মুমূর্ষু হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে অক্সিজেন জোগানোর পথ খুঁজতে আজ, মঙ্গলবার ফের বৈঠকে বসছে সংস্থার পরিচালন পর্ষদ।
তার আগে পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার নবান্নে বৈঠক করে রাজ্য সরকারের মন্ত্রিগোষ্ঠী। সেখানে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, কী ভাবে পেট্রোকেমের জন্য কার্যকরী মূলধন জোগাড় করা যায়, তার সম্ভাব্য দিকগুলি খতিয়ে দেখেন মন্ত্রিগোষ্ঠীর সদস্যরা। ওই সূত্রেই খবর, বর্তমান অংশীদারদের ‘রাইটস শেয়ার’ ইস্যু করে পুঁজি সংস্থানকেই আজকের বৈঠকে গুরুত্ব দেবে রাজ্য।
কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, এতে সমস্যার সমাধান তো দূর অস্ৎ, বরং নতুন এক প্রস্ত আইনি লড়াই শুরু হওয়ার সম্ভাবনা। কারণ, রাইটস শেয়ার ইস্যু করার মানে, ইতিমধ্যেই যে ইক্যুইটি শেয়ার রয়েছে, তার প্রতিটি পিছু আনুপাতিক হারে নতুন শেয়ার আনা। ফলে যার হাতেই ইক্যুইটি শেয়ার থাকুক না কেন, সে তার ভিত্তিতে রাইটস শেয়ার পাওয়ারও অধিকারী। আর ঠিক এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল।
তাদের যুক্তি, যদি প্রতিটি ইক্যুইটি শেয়ারের জন্যই রাইটস শেয়ার প্রাপ্য হয়, তা হলে ওই নতুন শেয়ার ইস্যু করতে হবে বিতর্কিত ১৫.৫ কোটি শেয়ারের (যার মালিকানা দাবি করে রাজ্য সরকার ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠী, দু’পক্ষই) জন্যও। কিন্তু ওই সাড়ে ১৫ কোটি শেয়ারের মালিকানা আদপে কার, তারই মীমাংসা হয়নি এখনও। শুধু তা-ই নয়। এ নিয়ে রাজ্য ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে আটকে গিয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েলকে রাজ্যের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া। এই আইনি লড়াই এমনকী আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে টেনে নিয়ে যেতেও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে এই পরিস্থিতিতে যদি ওই বিতর্কিত শেয়ারের ভিত্তিতে রাইটস শেয়ার ইস্যু করা হয়, তা হলে তার মালিকানা আবার কার উপর বর্তাবে, নতুন করে আইনি জটিলতা তৈরি হবে তা নিয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, রাইটস ইস্যু ঠেকাতে ইতিমধ্যেই আদালতে গিয়েছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। তবে সরকারের দাবি, আদালত এখনও এ নিয়ে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। ফলে পর্ষদে রাইটস শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে টাকা তোলার সিদ্ধান্ত নিতে বাধা নেই।
কারও-কারও মতে, রাইটস শেয়ার ইস্যু করলে, শুধু যে কার্যকরী মূলধনের সুরাহা হবে, তা-ই নয়। এর মাধ্যমে বিতর্কিত সাড়ে ১৫ কোটি শেয়ারের চক্কর এড়িয়ে সিংহভাগ অংশীদারিও তুলে দেওয়া সম্ভব হবে ইন্ডিয়ান অয়েলের হাতে। কারণ, যদি কোনও অংশীদার ওই ‘রাইটস শেয়ার’ কিনতে না-পারে, তা হলে তার অংশটুকু অন্য কোনও অংশীদার কিনতে পারবে। এই ব্যবস্থায় রাজ্য বা ব্যাঙ্কের রাইটস শেয়ার ইন্ডিয়ান অয়েল কিনে নিলে, তাদের অংশীদারি বেড়ে যাবে। ফলে তখন বিতর্কিত ১৫.৫ কোটি শেয়ারের বাইরেও সংস্থার সিংহভাগ শেয়ার আইওসি-র হাতে চলে যাওয়া অসম্ভব হবে না।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই ধারণা হয়তো বাস্তব পরিস্থিতির অতি সরলীকরণ। কারণ, প্রথমত রাইটস শেয়ার বিক্রিরও বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। তার উপর মূল ইক্যুইটি শেয়ারের একটা বড় অংশের মালিকানাই যেখানে বিতর্কিত, সেখানে তার ভিত্তিতে ইস্যু করা রাইটস শেয়ার মারফত অংশীদারি বিক্রি আদৌ কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সন্দিহান তাঁরা। বরং এ নিয়ে রাজ্য বনাম চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর আইনি লড়াই আরও ঘোরালো হবে বলেই তাঁদের আশঙ্কা।
এ দিকে, সোমবার ঋণগ্রহীতাদের প্রতিনিধি হিসাবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় মুম্বইয়ে ঋণদাতা সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তা নিয়ে আপত্তি জানান এইচপিএলের এমডি উত্তম বসু। সংস্থার বক্তব্য, পূর্ণেন্দবাবু ঋণগ্রহীতাদের প্রতিনিধি নন। শুধু এমডি-ই ওই প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। ফলে তাদের মতে, ঋণদাতা সংস্থাগুলির সঙ্গে ওই বৈঠক বেআইনি।
|