নারায়ণ দে • আলিপুরদুয়ার |
সিকিয়াঝোরায় বনবিভাগের তৈরি লকগেট ভেঙেছে চার বছর আগে। নৌকা চলাচলের মত জল না থাকায় ভাঁটা পড়েছে পর্যটকদের আনাগোনায়। এক সময় বন দফতরের উদ্যোগে স্বনির্ভর দল গড়ে জঙ্গলের কাঠ কাটা ছেড়ে সিকিয়াঝোরা ইকোস্পট গড়ে তোলেন শ’খানেক মহিলা। জঙ্গলের ভিতরে পাখি দেখার সঙ্গে নৌকাবিহার করতেন পর্যটকরা। এখন দেখভালের অভাবে ধুঁকছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পশ্চিম দমনপুর রেঞ্জের পর্যটন স্থল।
আলিপুরদুয়ার ২ বিডিও সজল তামাঙ্গ বলেন, “পর্যটন দফতর থেকে সিকিয়াঝোরা ইকোস্পটের লকগেট তৈরি, রাস্তা নির্মাণ-সহ নানা কাজের জন্য ৮৯ লক্ষ টাকা এসেছে। দরপত্র ডাকা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত কাজ শুরু হবে।” বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপক্ষেত্র অধিকর্তা অপূর্ব সেন বলেন, “সিকিয়াঝোরায় কিছু কাজের প্রয়োজন রয়েছে। কিছু দিন আগেই ইকোস্পটটি সংস্কারে দিল্লিতে পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন হলে আমরাও সংস্কারের কাজ করা হবে।” |
বন্ধ পড়ে ইকোস্পট। —নিজস্ব চিত্র। |
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা জানান, ২০০১ সালে জঙ্গলে ঘেরা এলাকাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে স্পটটি তৈরি করা হয়। ১০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ১০০ মহিলা ওই ইকোস্পটের সঙ্গে যুক্ত। একসময় এদের অনেকেই জঙ্গলে কাঠ আনতে যেতেন। স্পটটি গড়ে ওঠায় তাঁরা জঙ্গলে যাওয়া ছেড়ে দেন। স্পটটি কার্যত বন্ধের মুখে দাঁড়ানোয় অনেকেই ফের জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কাটা শুরু করে দিয়েছেন। এক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী রমা দে বলেন, “সিকিয়াঝোরায় মাটির বাঁধ দিয়ে আমারা জল আটকে তাতে পর্যটকদের নৌকায় ভ্রমণ করাতাম। একসময় প্রচুর ভিড় হত। ২০০৫ সালে বন দফতর থেকে সিকিয়াঝোরার জল আটকানোর জন্য লকগেট বানিয়ে দেয়। ২০০৮ সালে বর্ষায় তা ভেঙে যায়। তার পরেও আমারা খরচ করে প্রতিবছর মাটির বাঁধ দিচ্ছিলাম। কিন্তু খরচ বেশি হচ্ছিল।” তিনি জানান, গত দুই বছর থেকে লোক আসা অনেক কমে যায়। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি থেকে এখানে একটি রেস্তোরাঁ তৈরি করলেও তা চালুই করা হয়নি। এ বছর শুনছি, পর্যটন দফতর সংস্কারের টাকা মঞ্জুর করেছে। তবে এই মরসুমে কাজ শুরু হলেও জল আটাকানো যাবে না। তাই দ্রুত মাটির বাঁধ না দিলে নৌকা ভ্রমণ করানো নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বীণাপানি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী রজবালা বর্মন বলেন, “বছর দুয়েক ধরে ভিড় নেই। অনেকেই এসে ঘুরে যাচ্ছেন। দলের অনেক মহিলা জ্বালানী কাঠ আনতে জঙ্গলে ঢুকছেন।”
সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মানিক কুজুর বলেন, “১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে মাটির বাঁধের কাজ শুরুর চেষ্টা চলেছে।” এলাকার বাসিন্দা সুশীল বর্মন, নলেন বর্মনরা জানান, সারা বছর দিনমজুরি করলেও শীতের মরসুমে সিকিয়াঝোরায় স্বনির্ভর গোষ্ঠী মহিলাদের মাধ্যমে নৌকা চালাতাম। আয় ভালই হত। ঝোরায় জল না থাকায় নৌকাগুলি পড়ে নষ্ট হচ্ছে। |