কলকাতার রাস্তায় বিমান বসুর মিছিলের উপরে হামলার ঘটনায় পথে নেমেই পুলিশের উপরে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রাখল বামেরা। লালবাজার অভিযান করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে ওই দিনের ঘটনায় জড়িত ১৭ জনের তালিকা তুলে দিয়ে এলেন বাম নেতৃত্ব। কলকাতা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু সেন-সহ ওই ১৭ জনের বিরুদ্ধে রবিবার ঘটনার পরেই এফআইআর করা হয়েছিল বলে বামেদের দাবি। শান্তনুবাবু-সহ ‘প্রকৃত দোষী’রা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বামেরা।
বামেরা চাপ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূল নেতৃত্বও এখন মনে করছেন, রবিবারের ঘটনা তাঁদের বিরুদ্ধেই গিয়েছে। মিছিলে হামলা বামেদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, জনমানসে তৃণমূলের ভাবমূর্তিরও ক্ষতি করেছে। প্রাথমিক ভাবে শান্তনুবাবুর পাশে দাঁড়ানোর পরেও শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন তাঁদের ওই দিনের কার্যকলাপ অনুমোদন করছেন না। তৃণমূল সূত্রের খবর, এই ব্যাপারে পদক্ষেপ স্থির করার জন্য আজ, বুধবার তৃণমূল ভবনে বৈঠকও ডাকা হয়েছে।
মিছিলে হামলার ঘটনায় এ দিনই অবশ্য আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় ওরফে বুলবুল এবং ইমান বসু। সাউথ সিঁথি রোড থেকে এ দিন ভোরে ওই দুই যুবককে পাকড়াও করা হয়। পুলিশের বক্তব্য, ধৃতেরা এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসাবেই পরিচিত। রবিবার সকালে চিড়িয়া মোড় থেকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবু-সহ বাম নেতাদের নেতৃত্বে মিছিল বেরোনোর পরেই দফায় দফায় হামলা হয়েছিল। মিছিলে ইটের আঘাতে জখম বাম সমর্থক লোপামুদ্রা চট্টোপাধ্যায় সে দিন সিঁথি থানায় যে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, তার ভিত্তিতেই দু’জনকে ধরা হয়েছে বলে পুলিশের বক্তব্য। কাশীপুর থানার পুুলিশ সোমবার প্রদীপ পূততুণ্ড ওরফে পল্টু নামে যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল, তিনি অবশ্য আগে জামিন পেয়ে গিয়েছেন।
এক দিনের নোটিসে কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের লালবাজার অভিযানে এ দিন ভিড় হয়েছিল ভালই। বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে শুরু হওয়া মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন অফিস-ফেরত বহু বাম সমর্থকও। মহম্মদ সেলিম, মানব মুখোপাধ্যায়, দিলীপ সেন, রঘুনাথ কুশারী, মনোজ ভট্টাচার্য, জীবন সাহা, তপন মিত্রদের মিছিলকে পুলিশ অবশ্য লালবাজারের আগেই গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউ এবং বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের মোড়ে আটকে দেয়। সেখানেই রাস্তায় ধর্নায় বসেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের তরফে ১১ জনের একটি প্রতিনিধিদল যায় লালবাজারে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে। সেখান থেকে ফিরে প্রাক্তন মন্ত্রী মানববাবু বলেন, “আমরা ১৭ জনের নাম এবং সে দিনের ঘটনার কিছু ছবি সিপি-কে দিয়ে এসেছি। তিনি বলেছেন, দেখবেন। ওই দেখার আশ্বাসে আমাদের অবশ্য বিশেষ ভরসা নেই! তৃণমূল যদি এই ভাবেই হামলা করতে থাকে, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের প্রতিরোধ বাড়বে। উর্দিপরা বাহিনী দিয়ে আর কণ্ঠেরোধ করা যাবে না!” পুলিশ-কর্তাদের তরফেও বলা হয়েছে, ১৭ জনের নাম তাঁরা পেয়েছেন। যা করণীয়, করা হবে। সেলিম বলেন, “মানুষের ভোটে জিতেই ওই তৃণমূল নেতা (শান্তনু) কাউন্সিলর হয়েছিলেন। নিজেরা হামলা করে তিনি দোষ চাপিয়েছেন সাধারণ মানুষের উপরে। মানুষের কাছেই এর জবাবদিহি করতে হবে!” |