটা ভাল ভাবে গ্রিপ করার উপযোগী নয়। তবে অশ্বিনকে এটাও মনে রাখতে হবে, বিদেশের মাঠে ভারতকে টেস্ট জিততে হলে, ম্যাচের চতুর্থ ও পঞ্চম দিন ওকে উইকেট তুলতে হবে। স্পিনারদের প্রতিকূল বিদেশের পিচ হলেও। বিদেশ সফরে ভারতীয় পেসারদের সমানই অশ্বিনের ভূমিকা থাকা জরুরি। আশা করি ও প্রথম টেস্টের চেয়ে ডারবানে ভাল পারফরম্যান্স করবে।
ভারত নিশ্চয়ই প্রথম টেস্টের দল অপরিবর্তিত রেখে ডারবানে নামবে। ধোনির কাছে গুরুত্বপূর্ণ, ওর তিন পেসারের এই ম্যাচে তাজা থাকাটা। কারণ সিরিজ সমান-সমান অবস্থায় শেষ টেস্টে নামার সময় চাপটা সব সময় হোম টিমের উপর থাকে।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল ডারবান পিচের দিকে নিশ্চয়ই সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। উইকেটে ঘাস রাখতে চাইবে। কারণ ফাস্ট বোলিংই ওদের শক্তি। মর্নি মর্কেল যতই ফিট হয়ে ওঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করুক, মনে হয় না ও এই টেস্ট খেলতে পারবে। কোনও অধিনায়কই এ রকম গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট ম্যাচে আধাফিট বোলার নিয়ে নামার ঝুঁকি নেবে না। সে জন্য এই ম্যাচে গ্রেম স্মিথের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সঠিক বোলিং কম্বিনেশন বাছা। ডেল স্টেইন ওয়ান্ডারার্সে প্রচুর ওভার করেছে। মাত্র তিন দিন পরেই ওর পক্ষে আবার একটা পাঁচ দিনের ম্যাচে টানা ফাস্ট বোলিং করা শুধু কঠিন নয়, ভীষণ কঠিন। ওয়ান্ডারার্সে দেখার পর স্মিথ কি ইমরান তাহিরকে আবার খেলাবে? ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা এই লেগ স্পিনারকে ডারবানেও দেখলে অবশ্য খুশিই হবে। নাকি স্মিথ পুরো পেস আক্রমণ নিয়ে নামবে এই টেস্টে? উইকেটে একটু বেশি ঘাস থাকলে হয়তো স্মিথের সমস্যা সমাধানে সাহায্য হতে পারে।
আর একটা নাম স্মিথের খুব আন্তরিকতার সঙ্গে ভাবা উচিত। কুইন্টন ডি’কক। সত্যি বলতে কী, ওর যা ব্যাটিং-ক্লাস আর যে রকম দুর্ধর্ষ ফর্মে ওয়ান ডে সিরিজ খেলেছে তার পর ওকে বসিয়ে রেখে রিজার্ভ বেঞ্চ গরম করার কোনও মানে হয় না দক্ষিণ আফ্রিকার। ছেলেটার খেলাটা এত স্বাভাবিক-স্বতস্ফূর্ত যে, ওকে দেখে আমার তরুণ বয়সের গিলক্রিস্টের কথা মনে পড়ে। টেস্টে সাত নম্বরে ডি’কক থাকলে এবি-র ঘাড় থেকে উইকেটকিপিংয়ের চাপটাও চলে যায়।
এবি ওদের দলের ব্যাটিং লাইন-আপে খুব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বিশেষ করে জাক কালিস ডারবানের পরেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে যাচ্ছে বলে। দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচকদের উচিত, টেস্টে এবি-কে শুধু ব্যাটিংয়েই মনোনিবেশ করার সুযোগ দেওয়া। ওয়ান ডে-র থেকে টেস্ট কিন্তু অনেক বেশি পরিশ্রমের খেলা। |
|
|
|
|
|