|
|
|
|
বিদ্যুৎ-মাসুল নিয়ে আশ্বাসে রয়ে যাচ্ছে আশঙ্কাও
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২৩ ডিসেম্বর |
ক্ষমতায় এলে বিদ্যুতের দাম অর্ধেক কমিয়ে দেব, এমন প্রতিশ্রুতি অনেক নেতাই দিয়ে থাকেন। কিন্তু যত দিন না বিদ্যুতের দাম অর্ধেক হচ্ছে, তত দিন ইচ্ছে করলে বিদ্যুতের বিল না মেটালেও চলবে এমন আশ্বাসবাণী দিল্লি তো দূরের কথা, অন্য কোনও রাজ্যের বাসিন্দারাও বোধ হয় কস্মিনকালে শোনেননি।
দিল্লির ভাবী মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সেই ঘোষণাই করেছিলেন। বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গেলে তিনি রাজধানীতে অন্ধকার নামিয়ে আনবেন বলে আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের একাংশ। সূত্রের খবর, দিল্লির বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির আয়-ব্যয়ের মোট ঘাটতি এখনই প্রায় ১৯,৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে দিল্লি বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের কাছে অর্থসাহায্য চাইতে বলেছে। তা না করে মুখ্যমন্ত্রী হয়েই কেজরিওয়াল যদি বিদ্যুতের দাম অর্ধেক করে দেন, তা হলে রাজধানীর বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে বাধ্য বলেই অনেকে মনে করছেন।
সেখানেই চিন্তা বিদ্যুৎ মন্ত্রকের। কারণ, রাজধানী শহর দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়, সংসদ ভবন থেকে শুরু করে দেশের সমস্ত নিরাপত্তা সংস্থাগুলির সদর দফতর রয়েছে। সমস্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন দূতাবাস, দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এইমস-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কাজেই রাজধানীতে এক মুহূর্তের জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অর্থ জাতীয় বিপর্যয়। অথচ অরবিন্দ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “সরকার গঠনের চার মাসের মধ্যে বিদ্যুতের দাম কমাতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তাঁদের অভিযোগ, দিল্লির বেসরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলি হিসেবের খাতায় ক্ষতি দেখিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। আরও বাড়াতে চাইছে। এত দিন শীলা দীক্ষিতের সরকার তাদের মুনাফা লোটার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। আম আদমি পার্টির যুক্তি, ২০১১ সালের অগস্টের পর থেকে দিল্লিতে বিদ্যুৎ মাসুল ৫০% বেড়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বিদ্যুতের দাম ৫০% কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে ফায়দা তুলতে কেজরিওয়ালের অসুবিধা হয়নি।
২০০২ সালে দিল্লির বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ হয়। রাজ্য সরকার ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে তিনটি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি সংস্থা তৈরি হয়েছে অনিল অম্বানীর রিলায়্যান্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। তৃতীয়টি টাটার সঙ্গে। তিনটিতেই রাজ্যের অংশীদারিত্ব ৪৯%। বিদ্যুতের দাম কমানোর পরে লোকসানে ব্যবসা করতে কেউই রাজি হবে না বলেও বিদ্যুৎ মন্ত্রকের আশঙ্কা। কেজরিওয়াল অবশ্য অকুতোভয়। বলছেন, “টাটা-অম্বানীরা ইচ্ছে হলে চলে যেতে পারেন। দেশে বেসরকারি সংস্থার অভাব নেই। অন্য কাউকে খুঁজে নেব।”
কিন্তু সংস্থার বদল হলেই কি সমস্যার সমাধান হবে?
বিদ্যুৎ মন্ত্রকের তথ্য বলছে, ২০০২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে দিল্লিতে বিদ্যুতের চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে। বণ্টন সংস্থাগুলি বিদ্যুৎ কেনে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে। সেই বিদ্যুৎ কেনার খরচ বেড়েছে ৩০০ %। কিন্তু বিদ্যুতের দাম বেড়েছে মাত্র ৭০%। ফলে আয়-ব্যয়ের ঘাটতির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ১৯,৫০০ কোটি টাকায় এসে পৌঁছেছে। ফলে বণ্টন সংস্থাগুলি লাভের কড়ি গোনা দূরের কথা, পুরো খরচই তুলতে পারছে না।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঠিক এই বিষয়েই দিল্লি সরকারকে সতর্ক করেছিল বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। বিদ্যুৎ দফতরের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে কমিশন জানায়, গত দু’তিন বছর ধরে বিদ্যুতের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় দিল্লির বাসিন্দার মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অথচ বিদ্যুৎ কেনার খরচ বেড়েছে। রাজ্য সরকার নিজের হাতে বণ্টন সংস্থাগুলির ৪৯ শতাংশ মালিকানা রাখলেও, এগুলির জন্য বাজেট বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ সাধারণ মানুষের মনে ধারণা তৈরি হয়েছে, সরকারি অর্থ বরাদ্দর মানে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সাহায্য করা। তার ফলে বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের খরচ পুরোটাই বেসরকারি সংস্থাগুলিকে বইতে হচ্ছে। তার চাপ পড়ছে গ্রাহকদের ঘাড়ে। কমিশনের তাই পরামর্শ, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সাহায্য নিক দিল্লি সরকার। কারণ, অন্যান্য রাজ্যের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির আর্থিক সাহায্য মজবুত করার জন্য কেন্দ্র ইতিমধ্যেই অর্থসাহায্য দিয়েছে।
‘বিজলি কা বিল’ অর্ধেক করার প্রতিশ্রুতি পূরণে কেজরিওয়াল এখন মনমোহন-সরকারের দ্বারস্থ হন, না অন্য উপায় নেন, সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|