পরপর মন্দিরে চুরি কালনায়
জেলা জুড়ে দেবস্থানে দুষ্কর্ম চলছেই।
রবিবার রাতেও মন্তেশ্বরের পুঁড়শুড়ি এলাকায় পরপর তিনটি মন্দিরে চুরি হয়। সোমবার সকালে খবর চাউর হতেই চুরি যাওয়া গয়না উদ্ধার, দোষিদের গ্রেফতার এবং এলাকায় পুলিশ ক্যাম্পের দাবিতে ঘণ্টা চারেক রাস্তা অবরোধ করেন বাসিন্দারা। মন্দির তিনটি থেকে অন্তত ছ’লক্ষ টাকার সোনা ও রূপোর গয়না চুরি গিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।
বহু বছর ধরেই ওই গ্রামে কালী মন্দির, গোপীনাথ জিউ ও রাধাগোবিন্দের মন্দির রয়েছে। এর মধ্যে কালী মন্দির ও গোপীনাথ জিউ মন্দিরের দেখাশোনা করে গ্রামের বারোয়ারি। তিন মন্দিরেই ভক্তেরা গয়না, শাড়ি ও আরও নানা জিনিস মানত করেন। মানতের গয়না মূর্তির গায়েই পরিয়ে রাখা হয়। রবিবার সন্ধ্যায় অভ্যাস মতোই পুজো শেষে মন্দিরে তালা বন্ধ করা হয়। সকালে তিন মন্দিরের পুরোহিত হরিগোপাল মিশ্র, পার্থ সরকার ও সুভাষ আচার্য দেখেন তালা ভাঙা, লণ্ডভণ্ড হয়ে রয়েছে মূর্তি-সব পুজোর যাবতীয় জিনিসপত্র। গ্রামবাসীদের ধারণা, রাতে কৃষি মেলা উপলক্ষে চলা পাঁচ দিনের যাত্রাপালার আসরে গিয়েছিলেন গ্রামের অনেকেই। পাড়া ফাঁকা থাকার ওই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
গাছের গুঁড়ি, সিমেন্টের চাঙর ফেলে চলছে অবরোধ। — নিজস্ব চিত্র।
কালী মন্দিরটিতে ঢুকতে গেলে বারান্দা ও ঠাকুর ঘরের মাঝে থাকা দু’টি লোহার গেট পেরোতে হয়। ওই দুটি গেটেরই তালা ভেঙেছে দুষ্কৃতীরা। মন্দির থেকে প্রায় দশ ভরি গয়না খোওয়া গিয়েছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। গোপীনাথ জিউ মন্দিরেও প্রথমে রয়েছে একটি লোহার গ্রিল, পরে কাঠের দরজা। এই দু’জায়গার তালা ভেঙে ঢুকে দুষ্কৃতীরা প্রায় ৪৫ ভরি রূপোর গয়না ও মূর্তির সোনার টিপ চুরি করে বলে অভিযোগ। খোওয়া গিয়েছে মন্দিরের নারায়ণ শিলা, দেড় ফুট উচ্চতার কষ্টি পাথরের কৃষ্ণ মূর্তির বাঁশি, মুকুট-সহ নানা গয়না। একই কায়দায় রাধাগোবিন্দ মন্দিরেরও কাঠের দরজা ভাঙে দুষ্কৃতীরা। মন্দিরের সেবাইত সুভাষ আচার্যের দাবি, ভরি দশেক সোনার গয়না ও একটি থলিতে রাখা প্রণামীর হাজার চারেক টাকা চুরি গিয়েছে। থলিটি সোমবার সকালে মন্দিরের পাশেই পড়ে ছিল। রাধাগোবিন্দ মন্দিরের ভেতর একটি শিবলিঙ্গ ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকতেও দেখা যায়। গ্রামবাসীদের অনুমান, ওই শিবলিঙ্গের গায়ে রূপোর পৈতে জড়ানো ছিল। সেটা খুলতে গিয়েই দুষ্কৃতীরা মূর্তিটি ভেঙে ফেলেছে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিজেপি-র জেলা যুব মোর্চার সভাপতি সুপ্রকাশ মণ্ডলের কথায়, “গ্রামের মানুষ যাত্রার আসরে ব্যস্ত ছিলেন। সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছে ওরা। ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার মানুষ। পুলিশের উচিত দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করা।” এলাকার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য তথা ওই কালী মন্দির কমিটির সদস্য আশিস গণও বলেন, “প্রাচীন ওই তিনটি মন্দিরের সঙ্গে বহু মানুষের আবেগ জড়িয়ে ছিল। ভাবতেই পারিনি এমনটা হবে।” এর আগেও ওই কালী মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটেছিল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তেরো বছর পেরিয়ে গেলেও পুলিশ সেই ঘটনার কিনারা করতে পারেনি।
সাত সকালে তিন মন্দিরে চুরির ঘটনা শুনে আশপাশের বহু মানুষ ছুটে আসেন। অনেকে কান্নাকাটিও জুড়ে দেন। খবর পৌঁছয় মন্তেশ্বর থানাতেও। তবে পুলিশ তদন্তে নামার আগে সকাল ৮টা থেকে পুঁড়শুড়ি মোড়ে অবরোধ শুরু করেন স্থানীয় মানুষ। অবরোধকারী অর্ঘ্য গণ, রাজা চৌধুরী, সোমনাথ মল্লিকেরা জানান, আগে এলাকায় একটি পুলিশ ক্যাম্প ছিল। বছর দশেক আগে সেটি তুলে নেওয়া হয়। তারপর থেকেই আশপাশের এলাকায় দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি বেড়েছে। পাশাপাশি এলাকায় অবৈধ মদ বিক্রি এবং সমাজবিরোধীদের যাতায়াত শুরু হয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। বেলা ১২টা পর্যন্ত অবরোধ চালান তাঁরা। এর জেরে চুয়াডাঙা-কুসুমগ্রাম ও পুঁড়শুড়ি-মন্তেশ্বর রোডে ব্যপক যানজট হয়। পরে মন্তেশ্বরের ওসি ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ক্যাম্প খোলা ও দোষিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.