|
|
|
|
ঝুঁকি নিয়েই সমর্থনে কংগ্রেস
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
জানলাটা একটু হলেও ফাঁক করলেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালই।
গত ৮ ডিসেম্বরে দিল্লির বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে সব দরজাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কংগ্রেসের সামনে। এর ঠিক দু’সপ্তাহ পরে কিছুটা হলেও বদলালো শীলা দীক্ষিতদের অবস্থা। তাঁদের সমর্থন নিয়ে দিল্লিতে সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আর তার পরেই কোথাও একটা ক্ষীণতম জানলার খোঁজ পেলেন শীলারা।
কী সেই জানলা? কংগ্রেস নেতারা বলছেন, কেজরিওয়াল নবীন। এখন প্রশাসন চালাতে গিয়ে তিনি যদি ফেল করেন, তা হলেই একমাত্র পাশের আশা তৈরি হতে পারে শীলা দীক্ষিতদের। কী ভাবে? সে ক্ষেত্রে সমর্থন তুলে ভোটে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে পারে কংগ্রেস। আর সেই ভোটে দিল্লির মানুষ হয়তো তাঁদেরই আবার সুযোগ দিতে পারেন।
আজ দিল্লিতে সরকার গঠনের ব্যাপারে কেজরিওয়াল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেসের সেই মনোভাব স্পষ্ট হয়ে গেল। লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জঙ্গকে চিঠি দিয়ে ক’দিন আগে কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, তাঁরা আপ-কে নিঃশর্ত সমর্থন জানাতে প্রস্তুত। সেই কংগ্রেসেরই আজকের বক্তব্য, কোনও সমর্থনই নিঃশর্ত নয়। শীলা পরিষ্কার বলেন, “ওঁদের পারফরম্যান্সের ওপরেই সমর্থনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। আপ যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে জন সমর্থন পেয়েছে, কংগ্রেস চাইছে তার রূপায়ণ করে দেখাক নতুন সরকার। যদিও কংগ্রেস জানে, যে এই সব প্রতিশ্রুতি রূপায়ণ করা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।” |
|
কনস্টিটিউশন ক্লাবের ভিতরে চলছে আপ বিধায়কদের সভা। বাইরে সমর্থকদের ভিড়। ছবি: পিটিআই। |
তা হলে আপ-কে কেন সমর্থন জোগাচ্ছে কংগ্রেস? যে শীলা-শাসনের অবসানে বড় অনুঘটকের কাজ করেছে আম আদমি পার্টি, তাদের জন্য এত দরাজ হওয়ার পিছনে কারণ কী? সন্দেহ জাগছে অনেকের মনেই। কারণ, কংগ্রেস যদি সমর্থন না দিত, কারও কিছু বলার ছিল না।
সেই রহস্য ভেদ করতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ছেন কংগ্রেস নেতারাই। ঘরোয়া আলোচনায় অরবিন্দ সিংহ বা জয়প্রকাশ অগ্রবালের মতো নেতারা বলছেন, আর কীইবা করতে পারত কংগ্রেস? তাঁদের মতে, আপাতত সব দিকে থেকে বিপদ কংগ্রেসের। কেন? তাঁদের ব্যাখ্যা, কংগ্রেস যদি আপ-কে সমর্থন না করে, তা হলে দিল্লিতে আজ না হোক কাল, ভোট অনিবার্য। কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা, এ বারে তো তা-ও আটটা জিতেছে দল, আগামী ছ’মাসের মধ্যে ভোট হলে তা-ও মিলবে কি না সন্দেহ। তাই আগামী এক বছরের মধ্যে দিল্লিতে ভোট চায় না কংগ্রেস। দলের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, তা-ও যদি কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার থাকতো, তা হলে হয়তো এক বছর রাষ্ট্রপতি শাসন চালিয়ে ভোটে যাওয়া যেত। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে লোকসভা ভোট। তার পরে কেন্দ্রে তারা ক্ষমতায় ফিরবে কি না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এই অবস্থায় আপ-কে সমর্থন দিয়ে অন্তত আপাতত নিজেদের পিঠ বাঁচিয়েছে কংগ্রেস।
এই অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই পরের প্রশ্ন, এ বার কী কৌশল নেবে কংগ্রেস? কত দিনই বা তারা সমর্থন জোগাবে কেজরিওয়ালদের? কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, আগামী ছ’মাস মধুচন্দ্রিমা। তাই এখনই সরকার ফেলার প্রশ্ন নেই। তা ছাড়া, নানা অঙ্কে এখনই ভোটে যেতেও চায় না কংগ্রেস। সব থেকে বড় কথা, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতায় এখনও ঘাটতি রয়েছে। এমনকী, এই যে তারা আপ-এর সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে, সেখানেও সেই বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবই দেখতে পারছেন দিল্লিবাসী। কারণ, সমর্থন তুলে সরকার ফেলে দেওয়ার নজির তো কম নেই কংগ্রেসের। অতীতে কেন্দ্রে চন্দ্রশেখর সরকার ফেলতে তারা নিয়েছিল মাত্র চার মাস।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, এমনকী কমনওয়েলথ গেমস থেকে শুরু করে দিল্লিতে শীলা সরকারের কাজকর্ম নিয়ে কেজরিওয়াল দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দিলেও এখনই সমর্থন প্রত্যাহার সম্ভব হবে না। এমনিতেই রাহুল গাঁধী এখন দুর্নীতিমুক্ত শাসন কায়েম করার কথা বলছেন। এর পর দুর্নীতির তদন্ত হলে কংগ্রেসের পক্ষে বিরোধিতা করা দ্বিচারিতারই সামিল হবে।
তবে এ-ও ঠিক যে, কংগ্রেস সুযোগের অপেক্ষায়। তার ইঙ্গিত দিয়ে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে দিল্লির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ বলেন, “যে ১৮টি বিষয়ে কংগ্রেসের মুচলেকা চেয়েছিল আপ, তার মধ্যে ১৬টি বিষয়ই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। একমাত্র লোকপাল বিল পাশ ও দিল্লিকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার ব্যাপারে বিধানসভায় কংগ্রেসের সমর্থন প্রয়োজন।” যার অর্থ, আপ-এর বাকি পদক্ষেপগুলি নিয়ে সমালোচনার পথ খুলেই রাখতে চাইল কংগ্রেস। সে ক্ষেত্রে দু’টি বিষয়কে এখন পাখির চোখের মতো দেখতে চাইছে কংগ্রেস। এক বিদ্যুতের মাসুল ৫০% কমিয়ে দেওয়া। ও পরিবার পিছু দিনে বিনামূল্যে সাতশো লিটার জল সরবরাহ।
কংগ্রেসের বক্তব্য, দিল্লিতে এখন লোডশেডিং হয় না বললেই চলে। কিন্তু মাসুল কমিয়ে লোডশেডিং শুরু হলে আন্দোলনে নামবে কংগ্রেস। একই ভাবে দিল্লি সাতশো লিটার জল সরবরাহ না হলেও আন্দোলন হবে। তবে একই সঙ্গে রাহুলের নির্দেশে মহল্লা স্তরেও সক্রিয় হতে হবে দলকে। আপ-এর সঙ্গে তাঁরা যে অন্য সব ক্ষেত্রে দূরত্ব রাখছেন, সেটা বোঝা গিয়েছে কংগ্রেস নেতাদের কথাতেই। তাঁরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আপ সরকারকে সমর্থনের মানে এই নয় যে, দু’পক্ষের মধ্যে জোট হচ্ছে। বরং লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এবং আপ পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়বে। আগামী কয়েক মাসে কেজরিওয়াল ভাল কাজ করে দেখালে লোকসভা ভোটে দিল্লিতে দলের সাতটি আসন হাতছাড়া হওয়ার ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী আজ থেকেই করছেন কংগ্রেস নেতারা। ক্ষীণ আশা এটুকুই যে, কেজরিওয়াল যদি গোড়াতেই ব্যর্থ হন, তা হলে দিল্লিতে লোকসভা ভোটে তবু লড়াইয়ে থাকতে পারে কংগ্রেস।
বস্তুত, কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, আপ-এর ষোল আনা বিধায়ক আনকোরা। দিল্লিতে ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করা থেকে শুরু করে মেয়ের বিয়ে, হাসপাতালে ভর্তির মতো বিষয়ে গরিবরা স্থানীয় বিধায়কের শরণাপন্ন হন। কিন্তু আপ বিধায়কদের সেই প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই। এই সুযোগটাও কাজে লাগাতে হবে দলকে।
এর পরেও কিন্তু স্বস্তি নেই কংগ্রেসে। বরং দলের নেতারাই স্বীকার করছেন, কংগ্রেসের এমন সব কৌশল কোনও রকেট বিজ্ঞান নয়। কেজরিওয়ালও নিশ্চয়ই সব কিছু আঁচ করছেন। তাই কংগ্রেসের এ-ও আশঙ্কা, দিল্লিতে সরকার চালানোর পরিবর্তে এর পরেও গ্যালারির দিকে তাকিয়েই খেলতে পারেন আপ প্রধান। মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরে জন লোকপাল বিল পাশ করে এবং জল ও বিদ্যুতের মাসুল কমানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিয়ে সরকার ভেঙে ভোটে চলে যেতে পারেন তিনি। যাতে পরের দফায় দিল্লিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে আপ।
তখন কংগ্রেসের এই ঝুঁকিটাও হয়তো আর কাজে লাগবে না। |
|
|
|
|
|