রঙিন মোড়কের কেকেই বড়দিনের বার্তা
দোকানে ডাঁই করে রাখা চাল, ডাল, আটার বস্তা, সাবান, তেল ও রোজকার সংসারের আরও হাজারো টুকিটাকি। তার মাঝেই লাল, নীল মোড়কে, রঙিন বাক্সে রাখা রয়েছে এক গুচ্ছ কেক। বড়দিনের আগে রোজকার ভাত-ডালে অভ্যস্ত বাঙালিও মাসকাবারি জিনিসের সঙ্গে দেদার কিনছেন কেক। কালনা ২ ব্লকের বাজিতপুর গ্রামে মুদি দোকান রয়েছে সাদ্দাম হোসেনের। তিনি বলেন, “বড়দিন মানেই গ্রামের ঘরে ঘরে কেক পৌঁছে যায়। তবে পনেরো বিশ টাকার কেকই বেশি চলে।” পূর্বসাতগাছিয়া এলাকার সমীর দেবনাথের স্টেশনারি দোকানেও রঙিন বাক্সে থরে থরে সাজানো নানা ধরণের কেক। তিনি বলেন, “বড়দিনে কেক খাওয়ার খরিদ্দার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাই স্টেশনারি দোকান হলেও এই সময় কেক বিক্রি করে বাড়তি কিছু রোজগার হয়।”
বেকারিতে চলছে কেক তৈরি।—নিজস্ব চিত্র।
শুধু মুদিখানা বা স্টেশনারি দোকান নয়, গ্রামের চায়ের দোকান, মিষ্টির দোকান, ফলের দোকান, সব্জির দোকানেও এই মরসুমে চুটিয়ে বিক্রি হচ্ছে কেক। শহরে অবশ্য ছবিটা একটু আলাদা। রঙিন ছাতার নীচে, আলোয় সাজিয়ে অস্থায়ী দোকান খোলা হয়েছে। বড় বড় স্টেশনারি দোকানও ঠাসা ছোট থেকে বড় নানা কেকে।
কিন্তু এলাকায় এত কেক সরবরাহ করছে কারা? উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, কালনা শহর ও তার আশপাশের এলাকায় প্রায় পনেরোটি বেকারি রয়েছে। যারা বড়দিনের সাত দিন আগে থেকেই চাহিদা অনুযায়ী কেক সরবরাহ শুরু করে। বেকারিগুলি থেকে এলাকার বাইরেও অনেক কেক যায়। এমনিতে সারাবছর পাঁউরুটি, বিস্কুট, লেরো তৈরি হয় এই বেকারিগুলোতে। কিন্তু বড়দিনের আগে শুধুই কেক তৈরি হয়। শহর ঘেঁষা জিউধরা এলাকার ভারত বেকারিতে যেমন বড়দিনে তৈরি কেক দু’লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। নানা মাপের আট ধরণের কেক তৈরি করেছে তারা। যেমন, পাম কেক, ফ্রুট কেক, কেক বার, বাটি কেক, নৌকা ইত্যাদি। রয়েছএ এগলেস কেকও। এখানে কেক তৈরির কাজ করেন বাঁকুড়ার আলিপুর গ্রামের ২৮ জন যুবক। তাঁদেরই একজন আজিজুল মণ্ডল জানান, কেক তৈরির উপকরণ হিসেবে ময়দা, চিনি, ডালডা, বাটার, এলাচ, জাইফল, দারচিনি, কাজু কিসমিস, মোরব্বা, চেরি, গাওয়া ঘি ও ডিম ব্যবহার করা হয়। উপকরণগুলি একটা পাত্রে মিশিয়ে পরিমাণ অনুযায়ী রাংতার বাক্সে রাখা হয়। তারপরে ভাটিতে ঢোকানো হয়। বের করার পরে কেকের উপর পড়ে ঘিয়ের প্রলেপ। তারপর রঙবাহারি মোড়কে তা চলে যায় বিভিন্ন দোকানে। ওই বেকারির মালিক রাজা শেখ বলেন, “বড়দিনে একটুকরো কেক খাওয়ার রেওয়াজটা গ্রামের দিকেও ভীষণ ভাবে বাড়ছে। সব ধরণের ক্রেতার কথা ভেবে কেকের পাইকারি দাম রাখা হয়েছে পনেরো থেকে একশোর মধ্যে।” তিনি আরও জানান, সাতগাছিয়া, বুলবুলিতলা, ধাত্রীগ্রাম, বলাগড়, রানাঘাট, গুপ্তিপাড়া, বর্ধমান সদর-সহ একাধিক জায়গা থেকে বড়দিনের অনেক আগে থেকেই অর্ডার দেওয়া হয়। পাশাপাশি সাইকেলে কেকের বাক্স নিয়ে আশপাশের হাটবাজারে বিক্রি করেন বহু যুবক। কালনা শহরের জাপট এলাকার লোকনাথ বেকারিও এ বার ৩ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে কয়েক লক্ষ কেক তৈরি করেছে। কর্মীদের দাবি, কেক তৈরির সমস্ত উপকরণের দাম বেড়েছে। কিন্তু তুলনায় কেকের দাম বাড়েনি। এর সঙ্গে প্রতিযোগিতাও বাড়ছে বলে তাঁদের দাবি। কেকের ধরণের সঙ্গে বদল ঘটেছে মোড়কেরও। এক দশক আগেও গ্রামের দিকে কেকের গায়ে শুধু হলুদ কাগজ জড়ানো থাকত। আর কিছু কিছু কেকের মাথা মোড়ানো হত লাল, নীল, সবুজ কাগজে। এখন অবশ্য সবই রঙিন বাক্স। অনেকে এ বার টিন বা প্লাস্টিকের কৌটৌতেও কেক বিক্রি করছেন। রাজা শেখের দাবি, “দিন বদলেছে। জিনিসের সঙ্গে মোড়কের কথাটাও ভাবতে হয়। আর প্লাস্টিকের কৌটৌর সুবিধা বেশি। কেকও ভাল থাকে, আবার কেক শেষ হয়ে যাওয়ার পরে অন্য কাজেও ব্যবহার করা যায়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.