দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিসমাস একেবারে অন্য আবহের। উত্তর গোলার্ধের অনেক জায়গার সঙ্গে তো বটেই, ভারতের থেকেও অনেক তফাত বড়দিনের সময়ের দক্ষিণ আফ্রিকার আবহাওয়ার। বরফ পড়া তো দূরের কথা, ঠান্ডা পর্যন্ত নেই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন গ্রীষ্ম ঋতু! আর ডারবানে তো প্যাচপ্যাচে গরম। খানিকক্ষণ মাঠের মধ্যে দাঁড়ালেই ঘেমেনেয়ে একসা।
হয়তো সে জন্যই জো’বার্গে দু’দিন আগে গ্রেম স্মিথদের দ্বিতীয় ইনিংসে তিরিশ ওভারেরও বেশি বোলিং করার ধকল সামলে ওঠার জন্য ক্রিসমাস ইভ-এর দিন জাহির খান আর ইশান্ত শর্মাকে প্র্যাকটিস করার থেকে রেহাই দিয়েছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। ধোনির দলের বাকি সদস্যরা অবশ্য সিরিজের দ্বিতীয় তথা শেষ টেস্টের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে কিংসমিড স্টেডিয়ামে ঐচ্ছিক অনুশীলনেও হাজির ছিলেন। টিম ইন্ডিয়া-র পেস ত্রিভুজের তৃতীয় মাথা মহম্মদ শামি অনুশীলনে এলেও নেটে বল করেননি। টিমমেটদের সঙ্গে ফুটবল প্র্যাকটিস করার পর বরং নেটে খানিকক্ষণ ব্যাটিং করলেন। |
কিংসমিডের বাইশ গজে কি দেখা যাবে অশ্বিনের জাদু? |
তার মানে অবশ্য এই নয় যে, ডারবানে ভারতের প্রথম এগারোয় কোনও বদলটদল হচ্ছে। যদিও কিংসমিড পিচ ঐতিহাসিক ভাবে ওয়ান্ডারার্সের তুলনায় স্লো। “ডারবানের উইকেট গত কয়েক বছরে কিছুটা গতি হারিয়েছে বটে, কিন্তু এখনও এখানকার বাউন্স ওয়ান্ডারার্সের চেয়ে বেশি। এই উইকেটে কিন্তু অশ্বিন খুব আগ্রহের সঙ্গে বল করবে!” বলছিলেন শন পোলক। প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনের পিচে তিরিশ ওভারের বেশি বল করেও ধোনির দলের এক নম্বর স্পিনারের উইকেট-শূন্য থাকাটা ভারতের মতো এ দেশেও প্রশ্নের সামনে পড়ছে। তবে এক প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক অন্য ভাবে দেখছেন ব্যাপারটা।
পোলক বলছেন, “দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে নেমেই স্পিনারের পক্ষে সফল হওয়া কঠিন। আস্তে আস্তে এখানকার পিচের গতি-বাউন্সের সঙ্গে ধাতস্থ হতে হয়। তার পর সেই অনুযায়ী স্পিনারকে তার বোলিং স্পিড, লাইন-লেংথ অ্যাডজাস্ট করতে হয়। ভারতেরই এর আগের ২০১০-১১ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের কথা ধরুন। সে বারও হরভজন প্রথম টেস্টে ভাল করতে পারেনি, কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে ছ’উইকেট নিয়ে ভারতকে জিতিয়েছিল। এই ডারবানেই। কে বলতে পারে, অশ্বিনও সে রকম কিছু এ বার করে দেবে না কিংসমিডে?”
পাশাপাশি আবার পোলকের আশঙ্কা, ওয়ান্ডারার্সে বিপক্ষের সামনে চতুর্থ ইনিংসে ৪৫৮ রানের টার্গেট খাড়া করেও টেস্ট জিততে না পারায় ভারতীয় ড্রেসিংরুম ডারবানে কিছুটা গুমরে থাকতে পারে। “ভারতীয় দল নিশ্চয়ই প্রথম টেস্ট জিততে না পেরে মানসিক ভাবে ধাক্কা খেয়েছে। সেটার ফায়দা কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা এখানে তুলতে পারে।” ডারবানেই আবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে সর্বনিম্ন রানের (৬৬) ইনিংস খেলার লজ্জা রয়েছে ভারতের।
|
যদিও আগের টেস্টেই বড়সড় সেঞ্চুরি করা চেতেশ্বর পূজারা এ দিন দাবি করলেন, “ওয়ান্ডারার্সে জিততে না পারলেও আমরাই ওই টেস্ট থেকে বেশি ইতিবাচক ব্যাপারস্যাপার নিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে নামছি। ওয়ান্ডারার্সে আমরাই আগে ব্যাট করেছিলাম। বল যখন বেশি মুভ করেছে সেই সময়টা ব্যাট করে বিরাট সেঞ্চুরি করেছে। আবার দ্বিতীয় দিন থেকে পিচ যখন ব্যাটিং উপযোগী হয়ে উঠেছিল, তখন ভারতীয় বোলাররা দক্ষিণ আফ্রিকাকে আড়াইশো করতে দেয়নি।”
এবং সত্যিই! গ্রেম স্মিথের গলাতেও কেমন যেন সতর্কতা! দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক বললেন, “কিংসমিড পিচের চরিত্র প্রতি দিনই পাল্টে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, এখানে প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন ব্যাটিং করা কঠিন।” যদিও স্মিথ আশাবাদী, তাঁর পুরো পেস শক্তি নিয়েই দ্বিতীয় টেস্টে নামতে পারবেন। “মর্নি (মর্কেল) নেটে বোলিং শুরু করেছে। ওর গোড়ালির চোটের দ্রুত উন্নতি ঘটেছে।”
|