পৌষ মাসের জুবুথুবু ঠান্ডায় শেষ রাতের জিটি রোড। সুনসান রাস্তা। ঠিক তখনই মোবাইল ভ্যানে টহলরত শ্রীরামপুর থানার পুলিশের চোখে পড়ল, খুদে একটি ছেলে রাস্তার ধারের মন্দির থেকে বেরোচ্ছে। হাতের ব্যাগে শিবঠাকুরের পিতলের ডমরু থেকে, রূপোর সাপ, ত্রিশূল-সহ নানা জিনিস। মন্দিরের তালা ভাঙা।
‘পুলিশ কাকু’দের মুখোমুখি পড়ে যাওয়ায় সে আর পালানোর চেষ্টা করেনি। ছেলেটিকে ধরে পুলিশ জানতে পারে, সে একা নয় আরও সাঙ্গোপাঙ্গ রয়েছে। এরপরেই একে একে আরও তিন জনকে পাকড়াও করে পুলিশ। কারও বয়সই পনেরোর বেশি নয়। তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, তালা ভেঙে মন্দিরে ঢুকে গয়না লোপাট করতে এরা সিদ্ধহস্ত। ধৃত কিশোরদের বাড়িতে হানা দিয়ে সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন একটি মন্দির থেকে খোওয়া যাওয়া গয়নাগাটিও উদ্ধার হয়েছে। ধৃতেরা সকলেই শ্রীরামপুরেরই নানা এলাকার বাসিন্দা।
ইদানীং শ্রীরামপুর থানা এলাকায় বিভিন্ন মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটছিল। সব ক’টি ক্ষেত্রেই মন্দিরের তালা ভেঙে বিগ্রহের গয়নাগাটি খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সমালোচনার মুখে পড়ে হন্যে হয়ে চোর খুঁজছিল পুলিশ। এক না একাধিক দল এই কাণ্ড করে বেড়াচ্ছে, কত বড় ‘গ্যাং’ শহর জুড়ে ‘অপারেশন’ চালাচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তায় ঘুম উবে গিয়েছিল পুলিশকর্তাদের।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ মাহেশে শশীভূষণ ঘোষ লেনের কাছে জিটি রোড লাগোয়া একটি শনিকালী মন্দির থেকে বেরোনোর সময় হাতেনাতে এক কিশোরকে ধরে ফেলেন টহলরত পুলিশকর্মীরা। পুলিশের দাবি, ওই মন্দির থেকে দু’টি রূপোর সাপ, একটি তামার ঘট, একটি পিতলের থালা, একটি ত্রিশূল এবং একটি ডমরু তত ক্ষণে হাতিয়ে নিয়েছে সে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই বাকি তিন জনকেও গ্রেফতার করেন শ্রীরামপুর থানার আইসি প্রিয়ব্রত বক্সি। মঙ্গলবার ধৃতদের উত্তরপাড়ায় জুভেনাইল আদালতে তোলা হয়। পুলিশ ধৃতদের ৭ দিন পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়েছিল। বিচারক অবশ্য তাদের কামারকুণ্ডুর হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা অপরাধের কথা স্বীকার করে নেয়। মন্দিরের তালা কাটতে তারা ওস্তাদ। এ ভাবেই একাধিক মন্দিরে হানা দিয়েছে আগে। ধৃতদের বাড়ি থেকে শহরের সাড়ে তিন শতকের পুরনো মদনমোহন মন্দিরের খোওয়া যাওয়া গয়নাগাটি উদ্ধার করা হয়। ওই মন্দিরের কষ্টিপাথরের শ্রীকৃষ্ণ মূর্তি সিংহাসন থেকে নামানো অবস্থায় পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। ধৃত বালকেরা পুলিশকে জানিয়েছে, অলঙ্কারের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের মূর্তিটিও তারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল। কিছু ক্ষণ পরে আবার মন্দিরে বিগ্রহটি ফিরিয়ে দিয়ে আসে। বেশ কিছু গয়না রিষড়ার ৪ নম্বর রেলগেটের কাছে একটি দোকানে বিক্রি করা হয়েছে বলে ধৃতেরা জানিয়েছে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। সম্প্রতি তালা ভেঙে শতাধিক বছরের পুরনো চাতরা হরিসভা মন্দির থেকেও বিগ্রহের অলঙ্কার চুরি হয়েছিল। সে ক্ষেত্রেও একটি বিগ্রহ সিংহাসন থেকে নামানো অবস্থায় পাওয়া যায়। স্বভাবতই, ওই ঘটনাতেও এই কিশোর অপরাধীদেরই হাত ছিল কিনা, পুলিশ তা দেখছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত চার বালকের মধ্যে কেউই পড়াশোনা করে না। বাড়িতে তাদের দেখভাল করার তেমন কেউ না থাকায় দিনভর আড্ডা দেওয়াই এদের রোজনামচা। তাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশের অনুমান, মন্দিরে চুরির ব্যাপারটি তাদের মাথায় ঢোকায় জনৈক ট্রাকের খালাসি। পুলিশকে ধৃতেরা জানিয়েছে, মাহেশে শহিদ বাজারের কাছে একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে ওই খালাসির সঙ্গে তারা কথা বলত। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই খালাসির খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। ওই চক্রে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছি আমরা।”
ফুটবল প্রতিযোগিতা। সম্প্রতি আট দলীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়ে গেল জগৎবল্লভপুরে। বালিয়া স্পোর্টস অ্যাকাডেমির পরিচালনায় গড়বালিয়া রাখালচন্দ্র মান্না ইনস্টিটিউশনের মাঠে ফাইনালে ছিলেন প্রাক্তন ফিফা রেফারি সুব্রত সরকার, এরিয়ানের কোচ রঘুনাথ নন্দী প্রমুখ। ফাইনালে মুখোমুখি হয় জগৎবল্লভপুর সাদৎপুর ব্যায়াম সমিতি ও বালিয়া স্পোর্টস অ্যাকাডেমি। ২-০ গোলে জয়ী হয় বালিয়া। ম্যান অফ দ্য ম্যাচ এবং ম্যান অফ দ্য সিরিজ হন বিজয়ী দলের সাগর দাস ও শেখ মারুক। অন্য দিকে, উলুবেড়িয়ার বাহিরতফা বয়েজ স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোগে বারো দলের নক আউট ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ফাইনাল, ২৯ ডিসেম্বর। |