মালদহের নির্যাতিতা আহত নাবালিকার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। সোমবার তাঁরা জানান, তার কেটে যাওয়া শ্বাসনালির চারপাশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
সোমবার ওই নাবালিকার চিকিৎসা নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড বসেছিল মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানান, নাবালিকার কেটে যাওয়া শ্বাসনালীতে যে মেটাল টিউব বসিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল, তা ৭২ ঘণ্টার পর বদলাতে হবে। কিন্তু সেই মেটাল টিউব মালদহে পাওয়া যাচ্ছে না। সুপার মহম্মদ আবদুর রসিদ বলেন, “ওই নাবালিকার চিকিৎসা নিয়ে এ দিন মেডিক্যাল বোর্ড বসেছিল। সেই বোর্ড ওই নাবালিকাকে কলকাতায় পাঠিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছে। মেয়েটির শ্বাসনালি ও খাদ্যনালির চারপাশ ফুলে গিয়েছে। শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীর জখম অংশ অস্ত্রোপচার করার মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি মালদহে নেই।”
শনিবার রাতে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে শ্বাসনালি কেটে খুনের চেষ্টা করে কোতুয়ালির গনিপুরের বাসিন্দা অভয় মণ্ডল। শনিবার রাতে ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা মেয়েটিকে আমবাগান থেকে উদ্ধার করেন। ওই অবস্থাতেই সে কাগজে লিখে অপরাধীকে নাম জানিয়ে দেয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, নাবালিকার মাকে বিয়ের জন্য ‘পথের কাঁটা’ ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুনের চেষ্টা করে ধৃত যুবক। এ দিন হাসপাতালে মেয়ের পাশে সারাক্ষণ তার মা বসে ছিলেন। মেয়েটি মাঝেমধ্যে চোখ খুললেও কোনও কথা বলতে পারছে না। বসানো হয়েছে পুলিশ পাহারা। মেয়ের মা বলেন, “অভয়ের জন্য মেয়ের এই দশা। ওঁর কড়া শাস্তি না হলে শান্তি পাব না।”
এ দিকে ধর্ষণ করে যে ধারাল লোহার ছেনি দিয়ে অভিযুক্ত অভয় ওই নাবালিকার শ্বাসনালি কেটে খুনের চেষ্টা করেছিল পুলিশ এখনও পর্যন্ত সেটি উদ্ধার করতে পারেনি। সোমবার দুপুরে অভয়কে নিয়ে পুলিশ ইংরেজবাজারের বাগবাড়ির বাগানপাড়া থেকে শুরু করে কোতুয়ালির গনিপুরের একাধিক আমবাগানে তল্লাশি চালায়। পুলিশ সূত্রের খবর, কোন রাস্তা দিয়ে সে ওই নাবালিকাতে সাইকেলে চাপিয়ে আমবাগানে নিয়ে গিয়েছিল ও কোন গাছের তলায় ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করার চেষ্টা করেছিল অভিযুক্ত পুলিশকে সবই দেখিয়েছে। ধৃত পুলিশের কাছে দাবি করে ওই আম বাগানেই লোহার ছেনিটি ফেলেছিল। কিন্তু এ দিন তা সেখানে পাওয়া যায়নি। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভয় মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। লোহার ছেনিটি এ দিন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মৃত্যুর মুখে থেকে ফিরে আসা ওই নাবালিকাকে সাহসিকতার জন্য পুরস্কার দেওয়ার কথা বলেছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পযর্টনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। এ দিন তিনি বলেন, “ওই ভয়াবহ ঘটনার পরেও মেয়েটি যেভাবে ভয় না পেয়ে ধৃতের নাম জানিয়ে দিয়েছিল, তা প্রশংসা করার ভাষা নেই। রাজ্য সরকারের মাধ্যমে কেন্দ্রের কাছে ওই নাবালিকাকে সাহসিকতার পুরস্কার দেওয়ার সুপারিশ করা হবে।”
|