হোটেল নয়, বরং কোনও পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ইন্দাসের কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।
বাড়িতে ফোন করে ডেকে বর্ধমান আদালত চত্বরে ডেকে মামার হাতে কিশোরীকে তুলে দিয়ে গিয়েছিল অভিযুক্ত যুবক। সোমবার রাত পর্যন্ত তার টিকির নাগাল পায়নি পুলিশ। কিশোরী বা তার মামার দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী তার ছবিও আঁকানো হয়নি।
গত ১৯ ডিসেম্বর বাঁকুড়ায় ইন্দাসের বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিল বছর সতেরোর মেয়েটি। বর্ধমান স্টেশনে রাত কাটানোর পরে রাজা নামে এক যুবক তাকে চাকরি দেওয়ার অছিলায় হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। মেয়েটি হোটেলের নাম বলতে পারেনি। তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের মনে হয়েছিল, বর্ধমান শহরে বন্ধ হয়ে যাওয়া তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি হোটেলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই চায়ের দোকান কোথায়, পুলিশ তা চিহ্নিত করতে পারেনি।
সোমবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি থাকা কিশোরীকে জেরা করে পুলিশ। তার পরেই অন্য একটা সম্ভাবনা পুলিশের মনে উঁকি দিতে শুরু করেছে। বর্ধমান থানা সূত্রের খবর, কিশোরী নেহাতই গ্রাম্য ও লেখাপড়া প্রায় জানেই না। ফলে অনেক কিছুই সে ঠিক করে বলতে পারছে না। পুলিশকে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছিলেন, স্টেশন থেকে বেরিয়ে রিকশা নিয়ে সে একটি চায়ের দোকানে নেমেছিল। সেখানেই অভিযুক্তের সঙ্গে তার দেখা হয়।
কিশোরীর কথা মতো, স্টেশন থেকে ওই হোটেলে যেতে ১০ মিনিট মতো লাগে। কিন্তু হোটেলের পথে কোনও সাইনবোর্ড তার চোখে পড়েনি। সামান্য লেখাপড়া জানায় সাইনবোর্ড থাকলে তা তার চোখে পড়ত বলেই মেয়েটির দাবি। দোতলার একটি ঘরে তাকে ধর্ষণ করা হয়। কিন্তু গোটা হোটেলে একটিও লোক তার চোখে পড়েনি। যে কারণে পুলিশের সন্দেহ, হোটেল নয়, তাকে কোনও পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তুলেছিল অভিযুক্ত।
মামলার তদন্তকারী অফিসার অরুণকুমার সোমকে অবশ্য কিশোরী জানিয়েছে, বাড়িটি দেখলে সে চিনতে পারবে। যুবকটি তাকে বলেছিল, তার বাড়ি বর্ধমান শহরের বাবুরবাগে। কিন্তু পুলিশ ওই এলাকায় ‘রাজা’ নামে এমন কোনও যুবকের খোঁজ পায়নি, যার সঙ্গে কিশোরী বা তার মামার দেওয়া চেহারার বর্ণনা মেলে। পুলিশের মতে, যুবকের ভুয়ো নাম বলে থাকতে পারে, বাবুরবাগে থাকার কথাও হয়তো সত্যি নয়।
পুলিশ আপাতত জোর দিচ্ছে যুবকের মোবাইল নম্বরের উপরে। ওই নম্বর থেকে ফোন করেই সে ইন্দাসে মেয়েটির বাড়িতে খবর দিয়েছিল। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্ত যে মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে মেয়েটির বাবাকে আদালত চত্বরে আসতে বলেছিল, সেটি আমরা পেয়েছি। ওই নম্বর থেকে কোথায়-কোথায় ফোন করা হয়েছিল, আমরা তার বিস্তারিত তালিকা (কল ডিটেলস) জোগাড় করছি।”
শনিবার রাতে কিশোরীর বাবাই বর্ধমানে এসে ওই মোবাইল নম্বর পুলিশকে জানিয়েছিলেন। তার পরে এতটা সময় চলে গেলেও কল ডিটেলস পাওয়া গেল না কেন? পুলিশের দাবি, মধ্যে রবিবার পড়ে যাওয়ায় সংস্থার অফিস বন্ধ ছিল। তাই কল ডিটেলস পাওয়া যায়নি। তবে এখন পুলিশের স্পেশাল অপারেশন উইং-কে কাজে লাগানো হচ্ছে। কল ডিটেলস না মিললে কিশোরীর বর্ণনা অনুসারে ওই যুবকের ছবি আঁকানো হবে। এখনও তা করা হয়নি কেন, তার সদুত্তর অবশ্য পুলিশকর্তারা দেননি।
বরং পরিস্থিতি এমন জটিল হয়ে যাওয়ার জন্য কিশোরীর মামাকেই বেশি দায়ী করছে পুলিশ। ভাগ্নীকে ফিরে পেয়ে তিনি রাজা নামে ওই যুবককে চা খাইয়ে, ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় দিয়েছিলেন। কিশোরী তখন চুপ করে ছিল। যুবক চলে যাওয়ার পরে মামা তার দিকে নজর দেন। আর তখনই সে কাঁপতে-কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে যায়। যদি প্রথমেই মামা তার সঙ্গে কথা বলতেন, তবে ভিড়ে ঠাসা আদালত চত্বর থেকে অভিযুক্ত পালিয়ে যেতে পারত না বলে মনে করছে পুলিশ। আদালতের বহু আইনজীবী এবং কর্মীও এ ব্যাপারে একমত।
কিশোরীর মামা অবশ্য যুক্তি দিচ্ছেন, “ভাগ্নী যে সারারাত বাড়ির বাইরে ছিল, তা জানাজানি হলেই তো লোকলজ্জা। কোনও রকম সন্দেহে লোক ডাকলে সব জানাজানি হয়ে যেত। বরং এক সহৃদয় যুবক যে ভাগ্নীকে আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছে, এটাই যথেষ্ট বলে মনে হয়েছিল আমার। ”
মামার উপরে দোষ চাপিয়ে হাত ধুয়ে ফেললে যে পুলিশের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, তা অবশ্য কর্তারা ভালই জানেন। কী করে, কবে পুলিশ অভিযুক্তকে পাকড়াও করতে পারে, প্রশ্ন সেটাই।
|