শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির দাপাদাপির বিরোধিতায় বারবার মুখ খুলেছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। সওয়াল করেছেন ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে রাজনীতিমুক্ত করার পক্ষেও। এ বার তিনি বললেন, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি থাকলেও তাকে আলোচনা, বিতর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
রাজনীতির নামে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্যে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি দীর্ঘদিন ধরেই জর্জরিত। হিংসা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে রেহাই দিতে রাজনীতিমুক্ত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে বরাবরই সওয়াল করেছেন নারায়ণন। অনেক প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকাও তাঁর সঙ্গে একমত।
যদিও রাজ্য সরকার সেই পথে হাঁটেনি। মাস ছয়েক বন্ধ রাখার পরে ফের ছাত্রভোট শুরু করার নির্দেশিকা জারি করেছে তারা। রাজনীতিমুক্ত ছাত্র সংসদের কথা ভাবা হচ্ছে না। উল্টে কখনও কখনও একে ‘সোনার পাথরবাটি’ বলে কটাক্ষও করেছেন মন্ত্রীদের কেউ কেউ। এই প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আচার্য-রাজ্যপাল নারায়ণন বলেন, “ক্যাম্পাস-রাজনীতিকে আলোচনা ও বিতর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। কোনও ভাবেই তা যেন বিশৃঙ্খলার চেহারা না-নেয়।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি।
প্রাক্তন ছাত্রনেতারা অবশ্য রাজ্যপালের মন্তব্যকে কার্যত স্বাগত জানিয়েছেন। প্রাক্তন ছাত্রনেতা এবং কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অরুণাভ ঘোষ মনে করেন, ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক পড়াশোনা ফিরিয়ে আনা দরকার। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে না-গিয়ে ছাত্রদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনাটা ফিরে এলে গোলমালের প্রবণতা কমবে। প্রাক্তন নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, শুধু বিতর্ক-আলোচনা হলেই হবে না। বহিরাগতেরা যাতে ক্যাম্পাসে গোলমাল করতে না-পারে, সেটা দেখতে হবে পড়ুয়াদেরই। “তা হলে নিজের থেকেই কলেজে গোলমাল কমবে,” মন্তব্য অসীমবাবুর।
এ দিনের অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলা বজায় রাখার উপরে বিশেষ ভাবে জোর দেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, “আত্মশৃঙ্খলা বজায় রাখা খুবই জরুরি। এর উপরে জোর দেওয়া দরকার।” অনুষ্ঠানের পরে প্রশ্ন করা হয়, তিনি ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখার উপরে জোর দিলেও যাদবপুরেই মাস তিনেক আগে ৫২ ঘণ্টা পড়ুয়াদের হাতে ঘেরাও ছিলেন কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া কী? রাজ্যপাল বলেন, “সেই ঘটনার পরে নতুন উপাচার্য এসেছেন। তার পরে আর তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি!” |