উত্তর দিনাজপুর জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা আর জোগানে সমতা আনার লক্ষ্যে চাষের এলাকা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা উদ্যান পালন দফতর। জেলার নয়টি ব্লকের চাষিদের নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছেন উদ্যান পালন দফতরের কর্তারা। চাষিদের নিখরচায় উন্নত মানের পেঁয়াজের বীজ সরবরাহের কাজও শুরু হয়েছে। উদ্যান পালন দফতরের কর্তাদের মতে, উৎপাদন বাড়াতে শুধু চাষের এলাকা বাড়ালেই চলবে না, সেইসঙ্গে চাষিদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের প্রশিক্ষণ ও উন্নত মানের পেঁয়াজের বীজ সরবরাহ করাটাও জরুরি। জেলা উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক সমরেন্দ্র খাঁড়া বলেন, “জেলায় প্রতি বছর ১২ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা যায়। ফলে বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। তাই স্বাভাবিক কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।” তিনি জানান, আগামী চার মাসে জেলার নয়টি ব্লকে পেঁয়াজ চাষের ৫০০ হেক্টর এলাকা বাড়িয়ে পেঁয়াজের উৎপাদন ১০ হাজার টন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলার রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার, হেমতাবাদ, করণদিঘি, ইসলামপুর, চোপড়া, গোয়ালপোখর-১ ও ২ ব্লকের ৭৩৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয় বলে উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও চাহিদার তুলনায় তা পর্যাপ্ত নয়। ফি বছর মহারাষ্ট্র, বিহার, উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে জেলায় প্রায় ১৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয় বলে ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রে খবর। এ বছর উদ্যান পালন দফতর চাষিদের দিয়ে জেলায় অতিরিক্ত ৫০০ হেক্টর জমিতে নতুন করে পেঁয়াজ চাষ শুরু করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে যাতে ২০ টন করে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়, তার জন্য গত ১০ ডিসেম্বর থেকে জেলার নয়টি ব্লকের ৮ হাজার চাষিকে নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করে দফতর। ইতিমধ্যেই তারমধ্যে ৫০০ জন চাষির মধ্যে উদ্যান পালন দফতরের তরফে নাসিকের এগ্রি ফাউন্ড লাইট রেড নামে উন্নতমানের ২০০ কেজি পেঁয়াজের বীজ বিনে পয়সায় বিলি করা হয়েছে। সাধারণত পেঁয়াজের বীজতলা তৈরি করার পর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে তা জমিতে লাগানো হয়। মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ পেঁয়াজ ওঠে। বর্তমানে উদ্যান পালন দফতরের তরফে শিবিরে চাষিদের জৈব সার প্রয়োগ করে পেঁয়াজ চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পেঁয়াজ গাছে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে ঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ, প্রয়োজন অনুযায়ী জলসেচ দেওয়া ও জমির আগাছা পরিষ্কারের ব্যাপারে চাষিদের সচেতন করার কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে জেলার ১৬ হাজার চাষি পেঁয়াজ চাষে যুক্ত বলে দফতর জানায়। ইটাহারের দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা অনুপ বর্মন ও কালিয়াগঞ্জের সুশান্ত রায় বলেন, “সারা বছর ধরে আলু, কপি ও লাউ সহ মরসুমি সব্জির চাষ করি। এ বছর পেঁয়াজ চাষের প্রশিক্ষণ পেলাম। তাই পেঁয়াজ চাষ করব ঠিক করেছি।” |