এলাকায় বিরোধীদের উপরে শাসক দলের ‘সন্ত্রাসে’র প্রতিবাদে ডাক দেওয়া হয়েছিল মিছিলের। বামেদের সেই মিছিলের উপরেই রবিবার সকালে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনা কলকাতা শহরেই। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তিনি অক্ষত থাকলেও ইটের আঘাতে দুই মহিলা-সহ আহত হন ৮ বাম সমর্থক। তিন জন হাসপাতালে ভর্তি। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, বহিরাগতদের নিয়ে বাম নেতাদের মিছিল করতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারাই বাধা দিয়েছেন!
কলকাতা পুরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম-সহ নানা সংগঠনের দফতরের উপরে তৃণমূলের আক্রমণের প্রতিবাদ ও সারদা-কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের দাবিতে এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দমদমের চিড়িয়া মোড় থেকে মিছিল করছিল কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। পুলিশের বক্তব্য, চিড়িয়া মোড়ের কাছে মিছিলের উপরে হঠাৎ কিছু লোকজন হামলা চালায়। বাম সমর্থকেরা প্রতিবাদে নামলে ঘণ্টাখানেক শহরের উত্তর প্রান্তে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বড় পুলিশ বাহিনী রাস্তায় নামে। ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুলিশের ডিসি (নর্থ) গৌরব শর্মা। তিনি জানান, ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। |
বামেরা অবশ্য তৃণমূলের হামলার পাশাপাশি পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সরব হয়েছে। বিমানবাবুর কথায়, “আমি মিছিলে ছিলাম। বিনা প্ররোচনায় গণতান্ত্রিক রীতিনীতি জলাঞ্জলি দিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব মিছিলের শুরু থেকেই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।” বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের অভিযোগ, “মিছিল চলাকালীন পুলিশের উপস্থিতিতেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে কুৎসিত গালিগালাজ করা হয়। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে! এই সবই ঘটেছে পুলিশের উপস্থিতিতে!”
বামেদের মূল অভিযোগ পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু সেনের দিকে। তাঁর পাল্টা দাবি, “বহিরাগতদের নিয়ে এসে বাম নেতাদের মিছিল করতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারাই রাস্তায় নামেন।” পুলিশের উপস্থিতিতেই বামেদের মিছিলের আগে আগে এ দিন তৃণমূলের মিছিল যেতে দেখা গিয়েছে! শান্তনুবাবুর বক্তব্য, “গণতান্ত্রিক দেশে মিছিল করার অধিকার সকলের আছে!” মুকুল রায়ের বক্তব্য, “সিপিএমেরই প্ররোচনা ছিল। মিছিলে বাইরের লোক ঢুকিয়ে অশান্তি করার চেষ্টা হচ্ছিল। তবে ছোট ঘটনা, বড় কিছু হয়নি!”
মিছিলে উপস্থিত পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী রূপা বাগচীর অবশ্য অভিযোগ, চিড়িয়া মোড়ে মিছিল শুরুর প্রস্তুতির সময়ে শান্তনুবাবুর নেতৃত্বেই বাম সমর্থকদের উপরে হামলা চালানো হয়। রূপার অভিযোগ, শান্তনুবাবুদের সঙ্গে কয়েকশো বহিরাগত ছিল। তারা মিছিলকারীদের হুমকি দিচ্ছিল। মিছিলের সঙ্গে যে সমস্ত অটো ছিল, তার চালকদের আচমকাই মারধর শুরু করা হয়। তার পরেও মিছিল কিছু দূর যাওয়ার পরে ভাঙা ইট, জুতো, ঝাঁটা ছোড়া হয়। পঞ্চানন গাজিয়া লেনে পৌঁছলে বাড়ির ছাদ থেকে মিছিলের উপরে ইট ছোড়া হয় বলে রূপার অভিযোগ। ইটের আঘাতে বেশ কয়েক জন জখম হন কয়েক জন। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় আর জি কর হাসপাতালে। বিমানবাবুর মতোই রূপারও অভিযোগ, পুরো ঘটনাই দাঁড়িয়ে দেখেছে পুলিশ! |