হোম এখন অতীত নয়া জীবনে রেশমি
হোমের খাতায় তাঁর নামের জায়গায় লেখা রেশমি। পদবি নেই। ২০০৫ সালের ১২ জুলাই কলকাতার এক হোম থেকে তাঁকে মেদিনীপুরের হোমে পাঠানো হয়েছিল। সেই অনাথ তরুণী মঙ্গলবার নতুন জীবন শুরু করলেন। হোমের এই অষ্টাদশীর সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন খড়্গপুরের খরিদার জাসবির সিংহের। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভ দত্ত। তিনি বলেন, “জাসবিরকে ধন্যবাদ। উনি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন সিদ্ধান্ত তো সকলে নিতে চান না।”
চলছে বিয়ের অনুষ্ঠান। —নিজস্ব চিত্র।
হোমের আবাসিককে বিয়ে কেন? পেশায় ব্যবসায়ী জাসবিরের কথায়, “ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একজন অনাথাকে আশ্রয় দিতে চেয়েছি। পরিবারের কেউ আপত্তি করেননি।” নতুন ভাবে সব কিছু শুরু করতে চান রেশমিও। তাঁর কথায়, “হোমে থেকে কখনও মনে হয়নি পরিবার-পরিজনদের থেকে দূরে আছি। এখানে আনন্দেই কেটেছে। এ বার নতুন জীবন শুরু করতে চাই।” নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করতে হোমে এসেছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা, জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রবীর সামন্ত, কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী প্রমুখ।
মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটিতে রয়েছে সরকার পরিচালিত ‘বিদ্যাসাগর বালিকা হোম।’ গত এক বছরে এখানে তিন জনের বিয়ে হল। রেশমির বিয়ে উপলক্ষে সকাল থেকেই হোমে ছিল উৎসবের পরিবেশ। সাউন্ড বক্স থেকে ভেসে আসছিল সানাইয়ের সুর। হোমের সভাঘর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও ছিল। বরযাত্রীদের মেনুতে ছিল ফ্রাইড রাইস, চিলি চিকেন, চাটনি, মিষ্টি। অন্য অতিথিদের মেনুতে ছিল লুচি, আলুর দম, ছোলার ডাল, চাটনি, মিষ্টি। আর হোমের আবাসিকদের জন্য ছিল মাংসের বন্দোবস্ত। হোম সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “যতটুকু পেরেছি, আয়োজন করেছি। রেশমিদের নতুন জীবন আরও সুন্দর হবে।”
মেদিনীপুরের এই হোমে এখন ২০৮ জন রয়েছেন। মূলত আদালতের নির্দেশে তরুণীদের এখানে রাখা হয়। যারা অনাথ, তারাও এখানে ঠাঁই পায়। হোম সূত্রে খবর, মাস দশেক আগে জাসবিরের পরিবারের তরফে হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানানো হয়, জাসবির হোমের আবাসিককে বিয়ে করতে ইচ্ছুক। স্থির হয় ২৪ ডিসেম্বর বিয়ে হবে। জাসবিরের এক আত্মীয়ও হোমের আবাসিককে বিয়ে করেছেন। তিনি এখন সুখে সংসার করছেন।
হোমে বিয়ে। তাই আনন্দের শেষ ছিল না টুম্পা ভুঁইয়া, পুজা দাসদের মতো অন্য আবাসিকদের। পুজার কথায়, “একদিকে ভাল লাগছে। কারণ, দিদি নতুন ঘরে থাকবে। সংসার করবে। অন্যদিকে কষ্ট হচ্ছে। আসলে আমাদের সঙ্গে এতদিন ছিল তো।” পুজাদের চোখের কোণে তখন জল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.