আদালতে দ্রুত বিচার মিলছে না অভিযোগে সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনশন করলেন কালনা উপ সংশোধনাগারের আসামিরা।
কালনা আদালতের পাশেই উপসংশোধনাগারে বর্তমানে রয়েছেন ৫১ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা আসামি। জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে কয়েক জন আসামি অভিযোগ করেন, দ্রুত বিচার মিলছে না। সোমবার সকাল থেকে তাঁরা অনশন করেন। জেলের কর্মীরা সকালে চা দিতে গেলে আসামিরা নিতে অস্বীকার করেন। সকালের খাবারও তাঁরা খাননি। অনশনকারীরা জেল কর্তৃপক্ষকে জানান, আদালতে অনেক দিন পরপর তাঁদের মামলা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ মামলার দিনে সাক্ষী আসেন না, অথবা সরকারি আইনজীবী আসেন না। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের থেকে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার বিষয়ে লিখিত আশ্বাস চান আসামিরা। কিন্তু বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন হওয়ায় জেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি।
আদালত ও জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলা বাড়ার পর খবর যায় আদালতে। সাড়ে ১২টা নাগাদ কালনা ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারপতি অখিলেশ কুমার পাণ্ডে অনশনকারীদের প্রতিনিধিদের তাঁর এজলাসে ডাকেন। অনশনরত আসামিদের মধ্যে তিন জন বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সমস্যার কথা বলেন। বিচারক ওই আসামিদের জানান, গত ১২ মাসে তাঁদের মামলায় ১৯ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অবনীকান্ত লাহা ফের বেলা ১ টা ১৫ মিনিট নাগাদ সাত জন আসামিকে তাঁদের এজলাসে ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেন। বেলা দেড়টা নাগাদ সংশোধনাগারের কর্মীরা চিনি, জল ও বিস্কুট খাওয়ার অনুরোধ করে আসামিদের। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। বিকেল ৪টে ১৫ মিনিট নাগাদ মহকুমা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট আশিস চৌধুরী সংশোধনাগারে এসে আসামিদের সঙ্গে কথা বলেন। উপ সংশোধনাগারের জেলার অনির্বাণ রায় আসামিদের অনশন তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ আসামিরা জেলারকে জানায়, আগামী ২রা জানুয়ারি আদালত খুললে তাঁদের মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। জেলার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দেন। এর পর রাতে অনশন ওঠে। কালনা উপসংশোধনাগারের জেলার অর্নিবাণ রায় বলেন, “আসামিদের সরবত খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। রাতে তাঁরা সাধারণ খাবার খেয়েছে। তবে অনশন করার আগে আসামিদের দাবিগুলি প্রাথমিক ভাবে আমাদের জানানো উচিত ছিল।”
অনশন চলাকালীন আদালত চত্বরে আসেন কালনার উপ-পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ। তিনি বলেন, “বিচার ব্যবস্থায় দেরি হলে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি হবেই। বিষয়টি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুর্ভাগ্যজনক।” কালনা বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পার্থসারথী কর বলেন, “কালনা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে যে পরিমাণ মামলা জমে রয়েছে সে তুলনায় বিচারক নেই। মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ার এটা একটি কারণ। প্রশাসনের উচিত মামলার দ্রুত নিষ্পতির জন্য আদালতের সংখ্যা বাড়ানো।” |