বাঁশের সাঁকোই তাঁদের ভরসা। বছরের পর বছর ধরে সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। গোটা পঞ্চায়েত এলাকায় অন্তত ৭০টি বাঁশের সাঁকোয় চলাচল করেন কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার মানুষ। তাঁরা দাবি করেছিলেন, কংক্রিটের সেতুর। বাম আমলেও সাড়া মেলেনি, তৃণমূলের আমলেও সাড়া মিলছে না বলে অভিযোগ। এই অবস্থা কোচবিহার জেলার মাতালহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মনোরঞ্জন রায় বলেন, “৭০টি বাঁশের সাঁকো প্রত্যেক বার তৈরি করতে ৫ লক্ষ টাকার উপরে খরচ হয়। বাম আমলে কেন সেতুও তৈরি হয়নি, বুঝতে পারছি না। পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেতু কংক্রিটের করার পরিকল্পনা নিয়েছি।”
গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, মাতালহাট পঞ্চায়েতের তিন দিক নদী দিয়ে ঘেরা ঝলঝলিয়া, বুড়া ধরলা ও গাবুর ধরলা। এই তিনটি নদী ঘিরে রেখেছে ওই পঞ্চায়েতকে। মহকুমা দিনহাটায় যাওয়ার ক্ষেত্রে এলাকার বেশির ভাগ মানুষকে নদী পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয়। জেলা শহর কোচবিহারে যেতেও পেরোতে হয় নদী। এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দা কৃষিপণ্য ও সব্জি চাষের উপরেই নির্ভরশীল। উৎপন্ন ফসল তাঁদের মহকুমা শহর ও জেলা শহরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে হয়। সে ক্ষেত্রে ওই বাঁশের সাঁকোই তাঁদের ভরসা। গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তারা জানান, একেকটি সাঁকো তৈরি করতে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্ষার সময়ে নদীর জল বেড়ে যায়। সে সময়ে সাঁকোর উপরে চাপ বেড়ে যায়। এক বছরেই একটি সেতু ভেঙে পড়ে।
বাসিন্দাদের প্রধান দাবি, বড়ভিটা গ্রামের ঝলিঝলি নদীর উপরে চ্যাঙয়ের ঘাটের সাঁকো নিয়ে। ওই সাঁকো দিয়ে মাতালহাটের একটি অংশের মানুষ ছাড়াও গোসানিমারির একটি অংশ ও পাটছড়া পঞ্চায়েতের মানুষও দিনহাটা যাতায়াত করেন। ওই জায়গায় সেতুর দাবিতে এলাকার মানুষ আন্দোলনও করেছেন। সাহাজের ঘাট বলে একটি এলাকাতেও সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। সেখানে বছর দশ আগে নৌকাডুবিতে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর জলে ডুবে মৃত্যু হয়। এলাকার বাসিন্দারা জানান, বর্ষার সময় জল বেড়ে যায় নদীতে। সে সময় বাঁশের সাঁকো ভেঙে পড়লে নৌকা দিয়ে যাতায়াত শুরু করেন বাসিন্দারা। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি নৌকা নদী পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে তাপসী দাস নামে এক ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। ওই ঘটনার পর এলাকার মানুষ সেতুর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি থেকে সে সময় সেতুর আশ্বাস দেওয়া হলেও কাজ হয়নি। এলাকার বাসিন্দা গজেন বর্মন, স্বপন দাসরা বলেন, “সেই স্মৃতি মনে রেখেও এখনও আমাদের বাঁশের সাঁকো অথবা নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। ওই দুটি ছাড়াও বড়ভিটা বাজারের কাছে সিন্ধি মিয়ার ঘাত, ক্ষিতীশ সাপুরিয়ার ঘাট, হারাধন দাসের ঘাট সহ ৭০টি ঘাট দিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।” মাতালহাট এলাকার তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য বড়ভিটার বাসিন্দা কৃষ্ণকান্ত বর্মন জানান, তিনি একসময় ঘাটগুলিতে সেতু তৈরির আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি দাবি করেন, ১০টি কংক্রিটের সেতু তৈরি করতে পারলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। তিনি বলেন, “এ বারে আমরা জেলা পরিষদে। ওই সেতু তৈরি করা আমাদের কর্তব্য। এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সমস্ত জায়গায় কথা বলেছি। আমরা কয়েকটি সেতু তৈরি করব। কয়েকটি যাতে পঞ্চায়েত সমিতি করে তা নিয়ে কথা বলব।” |