এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এক যুবককে। শনিবার রাতে মালদহের কোতুয়ালির গনিপুর এলাকা থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তার শ্বাসনালীতে আঘাত রয়েছে। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে তার চিকিৎসা চলছে। ওই কিশোরীই অভিযুক্ত যুবকের নাম লিখে পুলিশকে জানিয়েছে।
পুলিশের দাবি, জেরার মুখে অভয় মণ্ডল নামে ওই যুবক অভিযোগ মেনেও নিয়েছে। তার বক্তব্য, ওই নাবালিকার মা-কে সে ভালবাসে। বিয়ে করতে চায়। কিন্তু নাবালিকা কন্যা থাকায় সেই মহিলা বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না। তাই তাঁদের বিয়েতে ‘পথের কাঁটা’ সরাতেই ওই নাবালিকাকে সে খুনের চেষ্টা করেছিল বলে অভয় জানিয়েছে। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের সুপার মহম্মদ আবদুর রসিদ বলেন, “আর একটু দেরি হলেই ওই মেয়েটিকে আর বাঁচানো যেত না। শ্বাসনালীতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এক ইঞ্চি ক্ষত ছিল। পরে প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে। মেয়েটি কথা বলতে পারছে না।”
অভিযুক্ত যুবকের বাড়ি বিরামপুর। তার পাশের গ্রাম সাত্তারিতে মেয়েকে নিয়ে থাকতেন ওই মহিলা। কালীপুজোর পরে তিনি মেয়েকে সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বাগবাড়িতে নিজের বাপের বাড়িতে রেখে আসেন। নিজে দিনমজুরির কাজ করতে গিয়েছিলেন গাজলের কাটিকন্দরে। তিনি বলেন, “অভয়ের সঙ্গে অনেক জায়গায় এক সঙ্গে দিনমজুরির কাজ করেছি। অভয় মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসত। ও অনেক দিন ধরেই আমাকে বিয়ে করতে চাইছে। আমরা মেয়ে থাকায় বিয়েতে রাজি হইনি। কিন্তু তার জন্য ও আমার মেয়েকে এমন করবে ভাবতেই
পারছি না।”
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ১০ বছর আগে ওই মহিলার স্বামী মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে তিনি দিনমজুরি করে নিজের ও মেয়ের সংসার চালান। কাজের সুবাদেই পেশায় দিনমজুর অভয়ের সঙ্গে তাঁর আলাপ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অভয় প্রায়ই ওদের বাড়িতে আসত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, শনিবার সন্ধ্যায় অভয় বাগবাড়িতে যায়। তারপরে বাড়ির বাইরেই ওই কিশোরীকে ডেকে নিজের সাইকেলে তুলে চলে যায়। ওই কিশোরীর দিদিমা বলেন, “শনিবার সন্ধ্যা থেকে নাতনির খোঁজ পাচ্ছিলাম না। ও না ফিরে আসায় আশেপাশে খোঁজাখুজিও করি।” পুলিশ সূত্রের খবর, সেই রাতেই গনিপুরের একটি আমবাগান থেকে উদ্ধার করা হয় ওই কিশোরীকে। তবে তারপরে ওই নাবালিকা কিছুই বলতে পারছিল না। সাদা কাগজে শুধু লিখে দেয় ‘আভা’। তার পরে পুলিশ বিশেষ দল গঠন করে ঘটনাস্থলের আশেপাশে খোঁজখবর শুরু করে। তার পরেই নাবালিকা এবং অভিযুক্তের পরিচয় জানা যায়। পুলিশ জানতে পারে অভয়েরই ডাক নাম আভা। পুলিশ যখন অভয়ের বাড়িতে হানা দেয়, সে তখন ঘুমোচ্ছিল বলে তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন। গ্রেফতারের পরেই অবশ্য সে ভেঙে পড়ে দোষ স্বীকার করে নেয়।
জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্ত অভয় খুনের চেষ্টা ও ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছে। ঘটনাস্থলেও তাকে নিয়েও যাওয়া হয়েছিল। পাথর বা ইট কাটার একটি ছেনি দিয়ে সে ওই নাবালিকার গলায় আঘাত করেছিল বলে জানিয়েছে। সেটি খোঁজা হচ্ছে।” এ দিন ধৃতকে আদালতে তোলা হলে মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট তার জামিন নামঞ্জুর করে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে তোলার আগে ধৃত যুবক দাবি করেন, “ওই মেয়ের জন্য ওর মাকে বিয়ে করতে পারছিলাম না। ও আমাদের বিয়েতে পথের কাঁটা হয়েছিল। তাই ওকে মারতে চেয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম
ও মরে গিয়েছে। তার পরেই
পালিয়ে যাই।” ওই ছাত্রীর মামার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভয়ের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা ও ধর্ষণের
মামলা দায়ের করেছে। |