দিন চারেক আগেই কাজের অগ্রগতির নিরিখে মন্ত্রীদের ‘রিপোর্ট কার্ড’ তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই ভাবে ‘আন্তর্জেলা প্রতিযোগিতায়’ প্রথম স্থান দিয়েছিলেন নদিয়াকে। এ বার ভাল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জেলা থেকে রাজ্যস্তর পর্যন্ত ‘উৎকর্ষ পুরস্কার’ চালু করছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
ঠিক হয়েছে, রাজ্যে প্রশাসনের বিভিন্ন অংশকে উৎকৃষ্ট কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মোট ৫০টি পুরস্কার দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই তার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন দফতর বা তাদের অধীনস্থ শাখায় ‘অসাধারণ’ ও ‘অনুকরণীয়’ কাজের মাপকাঠি বাছতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন বিভাগীয় আধিকারিকেরা। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “কোনও দফতরের গতবাঁধা কাজও পুরস্কারের আওতায় আসতে পারে। যদি দেখা যায়, ওই দফতর বা তার শাখা কার্যালয়ের দৈনন্দিন কাজে নতুনত্ব এসেছে এবং এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন, তবে তা-ও পুরস্কার পাওয়ার দাবি রাখবে।” ওই প্রশাসনিক কর্তা জানান, জেলা বা রাজ্য স্তরের কোনও বিভাগীয় শাখার কাজ যদি মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে, তবে সেই দফতরও পুরস্কারের জন্য আর্জি জানিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারবে।
বিভিন্ন দফতরের একাধিক অফিসার মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে মমতা যে ভাবে সরকারি অফিসে কর্মসংস্কৃতি বদলে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছেন, প্রশাসনিক বৃত্তে উৎকর্ষতার পুরস্কার চালুর সিদ্ধান্ত তারই সর্বশেষ ধাপ। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন বৈঠকে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প শেষ করার পরামর্শ দিয়েছেন। কথা দিয়েও কাজ শেষ না করতে বকাঝকাও করেছেন সরকারি অফিসারদের। সেই তালিকায় যেমন সচিবরা আছেন, তেমনই রয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।” কর্মীরা যাতে নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে আসেন, তার জন্য সব সরকারি ভবনে বায়োমেট্রিক কার্ড চালু করছে রাজ্য।
কিন্তু গোটা রাজ্য থেকে কী ভাবে যোগ্যদের বাছাই করবে সরকার? নবান্নের এক মুখপাত্র বলেন, ব্লক, মহকুমা, জেলা ও রাজ্য স্তরের যে কোনও সরকারি বিভাগ বা কর্মী উৎকর্ষতার পুরস্কারের দাবিদার হতে পারেন। তাই জেলা স্তরের সরকারি কার্যালয়গুলিকে কাজের তথ্য সম্বলিত মনোনয়ন পাঠাতে হবে জেলাশাসকের কাছে। জেলাশাসকেরা পাঠাবেন তিন জন বিভাগীয় কমিশনারকে নিয়ে গঠিত বাছাই কমিটির কাছে। এর পরে ওই কমিটিই জেলাস্তরের প্রতিযোগীদের যোগ্যতা বিচার করে সুপারিশ পাঠাবেন রাজ্যস্তরে সচিব পর্যায়ের এক কমিটির কাছে।
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরও তার কর্মীদের ভাল কাজের নমুনা সম্বলিত মনোনয়ন পাঠাবে রাজ্যের কর্মী ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরে। ওই মনোনয়নগুলিও চূড়ান্ত বাছাইয়ের জন্য যাবে সচিব পর্যায়ের কমিটির কাছে। উৎকৃষ্ট কাজের পুরস্কার হিসেবে কী দেবে সরকার? তা কি বেতন-বৃদ্ধি, পদোন্নতি, শংসাপত্র, নাকি নগদ পুরস্কার? এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, “এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু ভাল কাজের জন্য পুরস্কার দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।” |