দুষ্কৃতীদের শাসন চলে ‘মৃতপ্রায়’ যক্ষ্মা হাসপাতালে
প্রায় পাঁচ দশকের পুরনো ধুবুলিয়ার বিধানচন্দ্র রায় যক্ষ্মা হাসপাতাল এখন সমাজবিরোধীদের নিরাপদ ঠিকানা। জনা তিরিশ রোগী আর হাতে গোনা কয়েক জন কর্মী, বিকেল থেকে তাঁরা হাসপাতালের নিভু নিভু আলোয় সন্ত্রস্ত হয়ে রোগমুক্তির আশায় দিন গোনেন। আর সেই সময় হাসপাতাল দাপিয়ে বেড়ান স্থানীয় এক দল দুষ্কৃতী।
অবাধে লুঠপাট, আপত্তি করলে হুমকি, এই চেনা শঙ্কা নিয়ে তাঁদের দিনযাপন। এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে বহুবার অভিযোগ করেছেন তাঁরা। তবে, বলা বাহুল্য, সাড়া মেলেনি।
সোমবার দুপুরে হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের গিয়ে রোগীদের চোখে-মুখের জ্যামিতিতে আতঙ্কের ছাপ মিলল স্পষ্ট। মাস খানেক ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ধুবুলিয়ার নারায়ণ সরকার। কাঁপা গলায় বছর পঞ্চাশের নারায়ণবাবু বললেন, ‘‘এই দিন কয়েক আগে সন্ধ্যার দিকে কয়েকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ঘরে হামলা করল। চিৎকার করলে হাঁসুয়া দেখিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দিল। তারপর চারটে পাখা খুলে নিয়ে চলে গেল। কী করব বলুন?’’ পুলিশে অভিযোগ হয়েছে ঠিকই। উর্দিধারীদের চেনা উত্তরও পাওয়া গিয়েছে, “তদন্ত শুরু হয়েছে।” ব্যস, এই পর্যন্ত। এ ভাবেই ‘বেঁচেও’ মরে আছে ধুবুলিয়া যক্ষ্মা হাসপাতাল।
নষ্ট হচ্ছে চিকিৎসার সরঞ্জাম। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
অভিযোগ পেলেও পুলিশ কেন নির্বিকার? নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, ‘‘প্রথম শুনছি দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্যের কথা। অবশ্যই ওই থানার সঙ্গে কথা বলব।’’ এক সময়ের হাজার শয্যার যক্ষ্মা হাসপাতাল এখন এমনই মৃতপ্রায়। পুরুষ ওয়ার্ডের শৌচাগারে দরজা, জানালার বালাই নেই। বেশিরভাগ ঘরেরই দরজা-জানলার অস্তিত্ব হারিয়ে গিয়েছে। রোগীরা সমস্বরে বলছেন, ‘‘ও সব দুষ্কৃতীরা একে একে খুলে নিয়ে গিয়েছে।’’ মহিলা ওয়ার্ডের অবস্থাও তথৈবচ। সাকুল্যে তিন জন মহিলা রয়েছেন ওয়ার্ডে। তাঁরা দিন ফুরোলে শত প্রয়োজনেও বাইরে বেরোতে পারেন না। কেন?
নাকাশিপাড়ার সুলতানপুরের বাসিন্দা তাহিরা বিবি বলেন, ‘‘বাইরে বেরোলেই ওরা (পড়ুন দুষ্কৃতীরা) রয়েছে যে!” রাতে ওয়ার্ডের ভিতরেও কি তাঁরা নিরাপদ? তাহিরা বলেন, “চোর-ডাকাতরা ঢোকে পিছনের ভাঙা দরজা-জানালা দিয়ে।”
প্রায় ৯০০ বিঘে জমির উপরে হাসপাতালটি এমনই অরক্ষিত পড়ে থাকলেও হুঁশ ফেরেনি জেলা স্বাস্থ্য দফতরেরও। সেখানে দেওয়াল ভেঙে ইট পর্যন্ত খোয়া গেছে। দরজা-জানালার তো চিহ্নই নেই। চুরির প্রতিবাদে মাসখানেক আগে জনা সতেরো রোগীর সই সম্বলিত একটি অভিযোগপত্র ধুবুলিয়া থানায় জমা দিয়েছিলেন হাসপাতাল সুপার নির্মলকুমার সানা। কিন্তু অভিযোগ পেয়েও পুলিশ নড়েচড়ে বসার ‘সময়’ পায়নি বলে অভিযোগ। নির্মলবাবু বলেন, ‘‘আমরা কড়া হলে রোগীরা হুমকির সামনে পড়ছে।”
জেলাশাসক পিবি সালিম বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখছি।” কৃষ্ণনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সিপিএমের জগন্নাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “সন্ধ্যা নামলে ওই এলাকায় মদ্যপদের দৌরাত্ম্যে বাসিন্দারা যাতায়াত করতে পারেন না। পুলিশকে বহু বার জানিয়েও তো লাভ হয় না। বড় অসহায় লাগে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.