প্রায় আড়াই যুগ আগে রাশিয়ায় রফতানি ব্যবসায় সাফল্য ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনার হাতছানি ফের উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের কাছে।
ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন (আইটিএ) চাইছে রাশিয়ায় ভারতীয় চায়ের বাজার পুনর্দখল করতে। তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চায়ের বৈচিত্র্যের সম্ভার তুলে ধরতে আগামী বছর সে দেশে এক প্রতিনিধিদল নিয়ে যেতে চায় তারা। সেখানকার নানা শহরে করতে চায় রোড-শো। রাশিয়ার চা রসিকদের পেয়ালায় অন্যান্য ভারতীয় চায়ের সঙ্গে জায়গা করে নেওয়ার আকর্ষণ তাই ডুয়ার্স-তরাইয়ের চা শিল্পের কাছেও। তাঁদের রসনায় তৃপ্তি জোগাতে পারলে ফের ওই বাজারে পা রাখার সুযোগ পাবে ডুয়ার্স-তরাইয়ের চা। বছর পঁচিশ আগে যে- বাজারে রীতিমতো কদর ছিল তাদের।
আইটিএ-র চেয়ারম্যান অরুণ সিংহ জানিয়েছেন, টি বোর্ডের সহযোগিতায় মে মাসে আইটিএ প্রতিনিধিদল রাশিয়া যাবে। তিনি বলেন, “ভারতীয় চা শিল্পের কাছে রাশিয়া একটি সম্ভাবনাময় বাজার। ঠিক মতো এগোতে পারলে রাশিয়ায় চা রফতানি ফের বাড়াতে পারব।” আইটিএ সার্বিক ভাবে ভারতীয় চাকেই সেখানে তুলে ধরবে, যেখানে গুরুত্ব পাবে উত্তরবঙ্গের সম্ভাবনার কথাও। তাঁর কথায়, “উত্তরবঙ্গে এখন ভাল মা |
নের চা তৈরি হচ্ছে। রফতানি বাজারের শর্ত মেটাতে পারলে সেই চা-ও রাশিয়ায় ব্যবসা বাড়াতে পারে।”
চা শিল্পের হিসেবে, গত বছর উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স ও তরাইয়ে যথাক্রমে ১৬.১ কোটি কেজি ও ১১.৫ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারই এখন এই চায়ের মূল বাজার। অন্য দিকে, রাশিয়ায় এখন বছরে গড়ে ৩-৩.৫ কোটি কেজি ভারতীয় চা রফতানি হয়। যার প্রায় ৬০% সিটিসি। এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাশিয়া ভারত থেকে কিনেছে প্রায় ৩.১ কোটি কেজি চা। গুণমানের পরীক্ষা উতরোলে বাজার বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে উত্তরবঙ্গের চায়ের সামনেও।
আইটিএ-র যুগ্ম সচিব সুজিত পাত্র বলেন, “রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম চা আমদানিকারী দেশ। বছরে বিভিন্ন দেশ থেকে তারা প্রায় ১৮ কোটি কেজি চা কেনে। আমরা পুরনো সম্পর্কের বন্ধন ফেরাতে চাই।” তাই মস্কোর পাশাপাশি রাশিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরেও রোড-শো করতে চাইছে আইটিএ।
উত্তরবঙ্গের সেই সম্ভাবনার কথা মানছেন রফতানি ব্যবসায় নিযুক্ত অন্যতম সংস্থা জে ভি গোকলের সিইও ভরত আর্যও। তিনি বলেন, “রাশিয়ায় ওই চায়ের বাজারের সম্ভাবনা রয়েছে।” তবে তাঁর বক্তব্য, সেই পরীক্ষায় উতরোনো অসম্ভব না-হলেও খুব একটা সহজও নয়। এ জন্য ডুয়ার্স-তরাইয়ের চা শিল্পকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে। তবে রাশিয়ায় তাদের হারানো বাজার ফিরে পেতে হলে গোড়ার দিকে অসম বা অন্য কোনও চায়ের সঙ্গে মিশিয়েই এ রাজ্যের চা সে দেশে পাঠাতে হবে বলে মনে করেন তিনি। তাঁদের হিসেবে, ১৯৮৮-’৯১ সালের মধ্যে রাশিয়ায় ভারতীয় চায়ের ১০-১২% (বছরে এক কোটি কেজি-র বেশি) যেত ডুয়ার্স-তরাই থেকে।
গোড়ার দিকে অবশ্য রাশিয়ার বাজারে আধিপত্য ছিল অর্থোডক্স চায়ের। কিন্তু পরে চাহিদা ও জোগানের ফারাকই তৈরি করে দেয় সিটিসি চা আমদানির পথ। প্রথমে অসমের সিটিসি চায়ের চাহিদা বেশি থাকলেও পরে ধীরে ধীরে ডুয়ার্স-তরাইয়ের চা-ও সেখানে জায়গা করে নেয়। আর পূর্বতন সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের জেরে সার্বিক ভাবে ভারত থেকে রাশিয়া বছরে ১০-১২ কোটি কেজি চা কিনত। কিন্তু এরপর সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে যাওয়ায় বেসরকারি ভাবে চা কেনা শুরু করে রাশিয়া। আধিপত্য বাড়ে দক্ষিণ ভারতের চায়ের। সে সময়ে নানা কারণে ভারতীয় চায়ের, বিশেষত সিটিসি চায়ের মান পড়তে থাকে। বাজার হারায় ডুয়ার্স-তরাই-ও। অন্য দিকে, চড়া দামের জন্য ভারতীয় অর্থোডক্সের চায়ের বাজারও পড়তে থাকে। পরবর্তী কালে সেখানে অর্থোডক্স ও সিটিসি চায়ের বাজার যথাক্রমে দখল করে শ্রীলঙ্কা ও কেনিয়া। এ বার নতুন করে বাজার পুনর্দখলে ঝাঁপাতে চাইছে আইটিএ। আর সেই সঙ্গে সুযোগের নতুন দরজা খোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ডুয়ার্স-তরাইয়ের চা শিল্পের সামনেও। |