আবাসন
গৌতমের কোটার শেষ দুই তালিকা বাতিল
শেষ তালিকা আগেই বাতিল হয়েছিল। তার আগেরটাও এ বার রদ করা হল। অর্থাৎ, ‘চেয়ারম্যান কোটা’য় আবাসনের ফ্ল্যাট বণ্টনের জন্য বাম জমানায় তৈরি শেষ দু’টো তালিকাই নাকচ করে দিল তৃণমূল জমানার রাজ্য আবাসন পর্ষদ।
এবং এর ফলে আগের তালিকার লোকজনের ফ্ল্যাটপ্রাপ্তি যেমন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, তেমন বিষয়টি ঘিরে ফের আইনি জটিলতা সৃষ্টির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, আগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে, যার রায় সম্পূর্ণত সরকারের অনুকূলে যায়নি। এমতাবস্থায় নয়া সিদ্ধান্তের জেরও আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের একাংশের।
বামফ্রন্ট আমলে আবাসন পর্ষদ এবং হিডকো-র কিছু ফ্ল্যাট ও জমি ‘চেয়ারম্যান কোটা’ মারফত বিলি-বণ্টনের ক্ষমতা আবাসনমন্ত্রীর হাতে ছিল, কেননা পদাধিকারবলে আবাসনমন্ত্রীই দুই সংস্থার চেয়ারম্যান। কিন্তু তদানীন্তন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে সেই ক্ষমতার ‘অপব্যবহারের’ অভিযোগ ওঠে। তৎকালীন বিরোধীরা দাবি করেন, চেয়ারম্যান কোটায় জমি-ফ্ল্যাট বণ্টনে একাধিক অনিয়ম হয়েছে। শেষমেশ আড়াই বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার শাসনক্ষমতায় এসে আবাসনের ফ্ল্যাট-জমি বণ্টনের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান কোটা-ই বিলোপ করে দেয়। শুধু তা-ই নয়, দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে নতুন সরকার তখন স্থির করে, পূর্বতন আমলে তৈরি চেয়ারম্যান কোটার সর্বশেষ তালিকাটি বাতিল করা হবে, ঘটনাচক্রে যেটি প্রকাশ করা হয়েছিল বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার ঠিক আগের দিন।
সেই মতো নতুন সরকারের প্রথম আবাসনমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেন, ২০১০-এর ১ অক্টোবরের আগে চেয়ারম্যান কোটায় ফ্ল্যাট প্রাপকদের যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তা বহাল থাকবে। পরবর্তী তালিকা বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। এক ধাপ এগিয়ে নতুন আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এ বার আগেরটিও রদ করে দিয়েছেন। দফতরের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত হল, সর্বশেষ তালিকা তো বটেই, চেয়ারম্যান কোটায় ফ্ল্যাট বণ্টনের জন্য ২০১০-এর ১ অক্টোবরের আগে তৈরি হওয়া তালিকাও কার্যকর হবে না। “তৃণমূল সরকারের নীতি হল, সরকারি ফ্ল্যাট বা জমি বণ্টনের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান্স কোটা বলেই কিছু থাকবে না। আগের মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সরকারি নীতির পরিপন্থী ছিল।” মন্তব্য অরূপবাবুর।
যাঁর আমলের তালিকা নিয়ে এত বিতর্ক, বাম জমানার সেই আবাসনমন্ত্রী গৌতমবাবু অবশ্য অনিয়মের যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। সোমবার তিনি বলেন, “আবাসন পর্ষদের জন্মলগ্ন থেকে চেয়ারম্যান্স কোটায় ফ্ল্যাট বিলি হয়েছে। আমি বেআইনি বা নতুন কিছু করিনি।” চেয়ারম্যান কোটায় কারা কারা ফ্ল্যাট পাবেন, তা দস্তুরমতো সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঠিক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী। আর নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণার ঠিক আগের দিন তালিকা প্রকাশ প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, বিষয়টি একেবারেই কাকতলীয়। “নির্বাচন কমিশন নিশ্চয়ই আমাকে জিজ্ঞাসা করে ভোটের সূচি ঘোষণা করেনি! এটা অবৈধ হলে তো ওই দিন যত সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সবই বাতিল করা উচিত!” প্রতিক্রিয়া গৌতমবাবুর।
এ দিকে পুরনো তালিকার যে সব প্রাপক ইতিমধ্যে ফ্ল্যাটের টাকা জমা দিয়েছেন, নতুন মন্ত্রীর নতুন সিদ্ধান্তের ফলে তাঁরা আদৌ ফ্ল্যাট পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সরকারি ঘোষণা ঘিরে মামলা-মোকদ্দমার মেঘও ঘনাচ্ছে।
কী রকম?
প্রশাসনিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, চেয়ারম্যান কোটায় আবাসনের ফ্ল্যাট বিলির জন্য ২০১০-এর ১ অক্টোবরের পরে ১৪৮ জনের নামের তালিকা বানিয়েছিল গৌতম দেবের নেতৃত্বাধীন আবাসন পর্ষদ। তার মধ্যে ২০ জন ফ্ল্যাট কেনার টাকা জমা দিয়েছিলেন। মমতা সরকার ওই তালিকাই বাতিল করে দেওয়ায় হাইকোর্টে মামলা হয়। আদালত কিন্তু তালিকাটি পুরোপুরি নাকচ করার পক্ষপাতী নয়। বরং সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, যাঁরা ইতিমধ্যে টাকা জমা দিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের ফ্ল্যাট দিতে হবে।
আর হাইকোর্টের রায়ের নজির টেনে পুরনো তালিকার ফ্ল্যাট প্রাপকেরাও যদি আদালতের দ্বারস্থ হন, তা হলে আশ্চর্যের কিছু নেই বলে সরকারেরই একাংশ মনে করছে। গৌতমবাবুও বলেন, “এটা নিয়ে যে মামলা হবে, তাতে আমার কোনও সন্দেহ নেই।” পুরনো তালিকার (২০১০-এর ১ অক্টোবরের আগে তৈরি) ঠিক ক’জন টাকা জমা দিয়েছেন, সে প্রসঙ্গে আবাসন পর্ষদের কর্তারা কেউ মুখ খুলতে চাননি। যদিও পর্ষদ-সূত্রের ইঙ্গিত, পুরনো তালিকার অধিকাংশই টাকা জমা দিয়ে দিয়েছেন।
এ হেন পরিস্থিতিতে আবাসনমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত আবার আইনি লড়াইয়ের পথ খুলে দেবে কিনা, সেই প্রশ্ন বড় উঠেছে। নতুন তালিকা পুরোপুরি রদ করায় কোর্ট যখন সায় দিল না, তখন পুরনো তালিকার ক্ষেত্রে অন্যথা হতে পারে কি?
অরূপবাবুর জবাব, “হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে আপিল করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.