নিজস্ব সংবাদদাতা • দার্জিলিং |
পৃথক গোর্খাল্যান্ডের কথা মুখে না এনে পাহাড়ে উন্নয়নের কথাতেই জোর দিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে জিটিএ চিফ নির্বাচিত হওয়ার পরে গুরুঙ্গ বলেন, “আমাদের মনে হয়েছে, দার্জিলিঙের বাসিন্দারা মোর্চার মূল দাবির থেকেও উন্নয়ন নিয়ে বেশি উৎসাহী। সকলেই উন্নয়ন এবং কাজ চান। সে কারণেই জিটিএ চিফের পদে ফিরেছি।” গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে এই দিন তিনি কোনও প্রশ্নেরই সরাসরি উত্তর দিতে চাননি। বরং প্রতি প্রশ্নের উত্তরে উন্নয়নের প্রসঙ্গই টেনে এনেছেন। তিনি বলেন, “উন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য। আগের কাজগুলি শেষ করা হবে। নতুন প্রকল্প গঠন করা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পর্যটনে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।” |
জিটিএ-র বৈঠকে বিমল গুরুঙ্গ। ছবি: রবিন রাই। |
গত শুক্রবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকেই জিটিএ চিফের পদে ফেরার কথা ঘোষণা করেছিলেন গুরুঙ্গ। মঙ্গলবার দার্জিলিঙের ভানু ভবনে জিটিএ-র বৈঠকে তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে চিফ নির্বাচন করা হয়। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর কলকাতার রাজভবনে শপথ নেবেন গুরুঙ্গ। সেক্ষেত্রে এই প্রথম পাহাড়ের কোনও স্বশাসিত কর্তৃপক্ষের প্রধান রাজভবনে শপথ নেবেন। মঙ্গলবার জিটিএ সভা শেষ হওয়ার পরে দলের সাধারণ সম্পাদক-সহ অন্য নেতাদের নিয়ে গুরুঙ্গ কলকাতায় গিয়েছেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বুধবার দার্জিলিঙের বিধায়ক ত্রিলোক দেওয়ান সহ ৮ জিটিএ সদস্যও কলকাতায় যাচ্ছেন বলে মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে।
গুরুঙ্গ প্রথমবার জিটিএ চিফ হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন দার্জিলিঙে। মোর্চার অন্দরের খবর, এ বার তিনি রাজভবনে শপথ নিলে জিটিএ চিফ হিসেবে গুরুঙ্গের পদমর্যাদার গুরুত্ব পাহাড় ও সমতলের সকলেই বুঝতে পারবেন। যদিও পাহাড়ে মোর্চা বিরোধী দল সিপিআরএম ও গোর্খা লিগের কটাক্ষ, জিটিএ যে এ বার থেকে প্রতি পদক্ষেপে রাজ্যের কথা শুনেই চলবে, গুরুঙ্গের কলকাতায় গিয়ে শপথ নেওয়া থেকে তারই ইঙ্গিত মিলেছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূল এবং মোর্চার মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিলই। সেই সম্পর্কেরই একটি নতুন অধ্যায় শুরু হল। লোকসভা নির্বাচনে এরা এক সঙ্গেই লড়বে বলে আমাদের ধারণা। তবে জিটিএ-র সাফল্য কামনা করি।”
পৃথক তেলঙ্গানা গঠনের কথা ঘোষণার পরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে দার্জিলিঙে আন্দোলন শুরু করে মোর্চা। গত ৩০ জুলাই জিটিএ চিফের পদ থেকে ইস্তফা দেন গুরুঙ্গ। সে সময় গুরুঙ্গ জানান, পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যই জিটিএ প্রধানের পদ ছাড়লেন তিনি। ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চিফের পদটি ফাঁকাই ছিল। এরপরে বিনয় তামাঙ্গকে চিফ নির্বাচিত করা হলেও, তিনি জেলবন্দি থাকায় শপথ নিতে পারেননি। ২২ অক্টোবর রমেশ আলেকে অস্থায়ী চিফ নিয়োগ করা হয়। তামাঙ্গ বলেন, “এতদিন জিটিএ-র স্থায়ী চিফ না থাকায় কাজকর্মে সমস্যা হয়েছে। গত ৬ মাস ধরে জিটিএ খুঁড়িয়ে চলেছে। আজ জিটিএ-র সব সদস্যরা গুরুঙ্গকে চিফ নির্বাচিত করেছেন। তিনি দায়িত্ব নিতে রাজি হওয়ায় আমরা খুশি।” গুরুঙ্গের সিদ্ধান্তে খুশি তৃণমূলও। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী গোড়া থেকেই উন্নয়নের উপরেই জোর দিয়েছেন। মোর্চা সে কথাতে গুরুত্ব দেওয়ায় আমরা খুশি।”
|