এডস প্রতিরোধে সচেতনতায় বরাবরই জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই লক্ষ্যে এ বার প্রচার-গাড়ি ঘুরতে শুরু করল ব্লকে ব্লকে। সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে এই কর্মসূচির সূচনা হয়। জেলা পরিষদ ক্যাম্পাস থেকে দু’টি প্রচার গাড়ি রওনা দেয়। একটি যায় মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাঁচখুরি ১ ও ২, পাথরা, বনপুরা, শিরোমণি এলাকায়। অন্যটি সবংয়ের বলপাই, ভেমুয়া, মোহাড়, বুড়াল, বিষ্ণুপুর এলাকায়। প্রচার-গাড়ির যাত্রা শুরুর সময় উপস্থিত ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী, দুই উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারঙ্গি এবং রবীন্দ্রনাথ প্রধান। আগামী দু’মাস এই প্রচার-গাড়ি জেলার ২৯টি ব্লকে ঘুরবে। পৌঁছবে প্রত্যন্ত গ্রামে। গাড়ি থেকে লিফলেট বিলি করা হবে। গাড়িতে থাকছে সাংস্কৃতিক দল। তারা পুতুল নাচ, পথ নাটিকার মাধ্যমে এডস সচেতনতার বার্তা দেবে।
এডস নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। গত কয়েক বছরে জেলায় এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যুবক-যুবতীর পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও সংক্রণ ছড়াচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এইচআইভি সংক্রমিত হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে। ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকায় এই প্রবণতা বেশি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রের দাবি, প্রতি একশো জন গর্ভবতী মহিলার মধ্যে এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা একেরও বেশি। ২০১০ সালে এইচআইভি সংক্রমিত (সরকারি ভাবে নথিভুক্ত) রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৪০। এর মধ্যে ১৪ জনের বয়স ১৫ বছর বা তার কম। ২০১৩ সালে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ১৩৫৪। এর মধ্যে ৯৮ জনের বয়স ১৫ বছর বা তার কম। |
পশ্চিম মেদিনীপুরে এইচআইভি সংক্রমিত রোগী বাড়ার কারণ কী? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “আমরা দেখেছি, যে সব এলাকার যুবকেরা কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে যান, কয়েক মাস পর আবার ফিরে আসেন, সেই সব এলাকাতেই এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ, কাজের খোঁজে যাঁরা ঘর ছাড়েন, তাঁদের কয়েকজন এইচআইভির বাহক হয়ে ঘরে ফিরে আসেন। এ ভাবে রোগ ছড়িয়ে পড়ে।”
এই পরিস্থিতিতে সচেতনচা প্রচারে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। এডস প্রতিরোধে চলতি বছর গোটা জেলায় ১০টি শিবির হয়েছে। এই শিবিরগুলিতে এইচআইভি শনাক্তকরণের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়। এ বার ‘সচেতনতাই সুরক্ষা’ বার্তা নিয়ে শুরু হল প্রচার-গাড়ির যাত্রা। প্রচার-গাড়ি থেকে যে লিফলেট বিলি করা হচ্ছে, তাতে এইচআইভির নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। জানানো হয়েছে, এইচআইভি কী, কী ভাবে এই রোগ ছড়ায়, প্রতিরোধের উপায় কী, এইচআইভি সংক্রমণ হয়েছে জানলে কী করবেন প্রভৃতি।
প্রতিটি গাড়িতে একজন করে কাউন্সেলর রয়েছেন। কেউ চাইলে তাঁকে নিজের সমস্যার কথা জানাতে পারেন। তিনি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। এই প্রচার-গাড়িকে স্বাস্থ্য দফতরের পরিভাষায় বলা হচ্ছে আইইসি ভ্যান। অর্থাৎ ইনফরমেশন-এডুকেশন-কমিউনিকেশন (আইইসি) ভ্যান।জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলছেন, “বছরভরই নানা সচেতনতা কর্মসূচি চলে। আইইসি ভ্যান তারই একটি। সাধারণ মানুষকে যত বেশি এই রোগ সম্পর্কে সচেতন করা যাবে, তত সংক্রমণ কমবে।” |