কলেজে কলেজে হামলার সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা নিয়ে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন অধ্যক্ষদেরই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পদক মুকুল রায়।
রবিবার তৃণমূল প্রভাবিত ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি প্রফেসর্স অ্যাসোসিয়েশন (ওয়েবকুপা)-র সম্মেলনে সাম্প্রতিক কয়েকটি কলেজে গোলমালে বামপন্থী অধ্যক্ষদেরই সরাসরি দায়ী করেন মুকুলবাবু। ওই সব ঘটনার প্রতিটিতেই হামলাকারী হিসেবে তৃণমূলের নাম উঠেছিল। অভিযোগ নস্যাৎ করে মুকুলবাবু বলেন, “ইটাহারের কলেজে যে গোলমাল হয়েছে, সেখানে অধ্যক্ষ যে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী, তা কেউ বলছেন না! নৈহাটির কলেজের অধ্যক্ষ নির্ঝরিণী চক্রবর্তী যে দীর্ঘদিনের বাম-কর্মী, তা কেউ বলছেন না!”
কলেজ হামলা নিয়ে মুকুলবাবুর এই মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন বামফ্রন্ট জমানার উচ্চ-শিক্ষামন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “শিক্ষাক্ষেত্রে তাবৎ নৈরাজ্যের স্রষ্টা তৃণমূল। রায়গঞ্জের কলেজ থেকে শুরু করে এখনও যা চলছে, তা ৩৪ বছরে কখনও হয়নি।” পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষ চাপানোর এই রাজনীতি শিক্ষার সর্বনাশ করছে বলে অভিমত প্রাক্তন ছাত্রনেতা ও পিডিএসের রাজ্য সভাপতি সৈফুদ্দিন চৌধুরীর। প্রাক্তন ছাত্রনেতা ও কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অরুণাভ ঘোষ উল্টে তৃণমূলকেই দায়ী করে বলেন, “বামেরা তো নেই-ই, গোলমাল করবে কী ভাবে!”
তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষাকে রাজনীতি-মুক্ত রাখার কথা বললেও, শিক্ষাক্ষেত্রে তৃণমূলের একাধিপত্য কায়েম করতে যে তাঁরা বদ্ধপরিকর, তা এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন মুকুলবাবু এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এ দিনের সম্মেলনে উপস্থিত প্রায় হাজার চারেক শিক্ষকের সামনে মুকুলবাবু বলেন, “সরকারের পালাবাদলের সঙ্গে সঙ্গে সংগঠনে ভিড় বাড়ে-কমে। সব রাজনৈতিক দলেরই শিক্ষা সেল থাকে। কিছু করার নেই। ওয়েবকুপার সম্মেলনে তৃণমূলের নেতারা হাজির থাকায় দলতন্ত্রের অভিযোগ তুললে কিছু করার নেই।”
তৃণমূল যে তাদের এই শিক্ষক সংগঠনকে জোরদার করতে বদ্ধপরিকর, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্রাত্যও। কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা এখনও তৃণমূলের ওই শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপায় যোগ দেননি, তাঁদের ‘হার্মাদ’ অ্যাখ্যা দিয়ে ব্রাত্য বলেন, “ওয়েবকুপার সদস্য ছাড়া বাকি থাকছে কিছু হার্মাদ। তারা গোলমাল পাকাবে। নানা জায়গায় সমস্যা করবে।” কলেজ শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটার নামোল্লেখ না করেও ব্রাত্যর কটাক্ষ, “কোনও কোনও অধ্যক্ষ সংকীর্ণ রাজনীতিতে চালিত হয়ে ছাত্র সংগঠন ও আমাদের বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেন। আপনারা তাঁদের বোঝাবেন যে আপনাদের(ওয়েবকুটা) দিন শেষ।”
ব্রাত্যর পরামর্শ, “হার্মাদরা কোনও গোলমাল করলে বা প্রতিবাদ সভা করলে আপনারা ঝগড়া করবেন না। বরং তাদের হাতে গোলাপ ধরিয়ে দিয়ে বলবেন গেট ওয়েল সুন!” শিক্ষার সংস্কৃতিতে নতুন সরকার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাতে ওয়েবকুপাকে সামিল হতে অনুরোধ করেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
তাঁর আবেদন, “অধ্যাপনায় যে সংস্কৃতিটা চলে আসছে, তাকেও পরিবর্তন করতে হবে। আপনারাই এর কাণ্ডারী। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ফিরিয়ে শিক্ষার প্রসারে আলোর দিশারী হতে হবে আপনাদেরই।” একই পরামর্শ দিয়ে ব্রাত্যও বলেন, “কোনও ছাত্র উচ্ছৃঙ্খল হলে বোঝানোর দায়িত্ব আপনাদের।” ওয়েবকুটার সদস্যদের নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন তার প্রতিবাদ করে প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি নিজে মন্ত্রিত্বের আগে অধ্যাপনা করেছি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও অধ্যাপক। তাঁর কাছ থেকে এমন মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। আমি বলব ওঁরা ভাবনাচিন্তা বদলান।” |