প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে কিশোরীকে ভোজালি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠল পাড়ারই এক যুবকের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ নলহাটি শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা। ওই ঘটনায় কিশোরীকে বাঁচাতে গিয়ে এক মহিলাও জখম হয়েছেন। দু’জনেই রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলেও পরে রামপুরহাট স্টেশনের কাছ থেকে অভিযুক্ত যুবক বকুল শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কিশোরীর পিঠে-হাতে-পায়ে ক্ষত তৈরি হয়েছে। মহিলারও বাম হাত জখম হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই যুবক প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ওই কিশোরীর উপরে ভোজালি নিয়ে হামলা করেছে। অস্ত্রটি উদ্ধার হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছি।” |
আহতের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিক পাশ করার পরে আক্রান্ত ওই কিশোরী স্থানীয় এক মহিলার কাছে সেলাইয়ের কাজ শিখছিল। রোজকার মতো এ দিন সকালেও মেয়েটি সেলাইয়ের কাজ শিখে বাড়ি ফিরছিল। তার সঙ্গে ছিলেন তারই দিদি এবং ওই মহিলা প্রশিক্ষকও। অভিযোগ, পথে রাস্তার ধার থেকে আচমকায় এসে ওই যুবক মেয়েটির উপরে চড়াও হয়। এ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই কিশোরী বলে, “সকালে দিদিমণির কাছে সেলাই শেখার পরে আমরা দুই বোন বাড়ি ফিরছিলাম। বাজারে যাবেন বলে দিদিমণিও আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। পথে একটি বাঁশঝোপ থেকে বেরিয়ে এসে ওই যুবক হঠাৎই আমার উপরে হামলা করে।” তার মহিলা প্রশিক্ষক বলেন, “ছেলেটা ভোজালি দিয়ে মেয়েটির পিঠে কোপাতে শুরু করে। তাতে ও রাস্তায় পড়ে যায়। ভয় পেয়ে মেয়েটির দিদিও ছুটে পালায়।” এই সময় তিনি-ই সাহস করে এগিয়ে ওই যুবককে বাধা দেন। যুবকটি তাঁকেও ওই ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বলে অভিযোগ। কিন্তু তত ক্ষণে দু’জনের চিৎকারে পাড়ার লোক জন জড়ো হয়ে যান। তাঁরাই বকুলকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। |
হাসপাতালে নলহাটি থানার পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ। |
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই যুবককে ধরে পুলিশের হাতে দিলেও সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। সুরজ শেখ, রকি শেখরা বলেন, “পুলিশের কাছে বকুল নাটক করে বলে সে কীটনাশক খেয়েছে। তখন হাসপাতালে পাঠানোর জন্য তাকে পরিবারের লোকেদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়।” তারই সুযোগ নিয়ে বকুল পালাতে সক্ষম হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্তকে ধরার ক্ষেত্রে পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ তুলে এ দিন হাসপাতালে নলহাটি থানার ওসি-কে জখমদের পরিজনেরা বিক্ষোভও দেখান। পরে দুপুর দু’টো নাগাদ রামপুরহাট স্টেশন লাগোয়া এলাকা থেকে পুলিশ বকুলকে গ্রেফতার করে। কীটনাশক খাওয়ার অভিনয় করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি পুলিশ সুপার নিজেও স্বীকার করেছেন। নলহাটি থানার ওসি সোমনাথ ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, “প্রথম দিকে পুলিশের কাছে খবর ছিল, অভিযুক্ত যুবক কীটনাশক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই ওই যুবককে চিকিৎসা করানোর জন্য পরিবারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, ওই যুবক আদৌ কীটনাশক খাননি। তখন সোর্স লাগিয়ে অভিযুক্ত যুবককে ধরে ফেলা হয়।” যদিও প্রশ্ন উঠছে, অভিযুক্ত যুবক যদি অসুস্থই হন, তা হলেও তো পুলিশেরই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা! সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তের পরিবারের হাতেই তাকে কেন ছেড়ে দেওয়া হল? এ ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ওই যুবকের খুড়তুতোর দাদার সঙ্গে ‘সুসম্পর্কে’র জেরেই পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করে পরিবারের হাতে তুলে দেয়। অভিযোগ অস্বীকার করে সোমনাথবাবুর পাল্টা যুক্তি, “অভিযুক্ত যুবককে পুলিশ যদি পালিয়ে যেতে মদত দিয়েই থাকে, তা হলে কেন পরে তাকে ধরা হল!”
এ দিকে পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় পেশায় ট্রাক চালক অভিযুক্ত ওই যুবক দাবি করেছে, ওই কিশোরীর সঙ্গে তার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। কিন্তু গত তিন মাস ধরে মেয়েটি তার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখছিল না। সেই আক্রোশেই এ দিন সে ওই কিশোরীর উপরে হামলা করে। যদিও মেয়েটির পরিবার স্পষ্টই জানিয়েছে, অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে মেয়ের কোনও সম্পর্ক ছিল না। এ দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আক্রান্ত মেয়েটিও বলে, “ওই যুবকের সঙ্গে আমার কোনও দিনই কোনও সম্পর্ক ছিল না। এমনকী, সে আমাকে কখনও প্রেমের প্রস্তাবও দেয়নি।” মেয়েটির পরিবারের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বকুলের বাবা অবশ্য বলেন, “তিন মাস আগেই ওই কিশোরীর বাবা ছেলেকে নিয়ে আমার কাছে নালিশ করেছিলেন। আমার ছেলে তাঁর মেয়েকে নানা ভাবে জ্বালাতন করছে বলে তিনি জানান। কিন্তু ছেলে যে হঠাৎ করে এমন কাণ্ড ঘটাবে, তা বুঝতে পারিনি।”
হামলার কারণ হিসেবে মেয়েটির পরিবার অবশ্য পারিবারিক বিবাদকেই দেখছে। মেয়েটির দাদা বলেন, “এলাকার পুরনো এক বিবাদের জেরে বকুলের পরিবারের জামাইবাবু আমাদের হাতে মার খেয়েছিলেন। তারই বদলা নিতে বকুল আমার বোনকে খুন করতে চেয়েছিল।” |