ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য এত দিন সরকারি কর্মীদের ‘স্পেশ্যাল ক্যাজুয়াল লিভ’ বা ‘বিশেষ ছুটি’ মঞ্জুর করা হত। এ বার তা তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন রাজ্য প্রশাসনের নয়া সদর নবান্নের কর্তারা।
রাজ্যে নতুন সরকার এসেই ঘোষণা করেছিল, বন্ধ বা সাধারণ ধর্মঘটের দিনে অফিসে না-এলে কর্মীদের বেতন কাটা যাবে। সেই অনুযায়ী কয়েকটি বন্ধের দিনে কর্মস্থলে গরহাজির থাকায় কিছু কর্মীর বেতন কেটেও নেওয়া হয়।
তার পরে এক ঘোষণায় জানানো হয়, প্রশাসনের নতুন সদর নবান্নে বিক্ষোভ-মিছিল, সভা করা যাবে না। এ বার ইউনিয়নের সম্মেলনে যোগদানের জন্য বিশেষ ছুটি তুলে নেওয়ায় সরকার-বিরোধী সব কর্মী সংগঠনই প্রতিবাদে সরব হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি কর্মীদের সংগঠন করার অধিকার আছে বলেই তার সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য বিশেষ ছুটি মঞ্জুরের ব্যবস্থা ছিল। সেটা তুলে দেওয়া হল কেন?
শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর জবাব, “সরকারি কর্মীরা মানুষের কাজ করতে দায়বদ্ধ। সেটা তাঁরা যাতে ভাল ভাবে করেন, আমাদের সরকার সে-দিকেই বেশি নজর রাখে।” তিনি জানান, সরকারি কর্মীদের সার্ভিস রুল অনুযায়ী তাঁদের যে-সব সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য, সরকার সেগুলো নিশ্চয়ই তাঁদের দেবে। সাংগঠনিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য বিশেষ ছুটি পাওয়ার অধিকার সরকারি কর্মীদের সার্ভিস রুলে নেই। অর্থাৎ আইনত ওই অধিকার তাঁদের প্রাপ্য নয়।
ইউনিয়নের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য কর্মীদের বিশেষ ছুটি মঞ্জুর করার রেওয়াজ শুরু হয় বাম আমলে। সরকারে এসে তৃণমূলও সেই রেওয়াজ পরিবর্তন করেনি। তাই ২০১২ সালের জানুয়ারিতে মহাজাতি সদনে তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য কর্মীদের তিন দিন স্পেশ্যাল ক্যাজুয়াল লিভ মঞ্জুর করেছিল সরকার। সরকারি কর্মীদের অন্য একটি সংগঠন নবপর্যায় তাদের রাজ্য সম্মেলনের প্রতিনিধিদের জন্য ২০১১ সালের ডিসেম্বরে তিন দিন এবং সর্বভারতীয় সম্মেলনের জন্য ২০১২ সালের নভেম্বরে চার দিন ওই বিশেষ ছুটি পায়। কিন্তু এ বারেই প্রথম সেই বিশেষ ছুটি দেওয়ার বন্দোবস্ত বাতিল করে দিল রাজ্য।
এবং এই সিদ্ধান্তের প্রথম ‘বলি’ তাঁরাই হলেন বলে অভিযোগ করেছেন সরকার-বিরোধী বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতারা। আগামী ২৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে সিপিএম প্রভাবিত কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্মেলন হবে। সেই উপলক্ষে কর্মীদের বিশেষ ছুটির আর্জি সরকার খারিজ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। একই ভাবে এ দিন নবপর্যায়ের রাজ্য সম্মেলন শুরু হয়েছে কোচবিহারে। চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সমীররঞ্জন মজুমদার জানান, ওই ছুটি দেওয়া যাবে না বলে তাঁদের লিখিত ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই ব্যক্তিগত ভাবে নিজেদের ছুটি নিয়েই তাঁরা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। আইএনটিইউসি প্রভাবিত কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের নেতা শ্যামল মিত্র জানান, ২৬ থেকে ২৮ ডিসেম্বরের সম্মেলনের জন্য তাঁরাও বিশেষ ছুটি পাবেন না বলে মৌখিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
সরকারের এই পদক্ষেপকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূলের কর্মী ইউনিয়ন। সংগঠনের নেতা মঙ্গলময় ঘোষের কথায়, “শনি-রবিবার বা অন্য ছুটির দিনে সরকারি কর্মী সংগঠনগুলির সম্মেলন করা উচিত। আগামী বছর আমরাও তা-ই করব।” |