যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পেশের আগে আটঘাঁট বেঁধে এগোতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাঁর বিরুদ্ধে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চাইল তারা। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে থেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কী কী কাজকে ‘নিয়মবিরুদ্ধ’ বলে মনে করে সরকার, তার তালিকা মঙ্গলবারই নয়াদিল্লিতে পাঠিয়েছে রাজ্য।
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্তা এ দিন বলেন, “শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে যৌন হেনস্থা ছাড়াও ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে আর কী কী নিয়মবিরুদ্ধ কাজের অভিযোগ রয়েছে, তা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব (মানবাধিকার) রেশমী গোয়েল। আমরা তিনটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে দিল্লির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি।” নবান্ন সূত্রের দাবি, বড়দিনের ছুটির পর অফিস খুললেই প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে অশোকবাবুর অপসারণের প্রস্তাব পাশ করতে পারেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই ফাইলে রাজ্য থেকে পাওয়া তথ্য পেশ করা হবে।
অশোকবাবুর বিরুদ্ধে রাজ্য কোন কোন ‘নিয়মবিরুদ্ধ’ কাজের অভিযোগ করেছে? রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে অশোকবাবু পাকিস্তান সফরে যাওয়ার আগে রাজ্যপালের অনুমতি নেননি। সেখানে গিয়ে তিনি করাচির এক ব্যক্তির আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন। যা দেশের ‘ফরেন কন্ট্রিবিউশন অ্যান্ড রেগুলেশন অ্যাক্ট’ (এফসিআরএ)-এর পরিপন্থী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এফসিআরএ ছাড়পত্র না দিলে কোনও স্বশাসিত সংস্থার শীর্ষে থাকা ব্যক্তি বিদেশ যেতে পারেন না। বিদেশে গেলেও ব্যক্তিগত আতিথেয়তা নিতে পারেন না। অশোকবাবু পাকিস্তানের মতো দেশে যাওয়ার আগেও এফসিআরএ ছাড়পত্র নেননি।
অশোকবাবুর বিরুদ্ধে অনৈতিক ভাবে রোজগারের অভিযোগও এনেছে রাজ্য। সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের সঙ্গে একটি চিনা বিদ্যুৎ কোম্পানির আরবিট্রেশন (সালিশি) চলছে। সেই সালিশিতে নিগমের সলিসিটর ফার্ম এক বছর আগে অশোকবাবুকে অন্যতম আরবিট্রেটর হিসেবে নিয়োগ করেছিল। চলতি মাসেও এই সালিশিতে অংশ নিয়েছেন অশোকবাবু। এ ছাড়া অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের হয়েও তিনি কাজ করেছেন। সেই কাজের সময়েই যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ। রাজ্যের বক্তব্য, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদটি পূর্ণ সময়ের কাজ। এই পদে থেকে অন্য কোনও ‘এমপ্লয়মেন্ট’ নেওয়া যায় না। সালিশির মাধ্যমে রোজগার করে অশোকবাবু তাঁর নিয়োগের শর্ত ভেঙেছেন।
অশোকবাবুর অপসারণ চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতিকে যে দু’টি চিঠি লিখেছেন, তা রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। আইন মন্ত্রক ও অ্যাটর্নি জেনারেল হয়ে সেই চিঠি সম্বলিত ফাইল রাষ্ট্রপতির কাছে ফের পাঠানোর অপেক্ষায়। ফাইলটি পাঠানোর আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে আরও তথ্য নিয়ে অশোকবাবুর অপসারণের জোরদার প্রস্তাব এ বার নিতে চলেছে কেন্দ্র।
যদিও রাজ্য সরকারকে লেখা একাধিক চিঠিতে অশোকবাবু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাকিস্তান ভ্রমণ নিয়ে রাজ্যের তোলা প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, এফসিআরএ কর্মরত বিচারপতির ক্ষেত্রে খাটে। তিনি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তা ছাড়া, তিনি ব্যক্তিগত সফরে এবং নিজের খরচে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নয়। ফলে রাজ্যপালের অনুমতি নিতে তিনি বাধ্য ছিলেন না। সালিশির মাধ্যমে রোজগার প্রসঙ্গে অশোকবাবু সরকারকে জানিয়েছেন, তিনি অন্য কোনও চাকরি করেন না। সালিশি করা কখনও ‘এমপ্লয়মেন্ট’ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। |