বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক যুবতী। কিন্তু তারপরেও পুলিশ অভিযুক্তকে ধরছে না, উল্টে তার চরিত্র নিয়েই তদন্তকারী আধিকারিক এলাকায় ‘খারাপ কথা’ বলছেন বলে ওই যুবতীর অভিযোগ।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায়ের কাছে অভিযোগ জানাতে যান তিনি। কিন্তু অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অফিসে না থাকায় অভিযোগ জানাতে পারেননি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দবাবু অবশ্য বলেন, “আমি তো অফিসেই ছিলাম। কেন উনি আমাকে পেলেন না, তা জানিনা। যাই হোক উনি কোনও লিখিত অভিযোগ করে থাকলে সেটা আমার কাছে আসবে। সেটা দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।”
বছর আটেক আগে আউশগ্রামের বাসিন্দা ওই যুবতীর সঙ্গে উড়িশ্যার এক ব্যক্তির বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পরে স্বামী বাইরে কাজে গিয়ে আর ফিরে না আসায় মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকতেন ওই যুবতী। সংসারের প্রয়োজনে ভাতারের ওড়গ্রামে সেলাইয়ের কাজ শিখতে শুরু করেন তিনি। সেখানেই তাঁর সঙ্গে গাড়ি চালক, গুসকরার নিউ টাউনের বাসিন্দা প্রদীপ তাঁতির পরিচয় হয়। প্রদীপবাবু তাঁকে স্বামীর খোঁজ এনে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তাঁর কাছ থেকেই গত ৫ অগস্ট তিনি জানতে পারেন, তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে।
শোকার্ত ওই যুবতীর পাশে দাঁড়ান প্রদীপবাবু। তাঁদের মধ্যে সম্পর্কও তৈরি হয়। ওই যুবতীর বাপের বাড়িতেও যাতায়াত শুরু করেন প্রদীপবাবু। ওই যুবতীর অভিযোগ, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাস করেন প্রদীপবাবু। এমনকী প্রদীপবাবুর কথায় মজফ্ফরপল্লির জমি বিক্রি করে গুসকরা শহরে বাড়ি তৈরির জন্য প্রদীপবাবুকে তিনি ২০ হাজার টাকা দেন বলেও ওই যুবতীর দাবি। গুসকরার কালীতলার কাছে বাড়ি ভাড়া নিয়ে সপরিবারে বাসও শুরু করেন তাঁরা। ওই যুবতীর দাবি, এরপরেই তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। ৭ ডিসেম্বর গুসকরার এক চিকিৎসকের কাছেও যান তাঁরা। অভিযোগ, এরপরেই গর্ভপাতের জন্য চাপ দিতে থাকেন প্রদীপবাবু। ওই যুবতীর দাবি, তিনি এতে রাজি না হওয়ায় প্রদীপবাবু গা ঢাকা দেন।
এরপরে আউশগ্রাম থানায় প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৩৭৬, ৪৯৩, ৪১৭, ৪২০ ও ৪০৬ ধারায় মামলা দায়ের করে। কিন্তু যুবতীর অভিযোগ, পুলিশ অভিযুক্তকে সেভাবে খোঁজ করছে না। রাতে মাঝেমাঝে গুসকরার নিউটাউনে প্রদীপের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করলেও, প্রদীপ সারাদিন গুসকরা শহর ও অন্যত্র গাড়ি চালিয়ে বেড়ালেও, তাঁকে পুলিশ ধরছে না। উল্টে, ওই মহিলার বাপের বাড়ি পাড়ায় গিয়ে ওই মামলার তদন্তকারী অফিসার রফিকুল ইসলাম তাঁর চরিত্র নিয়ে খারাপ কথা বলছেন বলে ওই যুবতীর অভিযোগ। যুবতীর দাবি, মাঝেমাঝে রাতে তাঁকে ফোন করে ওই অফিসার বলছেন, এখুনি তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষা হবে। তাই তাঁকে রাতেই তাঁর সঙ্গে বর্ধমানে যেতে হবে।
তবে মামলার তদন্তকারী অফিসার, এসআই রফিকূল সাহেব অভিযোগ অস্বীকার করে সোমবার বলেন, “ওই যুবতী গুসকরা শহরের কোথায় থাকেন, তা আমি জানিনা। তদন্তের স্বার্থে মোজাফ্ফরপল্লিতে গিয়েছিলাম। সেখানে ওই মহিলার আত্মীয়া ও পরিচিতিদের কাছে ওঁর সন্ধান করেছিলাম। কেন তাঁকে খুঁজছি, সে ব্যাপারে তো কিছু কথা বলতেই হবে। সেটুকুই বলেছি। তবে আমি রাতে ওঁকে ফোন করিনি। তাছাড়া এখনও উনি মেডিক্যাল পরীক্ষা করাননি। আদালতের কাছে যে গোপন জবানবন্দি দিয়েছিলেন, সেটা দিতে ওঁর সঙ্গে গুসকরা ফাঁড়ির এক মহিলা কনস্টেবলকে পাঠানো হয়েছিল।” রফিকুল ইসলাম আরও জানান, অভিযুক্ত প্রদীপ তাঁতি পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে। সঙ্গে তাঁর দাবি, ছেলেটি বিবাহিত। ওর পাল্লায় পড়া কোনমতেই উচিত হয়নি ওই যুবতীর। |