পঞ্চায়েতের উন্নয়ন সংক্রান্ত সভায় ‘বহিরাগত’দের উপস্থিতি রুখতে উদ্যোগী হল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “পঞ্চায়েত স্তরের সভাগুলিতে নির্বাচিত মহিলা প্রধান এবং সভাপতিদের স্বামী-সহ বহিরাগত লোকজন থাকছেন বলে আমরা জেনেছি। এখন থেকে পঞ্চায়েতে উন্নয়নমূলক যাবতীয় সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিদের জন্য পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।” জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, “ওই পরিচয়পত্র নিয়ে সভাগুলিতে জনপ্রতিনিধিরা হাজির থাকতে পারবেন। বাইরে কেউ সভায় থাকবেন না।” মঙ্গলবার ওই নির্দেশ জেলার সব পঞ্চায়েত এবং সভাধিপতির কাছে এসে পৌঁছয়।
সম্প্রতি গঙ্গারামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির ঘরে সম্প্রতি রাস্তা উন্নয়ন-সহ বেশ কিছু গ্রামোন্নয়ণ প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে সভা হয়। তাতে সভাপতি, সংশ্লিষ্ট বিডিও, পঞ্চায়েতের কর্ম সহায়ক-সহ জনপ্রতিনিধিরা ছাড়াও বহিরাগত বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ। একইভাবে হরিরামপুর পঞ্চায়েতেও উন্নয়ন সংক্রান্ত সভায় গ্রাম স্তরের নেতারা আগাগোড়া উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ। এতে সভা পরিচালনা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন ব্লকের অফিসারেরা। আবার কোথাও মহিলা প্রধানের স্বামীও পঞ্চায়েতের বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, ঠিকাদার সংস্থা নির্বাচনে তাঁরা হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ আসছে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বহিরাগতরা তৃণমূলের বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায়ের অভিযোগ, “হরিরামপুর, গঙ্গারামপুর, কুমারগঞ্জ ব্লকগুলিতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে পঞ্চায়েতের সভায় বহিরাগত তৃণমূল নেতারা উপস্থিত থাকছেন। এটা কখনও হতেই পারে না।” প্রশাসন সূত্রে খবর, বিষয়টি শক্ত হাতে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিতেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর এই নির্দেশ জারি করেছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির কোনও সভায় সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও পঞ্চায়েত অফিসার ছাড়া বহিরাগত কেউ থাকতে পারবেন না। নির্দেশ অমান্য করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলার ৮টি পঞ্চায়েত সমিতিই তৃণমূলের দখলে। ৬৫টি পঞ্চায়েতের অধিকাংশতেও তৃণমূল ক্ষমতায়। মঙ্গলবার ওই নির্দেশ পৌঁছতেই তৃণমূলের একাংশের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জেলা পরিষদের তৃণমূলের দলনেতা শুভাশিস পালের বক্তব্য, “অনেক ক্ষেত্রেই মহিলা প্রধানদের স্বামীরা বিগত বছরগুলিতে প্রধানের দায়িত্ব সামলেছেন। ফলে তাঁদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” তাঁর অভিযোগ, “প্রশাসন ওই নির্দেশ জারি করে ঠিক করেনি।”
তবে প্রশাসনের নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধী কংগ্রেস এবং আরএসপি। হিলি ব্লকে পাঁচটি পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র দু’টি বামেদের দখলে। হিলির আরএসপি জোনাল সম্পাদক রথীন সরকার বলেন, “দেরিতে হলেও প্রশাসন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় বলেন, “প্রশাসনের ওই কড়া পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই।” |