সরু রাস্তা জুড়ে বসে রয়েছে হকার। রান্না হচ্ছে উনুন জ্বেলে। রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার-সহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। কিন্তু প্রায় কোনও জায়গাতেই নেই অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। স্থানীয় দমকল কেন্দ্রেও নেই পর্যাপ্ত পরিকাঠামো। এই চিত্র কাটোয়া শহরের।
কাটোয়া পুরসভার জন্ম ১৮৬৯ সালে। কিন্তু এখনও শহরের অনেক জায়গা জড়িয়ে রয়েছে তারের জঙ্গলে। প্রাচীন এই শহরের দমকলকেন্দ্রটির অবস্থাও তথৈবচ। ফলে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে যে কোনও সময়ে। কাটোয়া শহরের সংস্কৃতি আছে, ঐতিহ্য আছে, কিন্তু আগুনের হাত থেকে বাঁচবার জন্য নিরাপত্তার কোনও বালাই নেই। যদিও এখনও পর্যন্ত এই পুরসভা এলাকায় বড় কোনও অগ্নিকাণ্ড ঘটেনি। কিন্তু যদি ঘটে? শহর বাঁচবে কী করে? শহরের বাইরে এসটিকেকে রোডের ধারে অবস্থিত কাটোয়া দমকল কেন্দ্র। |
১৯৮৮ সালে চালু হওয়া এই দমকল কেন্দ্রে বর্তমানে রয়েছে একটি বড় গাড়ি ও জলাশয় থেকে সরাসরি জল সরবরাহের জন্য পাম্প লাগানো আরেকটি ছোট গাড়ি। দমকল কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দমকল কেন্দ্রে হাইড্রোলিক সিঁড়ি দেওয়া ইঞ্জিন দূরের কথা, তিন তলা পর্যন্ত ওঠার মতো সিঁড়িও নেই। এ ছাড়াও রয়েছে কর্মীর সমস্যা। দমকল কেন্দ্র সূত্রে খবর, বর্তমানে এই দমকল কেন্দ্রে ৬৩ জন কর্মীর প্রয়োজন। কিন্তু কর্মী রয়েছেন ৪০ জন।
একে পরিকাঠামো নেই, তার উপর সরু রাস্তা দিয়ে হকার বাঁচিয়ে যাওয়ার সমস্যা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাটোয়ার দমকল কর্মীরা জানান, বেশির ভাগ সময়ই শহরের ভিতর আগুন লাগলে তাঁরা সময়ে পৌঁছাতে পারেন না। কয়েক সপ্তাহ আগে, পূর্ত দফতর (রাস্তা)-এর আবাসনে আগুন লাগে। সেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসতে গিয়ে রেলগেটের সামনে আটকে পড়ে দমকলের ইঞ্জিন। আবাসনের বাসিন্দারা নিজেদের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। তার পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকল। সময়ে না পৌঁছানোয় স্থানীয় বাসিন্দারা দমকল কর্মীদের উপর অসন্তুষ্ট হন।
দমকলের এক কর্মী জানান, রেলগেট পেরোনোর পরে আমাদের রাস্তার উপর বসে থাকা হকার ও ভ্যান-রিকশা পেরিয়ে যেতে হয়। দমকলের কাটোয়ার ওসি সত্যব্রত রায়ের কথায়, “এলাকার অনেক রাস্তা এত সরু যে আগুন লাগলে বড় ইঞ্জিন নিয়ে যেতে সমস্যা হয়।” তিনি জানান, কয়েক বছর আগে, কাটোয়ার লেনিন সরণির ঠাকুরপুকুর এলাকায় একটি তুলোর গুদামে আগুন লাগে। আগুন নেভাতে গিয়েও একই সমস্যায় পড়ে দমকলের বড় ইঞ্জিন। শেষে পাম্প লাগানো ছোট গাড়ি নিয়ে এসে পাশের জলাশয় থেকে সরাসরি জল দিয়ে ওই আগুন নেভানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের স্টেশন বাজার, কাছারি রোড, সার্কাস ময়দান এলাকায় কোনও বড় জলাশয় নেই। ফলে যদি ওই এলাকাগুলিতে আগুন লাগে তাহলে পাম্প লাগানো গাড়ি এনেও কোনও লাভ হবে না। সমস্যা মেটাতে কী করছে পুরসভা? কাটোয়া পুরসভার কাউন্সিলর তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আগের থেকে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। প্রশাসন সঠিক ভূমিকা পালন করলে ছোটখাটো সমস্যাগুলি এড়ানো যাবে। জলের উৎস কী ভাবে বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।” |