মারা গেলেন এ কে-৪৭ রাইফেলের স্রষ্টা মিখাইল কালাশনিকভ। বিশ্বে অন্য যে কোনও আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ কে ৪৭-এর গুলিতে। কিন্তু কারিগরি দক্ষতার চিহ্ন হিসেবেও তা স্বীকৃত সারা বিশ্বে।
রাশিয়ার কুরিয়েন্সকি জেলার এক কৃষক পরিবারে জন্ম মিখাইলের। এক সময়ে স্বপ্ন দেখতেন কৃষি উপকরণ তৈরির। পরে একটি ট্র্যাক্টর উৎপাদন কেন্দ্রে কাজ করার সময়ে ঘটনাচক্রে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন অস্ত্রশস্ত্রের দিকে। ১৯৩৮ সালে সোভিয়েত লাল ফৌজে যোগ দেন তিনি।
|
মিখাইল কালাশনিকভ। |
নিয়োগের পরেই মিখাইলের কারিগরি দক্ষতা নজরে আসে লাল ফৌজ কর্তাদের। তাঁকে ট্যাঙ্ক বাহিনীতে মেকানিকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের সময়েই কিছু আবিষ্কার করেন তরুণ মিখাইল। শুধু ট্যাঙ্ক নয়, সেই আবিষ্কার অন্য অস্ত্রেও রূপান্তর আনে। সে জন্য তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে একটি ঘড়ি উপহার দেন বিখ্যাত রুশ সেনানায়ক গ্রেগরি জুকোভ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪১-এর অক্টোবরে আহত হন মিখাইল। হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়টাই তাঁর পরবর্তী জীবন বদলে দেয়।
হাসপাতালে অনেক সোভিয়েত সেনার মুখে নিজেদের রাইফেলের সমস্যার কথা শোনেন মিখাইল। যুদ্ধক্ষেত্রে নাৎসিদের উন্নত স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দেখেই তাঁর মাথায় সোভিয়েত ফৌজের জন্য ওই ধরনের রাইফেল তৈরির ভাবনা আসে।
প্রথমে একটি সাব মেশিনগান তৈরির কাজে লাগেন মিখাইল। তাঁর প্রথম নকশাটি সেনা গ্রহণ করেনি। কিন্তু মিখাইলের প্রতিভা চোখ এড়ায়নি কর্তাদের। ১৯৪২ সাল থেকে তাঁকে সেনার রাইফেল উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর পরবর্তী দু’টি নকশা কিছু পরিবর্তনের পরে গ্রহণ করে সেনা।
তবে ১৯৪৭ সালে বাজিমাৎ করেন মিখাইল। আত্মপ্রকাশ করে এ কে-৪৭। ১৯৪৯ সালে সোভিয়েত সেনার ব্যবহারের অন্যতম অস্ত্র হয়ে ওঠে ওই রাইফেল। এর পরেও তাঁর ভাণ্ডার থেকে বেরিয়েছে একেএম, এ কে-৭৪-এর মতো অস্ত্র।
হাল্কা আর জঙ্গল, মরুভূমি-সব যুদ্ধক্ষেত্রেই নিজের উপযোগিতার পরিচয় দেওয়ায় সারা বিশ্বে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কালাশনিকভ রাইফেল। কেবল সেনা নয়, নানা দেশে সক্রিয় বিপ্লবী ও জঙ্গিদের প্রিয় অস্ত্র হয়ে উঠেছিল এই অস্ত্র। বিভিন্ন সময়ে এই বিপ্লবী ও জঙ্গিদের সাহায্য করেছে নানা দেশের সরকার।
গোপনে সরবরাহ করার ক্ষেত্রেও এই অস্ত্র বিশেষ উপযোগী। ১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে দাউদ ইব্রাহিমের সহযোগীদের পাকিস্তান বিস্ফোরকের পাশাপাশি এ কে-৪৭ও সরবরাহ করেছিল। অভিনেতা সঞ্জয় দত্তকেও কালাশনিকভ রাইফেল সরবরাহ করেছিল অপরাধ জগৎ। যার ফলে তিনি এখন জেলবন্দি।
মারাত্মক এই অস্ত্রের স্রষ্টা হিসেবে কি মনঃকষ্টে ভুগতেন ৯৪ বছরের কালাশনিকভ? এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, “না, আমি শান্তিতেই ঘুমোই। অন্য পথে ফয়সালা না করতে পেরে রক্তপাতকে বেছে নিয়েছেন রাজনীতিকরা। আমি নই।’’ |