ভারতের প্রাক্তন ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়ের গ্রেফতার ঘিরে কম জলঘোলা হয়নি।
ভিসায় পরিচারিকা সঙ্গীতা রিচার্ডের বেতন সংক্রান্ত ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন দেবযানী। কিন্তু অভিযোগ ওঠার বহু আগে থেকেই সঙ্গীতা উধাও হয়ে যাওয়ায় উঠেছে নানা প্রশ্ন।
তবে আমেরিকায় ভারতীয় কূটনীতিকদের বাড়িতে কাজ করতে আসা পরিচারক-পরিচারিকাদের এই ভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়, জানিয়েছেন প্রভু দয়াল, যিনি ২০০৮-এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩-র ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিউ ইয়র্কে ভারতের কনসাল জেনারেল হিসেবে কাজ করেছেন। চিনতেন দেবযানীকেও। প্রভুর কাজের মেয়াদের শেষের দিকে দেবযানী তাঁর ডেপুটি হিসেবে কাজও করেছেন। দেবযানীর পরিচারিকা সঙ্গীতাকেও চিনতেন।
প্রভুর কথায়, “কনসুলেটে বহু বার সঙ্গীতাকে দেখেছি। দেখে মনে হত, ও বেশ খোশমেজাজেই আছে। যথেষ্ট ভদ্র ব্যবহার। শিক্ষিত মহিলা। পরিচারিকারা সাধারণত যেমনটা হয়, তেমন নয়।” কিন্তু প্রভুর মতে, সঙ্গীতার মতো ভারত থেকে কাজ করতে আসা অনেককেই ভুল পথে চালিত করা হয়। তিনি জানাচ্ছেন, গত কয়েক দশকে আমেরিকায় ভারতীয় কূটনীতিকদের পরিচারিকা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা আকছার ঘটেছে। আমেরিকায় পাকাপাকি ভাবে বাস করার স্বপ্ন নিয়ে এরা বেআইনি ভাবে থেকে যায় এখানে। তাই এ নিয়ে তিনি সতর্ক করেছিলেন দেবযানীকেও। শুধু পরিচারিকা নয়, এই পথে আমেরিকায় থাকতে চান নিরাপত্তা রক্ষীরাও।
প্রভু বলছেন, এই ধরনের ঘটনা যখনই ঘটেছে ভারতের তরফে মার্কিন প্রশাসনকে তা জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রাক্তন কনসাল জেনারেলের দাবি, “নিখোঁজ পরিচারকদের ধরতে কিছুই করেনি আমেরিকা। কারণ এই দেশে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বহু মানুষ থাকে, যারা কম পয়সায় শ্রমের জোগান দেয়।”
২০০০ সালের অক্টোবরে মার্কিন কংগ্রেস ‘পাচার এবং হিংসা প্রতিরোধ আইন (টিভিপিএ)’ এনেছিল। যে আইনবলে নিখোঁজ পরিচারক-পরিচারিকারা যদি অভিযোগ জানান, (মার্কিন আইন অনুযায়ী, ঠিকমতো বেতন পাচ্ছেন না বা মেয়াদ ফুরোলেও জোর করে কাজ করানো হচ্ছে ইত্যাদি) সে ক্ষেত্রে তাদের তিন বছরের জন্য ‘টি ভিসা’ দেওয়া হয়। যা পরবর্তীকালে পাকাপাকি ভাবে থাকার সুবিধাও দিতে পারে। প্রভুর মতে, পরিচারিকারা সেই উদ্দেশ্যেই অভিযোগ জানান যে নিজ দেশে ফিরলে তাঁদের ভয়ানক অসুবিধায় পড়তে হবে। যেমনটা সঙ্গীতাও করেছেন। প্রভু বলছেন, “ভিসায় ভুল তথ্য দেওয়ার দায় তাই দেবযানীর নয়। সঙ্গীতাই কাজের চুক্তি সংক্রান্ত তথ্য ভুল ভাবে তুলে ধরেছিলেন কনসুলার অফিসারের কাছে। যাতে পরবর্তীকালে কৌশলে টি ভিসা পেতে অসুবিধা না হয়।”
২০১০-এ নিউ ইয়র্কে পরিচারক-পরিচারিকাদের অধিকার সংক্রান্ত বিল আসার পরে পরিচারিকাদের মধ্যে অভিযোগ জানানোর ধুম পড়ে যায় বলে জানিয়েছেন প্রভু।
নীনা মলহোত্র নামে আর এক কনসালের অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন প্রভু। নিউ ইয়র্কে তিন বছর কনসালের পদে থাকা নীনার কাছে কাজ করতেন শান্তি গুরুঙ্গ। তাঁকেও চিনতেন প্রভু। কাজ নিয়ে তিনিও বেশি খুশি ছিলেন বলে দাবি। কিন্তু নীনার বদলির ঠিক আগে শান্তির নিখোঁজ হওয়ার খবরে চমকে যান প্রভু। পরে তিনি জানতে পারেন, নীনার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন শান্তি। আটকে রাখা, জোর করে কাজ করানো, খারাপ ব্যবহার টি ভিসা হাসিল করার জন্য এমন নানা অভিযোগ তুলেছিলেন শান্তি।
শেষমেশ প্রভু তুলে ধরেছেন নিজের অভিজ্ঞতাও। ভারতে তাঁর পরিচারিকা ছিলেন সন্তোষ ভরদ্বাজ নামে এক মহিলা। তার পরে তাঁকে মরক্কোয় চার বছর কাজ করিয়েছিলেন প্রভু। ২০০৯ সালে সন্তোষকে নিয়ে আসেন নিউ ইয়র্কে। এগারো মাস পরে ওই পরিচারিকা উধাও হয়ে যান। তারও বেশ কিছু মাস পরে প্রভু জানতে পারেন, সন্তোষ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রভুর মন্তব্য, “জোর করে কাজ করানো, ঠিকমতো বেতন না দেওয়া, খারাপ জায়গায় থাকতে বাধ্য করা এমন সব অভিযোগ আনা হয়েছিল আমার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, যৌন হেনস্থার অভিযোগও করেন সন্তোষ। এই সবই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।” পরে অবশ্য খারাপ জায়গায় থাকতে বাধ্য করা এবং যৌন হেনস্থার অভিযোগ বাদ দেন সন্তোষের আইনজীবী। কারণ সেটা ছিল সবৈর্ব মিথ্যে। আর সন্তোষ কনসুলেট বিল্ডিংয়ের যে সুসজ্জিত অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন, তা জানিয়েছিলেন বেশ কিছু সাক্ষী। তবে প্রভুর আফশোস, অভিযোগ তুলে নেওয়ার খবর অবশ্য প্রচার হয়নি সে ভাবে। |