তেরো বছরে একই সংখ্যক টেস্টে এই প্রথম বার ড্র দেখল ওয়ান্ডারার্স। মাত্র দু’বার এখানে দুটো চারশো-প্লাস স্কোর সফল ভাবে তাড়া করে জিততে পেরেছে কোনও দল। কোনও দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান এখানে ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেনি। এই মাঠটাই কি না হয়ে দাঁড়াল মহাকাব্যিক ব্যাটিং ম্যারাথনের নীরব সাক্ষী। কেউ বিশ্বাস করেনি এখানে ভারত চারশোর উপর রান করতে পারবে। আর এটাও কেউ বিশ্বাস করেনি যে, দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৫৮ রানের টার্গেট প্রায় তাড়া করে ফেলবে। সব দেখেশুনে যেন নতুন করে টেস্ট ক্রিকেটের প্রেমে পড়লাম!
যে ম্যাচে ব্যাটিং আর বোলিং দুই বিভাগেই অসাধারণ কীর্তি স্থাপিত হল, সেই ম্যাচের নির্ণায়ক মুহূর্ত তৈরি করে দিল এক জন ফিল্ডার। এর চেয়ে জাদুকরী আর কিছু হতে পারে? দক্ষিণ আফ্রিকা তো ম্যাচটা প্রায় জিতেই গিয়েছিল, যখন অজিঙ্ক রাহানের থ্রো-এর শিকার হল ফাফ দু’প্লেসি। তার পরই দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে গেল। ভারতীয়রা মাথা ঠান্ডা রাখল আর ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ড্র হল।
দক্ষিণ আফ্রিকা নিশ্চয়ই ভাবছে, এই ম্যাচটা কী ভাবে হাতছাড়া হয়ে গেল। ভারতও নিশ্চয়ই ভাবতে বসবে যে, ৪৫৮ রানের বর্মও মাঝে ওদের পক্ষে যথেষ্ট দেখাচ্ছিল না। দুটো টিমই বোধহয় বুঝতে পারবে যে এই দুটো ব্যাপারের মধ্যে বিশেষ তফাত নেই। দুটো টিমই চাইবে ডারবানে এর চেয়ে বেশি ভাল খেলতে। বক্সিং ডে থেকে শুরু টেস্টে মনে হচ্ছে আরও ভাল মানের ক্রিকেট দেখা যাবে।
রবিবার শেষ ঘণ্টাটায় ভারতের পেস ত্রয়ী অসাধারণ বল করল। এত উচ্চতায় এনার্জি কমে যাওয়া সত্ত্বেও ওরা অফস্টাম্পের বাইরে বাইরে বল করে যাচ্ছিল। দুটো জঘন্য বল হলেই কিন্তু ম্যাচটা শেষ হয়ে যেত। শেষের দিকে ম্যাচটা যা ক্লোজ হয়ে গেল!
দু’প্লেসি আর এবি ডে’ভিলিয়ার্স দুর্দান্ত ব্যাট করেছে, এটা মেনে নিয়েও বলব, ভাগ্যের সাহায্য ওদের দু’জনের সঙ্গে ছিল। স্লিপের দিকে অজান্তে যাওয়া কয়েকটা খোঁচা ফিল্ডারের হাতে জমা পড়তেই পারত। কয়েকটা ডেলিভারি আচমকা লাফিয়ে উঠেছিল। ব্যাটের হ্যান্ডেল থেকে হাত ছিটকে যাচ্ছিল। তবু কোনও অঘটন ঘটেনি। এ সবের জন্যই শেষ ঘণ্টাটা আরও উত্তেজক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
টেস্টটা জিততে না পারার জন্য ভারতীয়রা যেন নিজেদের খুব একটা দোষ না দেয়। সত্যি বলতে কী, শেষ দিকে মনে হচ্ছিল ভারতের ভাগ্য ভাল যে অপ্রত্যাশিত ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ের জন্য ঝাঁপাল না। সবাই যা ভেবেছিল, তার চেয়ে অনেক ভাল খেলেছে ভারত। আশা করি ওদের মধ্যে এই বিশ্বাসটা তৈরি হয়েছে যে, বিদেশের পিচেও আমরা ভাল। মনে হয় ভারতের ব্যাটিং সিরিজে আরও উন্নতি করবে। টানা বল করার ধকলটা কাটিয়ে ওঠার যথেষ্ট সময় পাবে পেস ত্রয়ী। কে জানে, জো’বার্গের ম্যাচ থেকে হয়তো কিংসমিডে চার পেসার বা এক জন বাড়তি স্পিনার খেলানোর উৎসাহ পেয়ে গেল ভারত।
|
সাড়ে চার বছর পর সিংহাসনচ্যূত স্টেইন |
ওয়ান্ডারার্সে টেস্ট কেরিয়ারের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্সের (দু’ইনিংস মিলিয়ে ১-১৬৫) জেরে সিংহাসনচ্যূত ডেল স্টেইন। ২০০৯ জুলাইয়ে টেস্ট বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর হওয়ার পর ১৮৬ ম্যাচ ধরে শীর্ষে ছিলেন স্টেইন। কিন্তু এ দিন দু’নম্বরে নেমে গেলেন। যদিও এক নম্বর র্যাঙ্কিংটা গেল আর এক প্রোটিয়া পেসার, ভার্নন ফিলান্ডারের দখলে। নিজের সেরা র্যাঙ্কিংয়ে উঠে এলেন বিরাট কোহলিও (১১)। |