অ্যালঝাইমার্সের উৎস চিহ্নিত, দাবি বিজ্ঞানীদের

২৩ ডিসেম্বর
রাস্তার ধারে প্রতিবন্ধী ছাত্রীটিকে একা বসিয়ে রেখে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন দেবরাজ সহায়। ইচ্ছা করে নয়, স্রেফ ‘মনের ভুলে’। পরে জানা যায়, ‘অ্যালঝাইমার্স’ রোগে ভুগছেন তিনি। ‘ব্ল্যাক’ ছবির এই শিক্ষকের মতোই বহু মানুষ আক্রান্ত হন অ্যালঝাইমার্সে। অপ্রতিরোধ্য এই রোগ মূলত মানুষের স্মৃতিতে থাবা বসায়। সম্প্রতি এর আদি উৎসস্থলটি চিহ্নিত করতে পেরেছেন বলে দাবি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের(সিইউএমসি) এক দল বিজ্ঞানীর। এবং এর ফলে রোগের প্রকোপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলেও আশা তাঁদের।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য জানাচ্ছেন, অ্যালঝাইমার্সের উৎসস্থল হিসেবে মস্তিষ্কের দু’টি এলাকা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত। আর তা হল ‘হিপোক্যাম্পাস’ এবং লাগোয়া ‘এন্টোরাইনাল কর্টেক্স’। এগুলি ঠিক কোথায়? আসলে, মানবমস্তিষ্ককে বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে সামনের ভাগটির মূল অংশ যা কি না সেরিব্রাল কর্টেক্স হিসেবে পরিচিত, সেটি দু’টি গোলার্ধ বা ‘হেমিস্ফিয়ারে’ বিভক্ত। এই দুই গোলার্ধের গভীরেই রয়েছে হিপোক্যাম্পাস এবং তার প্রতিবেশী এন্টোরাইনাল কর্টেক্স। যা কি না অ্যালঝাইমার্সের উৎসস্থল হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিত।
তা হলে সিইউএমসি-এর বিজ্ঞানীরা নতুন কী খুঁজে পেলেন? “নতুনত্ব তো রয়েছেই”, প্রত্যয়ী জবাব স্কট এ স্মল নামে ওই গবেষক দলের অন্যতম সদস্যের। তাঁর ব্যাখ্যা, “আমাদের গবেষণায় নিখুঁত ভাবে ধরা পড়েছে, এন্টোরাইনাল কর্টেক্সের ঠিক কোন অংশে এই রোগের উৎপত্তি।” এই অংশকে ল্যাটারাল এন্টোরাইনাল কর্টেক্স বা এলইসি নামে অভিহিত করছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, ‘নেচার নিউরোসায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে রোগের গতিপ্রকৃতিও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
কিন্তু কী ভাবে এই তথ্য জোগাড় করলেন সিইউএমসি-র গবেষক দল? এ জন্য গত তিন বছর ধরে ৯৬ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে পর্যবেক্ষণের আওতায় রেখেছিলেন তাঁরা। ওই ৯৬ জনের মধ্যে পরবর্তী কালে ১২ জনের ‘মাইল্ড অ্যালঝাইমার্স’ ধরা পড়ে। এ দিকে এফএমআরআই-এও দু’দলের মস্তিষ্কের সক্রিয়তার ফারাক স্পষ্ট হয়ে যায়। দেখা যায়, অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত ওই বারো জনের প্রত্যেকেরই এলইসি অঞ্চলে রক্তপ্রবাহ সুস্থদের তুলনায় কম। আর তাতেই সিইউএমসি-র বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, এলইসি-ই অ্যালঝাইমার্সের আদি উৎসস্থল। এই রোগে এলইসি অঞ্চলের স্নায়ু ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। যা লাগোয়া এলাকার স্নায়ুও ক্ষয় করে। সেই ক্ষয় আবার ছড়িয়ে যায় তার লাগোয়া এলাকায়। গঠনগত দিক থেকে এলইসি-র প্রতিবেশী হিপোক্যাম্পাস ‘স্মৃতি সংরক্ষণের’ অন্যতম কেন্দ্র বলে ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীমহলে জনপ্রিয়। সে ক্ষেত্রে এলইসির স্নায়ুক্ষয়ের প্রভাব যদি হিপোক্যাম্পাসেও পড়ে, তা যে স্মৃতিভ্রংশ ঘটাবেই, তা প্রত্যাশিত। সিইউএমসি-র বিজ্ঞানীদের দাবি, এলইসি থেকে এ ভাবে ধীরে ধীরে গোটা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে স্নায়ুর এই ক্ষয়রোগ। যার শুরু স্মৃতিভ্রংশ দিয়ে, শেষ মৃত্যুতে।
স্নায়ুর এই ক্ষয়ের জন্য অন্যতম দু’টি খলনায়ককেও চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে দাবি করেছেন সিইউএমসি-র বিজ্ঞানীদল। তাঁরা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, মস্তিষ্কে টাউ এবং এপিপি নামে দুই প্রোটিনের যৌথ আক্রমণই স্নায়ুর ক্ষয়ের মূল কারণ। তবে এই তথ্য যে নতুন কিছু নয় তা জানিয়ে দিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যার অধ্যাপক তুষার ঘোষ। বললেন, “ফ্যামিলিয়াল (যা কি না বংশপরম্পরায় আসে) অ্যালঝাইমার্সের অন্যতম দুই কারণ হিসেবে টাউ এবং এপিপি ইতিমধ্যেই চিহ্নিত।” চিকিৎসার দিক থেকেও সিইউএমসি-র বিজ্ঞানীদের গবেষণা যে কোনও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে, তা-ও মনে করেন না তিনি। তাঁর ব্যাখ্যা, “এর পর থেকে এফএমআরআই করে হয়তো এলইসি-র স্নায়ুর ক্ষয় শুরু হয়েছে কি না তাতে লক্ষ্য রাখা যাবে। যদি ক্ষয় শুরু হয়ে গিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়েই তার চিকিৎসা শুরু করা যাবে। তাতে রোগের গতি হয়তো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু স্নায়ুর ক্ষয় শুরু হতে চলেছে কি না, তা আগাম বোঝার কিন্তু কোনও ইঙ্গিত দিতে পারেননি গবেষকরা। ফলে সে অর্থে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাতে পারেননি তাঁরা।”
তা হলে কি নতুন কিছুই নেই এই গবেষণায়? তুষারবাবুর মতে, “নতুনত্ব বলতে এলইসির ধারণাটা। যে ভাবে ওঁরা এন্টোরাইনাল কর্টেক্সের ওই অংশটি খুঁজে বের করেছেন, তা-ই বা কম কি?” বাস্তবিক। যে রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়, তার আদি উৎসস্থল খুঁজে বের করাও তো কম কিছু নয়। শুরু যখন মিলেছে, তখন এ ধাঁধাঁর শেষও মিলবে, আশায় বিজ্ঞানীমহল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.