সন্ত্রাসের প্রতিবাদে জনসভা করতে চুঁচুড়ায় এসে তৃণমূলের সরকারকে ‘পাগলের সরকার’ বলে দেগে দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যা শুনে সামান্য তফাতে চন্দননগরে সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা-সরকারের ‘সাফল্য’ তুলে-তুলে পাল্টা তোপ দাগলেন তৃণমূলের মুকুল রায়।
রবিবার হুগলিতে এত কাছাকাছি সিপিএমের প্রবীণ পলিটব্যুরো সদস্য এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সভা ঘিরে অশান্তির আশঙ্কা করেছিল পুলিশ-প্রশাসন। কয়েকটি ফ্লেক্স ছেঁড়াছেঁড়ি ছাড়া কিছুই হয়নি। দুই সভাতেই ভিড় উপচে পড়েছে। শীতের দুপুরে প্রতিপক্ষ শিবিরের দুই নেতার তরজাতেই আঁচ পুইয়েছেন কর্মী-সমর্থকেরা। |
চুঁচুড়ার গোর্খা ময়দানে জনতার মুখোমুখি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। |
চুঁচুড়ার গোর্খা ময়দানে বামফ্রন্টের ডাকা জনসভায় দিন কয়েক আগে প্রহৃত ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন দে থেকে শুরু করে বহিষ্কৃত সিপিএম নেতা অনিল বসু, সকলেই হাজির ছিলেন। উপচে পড়া মাঠ দেখে বারবার সকলকে অভিনন্দন জানান বুদ্ধবাবু। তার পরেই বক্তৃতার মাঝপথে তাঁর কটাক্ষ, “বিভিন্ন রাজ্য থেকে খবর পাই, পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে। তাঁরা বলেন, পাগলের সরকার চলছে ওখানে।”
ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই চন্দননগরের সার্কাস মাঠে সভায় মুকুলের পাল্টা: “আপনারা সুস্থ ছিলেন বলেই তো ১৯৮৪ থেকে বুদ্ধ, বিমান, অনিল বা জ্যোতিবাবুরা কেউ পাহাড় কেন, সুকনাতেও আসেননি! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম পাহাড়ে পা রাখলেন। ইন্দিরা গাঁধীও যা পারেননি, উনি পাহাড়ে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের কথা বলেছেন, কখনও দক্ষ প্রশাসকের মতো শাসন করেছেন। তিনি তো আপনাদের চোখে পাগল হবেনই!”
সিঙ্গুরের জেলায় এসে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর গলায় ঝরে পড়ে আক্ষেপ, “আসতে-আসতে দেখছিলাম, সিঙ্গুরটা শ্মশান হয়ে গিয়েছে। কি চেয়েছিলাম আমি! তিন-চারটে মোটরগাড়ি কারখানা হত। ছেলেমেয়েরা চাকরি পেত।” মুকুলের পাল্টা, “সিঙ্গুর তো শ্মশান হয়েইছে। কিন্তু তা করল কে? সেখানে চাষিরা তো তিন ফসলি জমিতে দিব্যি আনন্দে চাষ করছিলেন। সেই জমি জোর করে পুলিশ দিয়ে কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন বুদ্ধবাবু।” |
চন্দননগরের সার্কাস মাঠের জনসভায় মুকুল রায়। |
এখন রাজ্যে কর্মসংস্থানের দশা কী? বুদ্ধবাবু বলেন, “পুলিশে ক’জন চাকরি পেয়েছেন। প্রাথমিকে শিক্ষক নেবে বলেছিল এক লক্ষ। কিন্তু তৃণমূল অফিস থেকে বলল, এক হাজারের বেশি নয়। বাধ্য হয়ে শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা সারদায় নাম লেখালেন। হাজার-হাজার বেকার হলেন।” মুকুলের জবাব: “বাম সরকার যখন ছেড়ে গেল, তখন রাজ্যের মাথায় ২ লক্ষ ৩ হাজার কোটি টাকা দেনা। ৫৫ হাজার কলকারখানা বন্ধ।” সারদা প্রসঙ্গে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তকে দুষে তাঁর মন্তব্য, “সিপিএমের হাত ধরেই রাজ্যে চিটফান্ডের জন্ম। সারদা-ব্যবসা শুরু।” বস্তুত, চন্দননগরে আসার পথেই বুদ্ধবাবুর বক্তব্য জেনে নেন মুকুল। সিপিএম নেতার ছোড়া সব ঢিলের জবাবে পাটকেলও তৈরি করে নেন। যদিও সভার শুরুতেই মুকুল দাবি করেছিলেন, “কাউকে গালমন্দ করতে আসিনি। রাজ্যে যে উন্নয়নের আবহ তৈরি হয়েছে, সেই সংক্রান্ত দু’একটি কথা ভাগ করে নিতে এসেছি।” কিন্তু খানিক ক্ষণেই গলার সুর চড়ে “শুনলাম, চুঁচুড়ায় জনসভায় বুদ্ধবাবু বলেছেন, এ রাজ্যে পাগলের সরকার চলছে। যে শাহেনশাহ-বাদশাহের জমানায় তাপসী মালিক থেকে নন্দীগ্রাম, নন্দীগ্রাম থেকে নেতাই, নেতাই থেকে আরামবাগে অত্যাচারের রক্তের ছাপ, তিনি শান্ত হুগলিকে ফের অশান্ত করতে চাইছেন।” |