ছেলেকে কুপিয়ে খুনের দায়ে মাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন বিচারক। শনিবার নদিয়ার রানাঘটে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক মিহির মণ্ডল এই সাজা ঘোষণা করেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী অপূর্বকুমার ভদ্র বলেন, “২০০৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে হাঁসখালির পণ্ডিতপুরের বাসিন্দা যমুনা বিশ্বাস তাঁর বছর ছয়েকের ছেলেকে দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করেন। অন্য এক মহিলার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল যমুনাদেবীর স্বামী দুলালবাবুর। তাই নিয়ে স্বামীর সঙ্গে প্রায়ই অশান্তি হত যমুনাদেবীর। স্বামীর উপরে বিরক্ত হয়ে ওই মহিলা ছেলেকে খুন করেছেন। এই মামলার ১৪ জন সাক্ষীও আদালতকে জানিয়েছেন, যে যমুনাদেবীই ছেলেকে খুন করেছেন। পরে ওই মহিলাও ঘটনার কথা স্বীকার করেন।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন সকালে রান্না করছিলেন যমুনাদেবী। পেশায় কৃষক দুলালবাবু সেই সময় বাড়ির বাইরে ছিলেন। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল। ছোট ছেলে রনি ছিল বাড়িতেই। রান্না করার সময় মায়ের কাছে গিয়ে সে খাওয়ার জন্য ঘ্যানঘ্যান করছিল। রেগে গিয়ে আচমকা পাশে পড়ে থাকা একটা ধারাল দা তুলে নিয়ে যমুনাদেবী রনির গলায় কোপ মারে। রনির চিত্কারে ছুটে আসেন আশপাশের মানুষ। খবর পেয়ে বাড়িতে চলে আসেন দুলালবাবুও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রনিকে বাঁচানো যায়নি। ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।
প্রতিবেশিরা এত বছর আগের সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারেননি। প্রতিবেশীদের কথায়, “সে দৃশ্য মনে পড়লে আজও শিউরে উঠি। রনি নিচে পড়ে রয়েছে। আর তার মা ধারাল দা দিয়ে তাকে কুপিয়ে চলেছে। নিজের ছেলেকে এভাবে কোনও মা খুন করতে পারে!”
তাঁরা জানিয়েছেন, ছেলে মারা যাওয়ার পরেও যেন রাগ কমছিল না যমুনাদেবীর। তাঁরও সারা শরীরে রক্ত লেগেছিল। ওই অবস্থাতে দা হাতে পাগলের মতো সারা বাড়ি ছুটে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। তাঁর রুদ্র মূর্তি দেখে প্রতিবেশীরাও ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত গ্রামের আরও লোকজন এসে যমুনাদেবীকে ধরে ফেলে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেফতার করে। তারপর থেকে তিনি জেল হেফাজতেই ছিলেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী অপূর্ববাবু বলেন, “স্ত্রীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেছিলেন দুলালবাবু। এই মামলার তিনিও ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। সাক্ষ্য দিতে এসে স্ত্রীর চরম শাস্তিরও দাবি করেন তিনি।”
শনিবার রায় ঘোষণার দিন আদালত চত্বরে দুলালবাবু কিংবা যমুনাদেবী কারও বাড়ির লোকজনকেই দেখা যায়নি। যোগাযোগ করা যায়নি তাঁর স্বামী দুলালবাবুর সঙ্গেও। হাঁসখালির রামনগর বড় চুপড়িয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের লক্ষ্মী হালদার দত্ত বলেন, “বেশ কয়েক বছর আগে পণ্ডিতপুর গ্রামের এক মহিলা তাঁর ছেলেকে খুন করেছিলেন বলে শুনেছিলাম। ওটা একটা মর্মান্তিক ঘটনা ছিল।” |